সময়মত স্কুলে না আসার অভিযোগে প্রধান শিক্ষককে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে রাখার অভিযোগ উঠল গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি ঘটেছে পুরুলিয়ার ঝালদায়।
প্রধান শিক্ষককে হেনস্তার ছবি ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে সোশাল মিডিয়ায়। পুস্তি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে মধ্যযুগীয় বর্বরতার ঘটনায় হতবাক জেলার শিক্ষা মহল। জেলা জুড়ে বইছে নিন্দার ঝড়।

স্থানীয় ও জেলা শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, পুঞ্চা থানার বদড়া গ্রামের বাসিন্দা তথা পুঞ্চা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে একাধিক অভিযোগ উঠেছে।
সেই কারণে তিনবার শাস্তিস্বরূপ বদলিও হয়।
কিন্তু তবুও তাঁর আচরণে কোনও পরিবর্তন ঘটেনি।

অভিযোগ, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক পুস্তি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের পর চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে স্কুলে সময় মতো না আসা ও মিড-ডে মিলে সমস্যা-সহ তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠতে শুরু করেছিল।
এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ জানানো হলেও প্রশাসনের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শিক্ষা দিতে সেই সময় গ্রামবাসীরা ওই স্কুলের শিক্ষকদের তালাবন্দি করেছিলেন।
পরে শিক্ষকদের উদ্ধার করা হলেও ওই স্কুল প্রায় সপ্তাহখানেক তালাবন্ধ ছিল। ফলে ক্লাস করা হত দুর্গামন্দিরে। তারপরে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিডিও, এসডিও গেলে ওই প্রধান শিক্ষক মুচলেকা দেন। এরপরই গ্রামবাসীরা স্কুলের তালা খোলে।

এরপর সোমবার সাড়ে এগারোটা নাগাদ প্রধান শিক্ষক বিপ্লববাবু স্কুলে ঢোকেন।
কিছু বুঝে ওঠার আগে তাঁকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে ফেলা হয়। বিষয়টি বিডিও-র কানে আসতেই তিনি ওই কমিটির সদস্যদের নির্দেশ দেন প্রধান শিক্ষককে অবিলম্বে মুক্ত করার। না হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান। তারপরই ওই শিক্ষককে মুক্ত করা হয়। এরপর প্রধান শিক্ষক ঝালদা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। দুই অভিযুক্তকে সোমবার রাতেই গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ধৃতদের নাম পুস্তি গ্রামের চন্দ্র কুমার ও গুরুদাস প্রামাণিক। আদালতে তোলা হলে জেলা মুখ্য বিচারক রিম্পা রায় ধৃতদের ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।

এদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ওই এলাকার অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে। সেই রিপোর্টের পর ওই প্রধান শিক্ষককেও তলব করা হবে। ঝালদা এক নম্বর ব্লকের বিডিও রাজকুমার বিশ্বাস বলেন, “ওই ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেরাই আইন হাতে তুলে নেন। যা একেবারে ঠিক হয়নি।” তবে এদিনের ঘটনায় পুস্তি গ্রামের কোন বাসিন্দাই কিছু বলতে চাইছেন না। এদিকে ওই প্রধান শিক্ষককে ফোন করা হলেও তাঁরসঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সুমিত বিশ্বাস, পারুলীয়া ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *