ছবি: সংগৃহিত

ইসলাম একমাত্র জীবনব্যবস্থা, যার বিশ্বসমাজ গড়ে তোলার মতো ঔদার্য ও সামর্থ্য আছে।
ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে একটা বৃহৎ সমাজ গঠনের সব উপাদান ইসলামের আছে।
এই ধর্মে আহলে কিতাব, মুসলমান ও একই রাষ্ট্রে বসবাসকারী বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে আচার-ব্যবহার ও সামাজিকতায় কোনো বৈষম্য নেই।

মাংস ছাড়া অন্য খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে আহলে কিতাব (ইহুদি-খ্রিস্টান) ও অন্য কাফিরদের মধ্যে কোনো তারতম্য নেই।

অর্থাৎ পরস্পরে একে অন্যের হালাল খাবার গ্রহণ করতে পারবে। মাংসের ক্ষেত্রেও আহলে কিতাব ও মুসলমানদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।
কোনো হালাল প্রাণী আহলে কিতাবের কেউ আল্লাহর নামে জবাই করলে মুসলমানদের জন্য সেটা আহার করা বৈধ। এ ছাড়া ইসলাম তাদের সঙ্গে সামাজিক অংশীদারি, সৌজন্যবোধ ও মেলামেশার সুযোগ দিয়েছে।

বৈধ যেকোনো বস্তু অমুসলিমদের সঙ্গে বেচাকেনা করা বৈধ। এমনকি আহলে কিতাবের নারীদের বিয়ে করা বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘… মুমিন সতীসাধ্বী নারী ও আহলে কিতাবের সতীসাধ্বী নারী তোমাদের জন্য বৈধ করা হলো…।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৫)

তবে এটাও স্মরণ রাখতে হবে যে ইসলাম একটি পৃথক ধর্ম। তাই আত্মীয়তা, ঘনিষ্ঠতা ও সামাজিকতার ক্ষেত্রে ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মের মধ্যে কিছু পার্থক্য ধরে রাখা হয়েছে।
যেমন—আহলে কিতাবের নারীদের বিয়ে করা মুসলমানদের জন্য বৈধ বটে; কিন্তু আহলে কিতাব কোনো পুরুষের সঙ্গে মুসলিম নারীদের বিয়ে বৈধ নয়।

আহলে কিতাব ছাড়া অন্য ধর্মের অনুসারীদের সঙ্গে কোনো ধরনের বৈবাহিক সম্পর্ক বৈধ নয়।
সুতরাং প্রচলিত হিন্দু, বৌদ্ধ, বাহায়ি, শিখ ও কনফুসীয় ধর্ম আসমানি ধর্ম হওয়ার বিষয়টি অকাট্যভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় এসব ধর্মের অনুসারীরা আহলে কিতাব হিসেবে গণ্য হবে না।
তাই তাদের সঙ্গে মুসলিম নারী ও পুরুষের কোনো ধরনের বিয়ে বৈধ নয়।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘ঈমান না আনা পর্যন্ত তোমরা মুশরিক (বহু স্রষ্টায় বিশ্বাসী) নারীকে বিয়ে করো না, যদিও মুশরিক নারী তোমাদের মুগ্ধ করে…। ঈমান না আনা পর্যন্ত তোমরা মুশরিক পুরুষের সঙ্গে (তোমাদের নারীদের) বিয়ে দিয়ো না, যদিও মুশরিক পুরুষ তোমাদের মুগ্ধ করে…।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২২১)

অন্য আয়াতে এসেছে, ‘…তোমরা কাফির নারীদের সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রেখো না…।’ (সুরা : মুমতাহিনা, আয়াত : ১০)

মুসলিম নারীদের জন্য অন্য ধর্মাবলম্বী পুরুষকে স্বামী হিসেবে গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। এ প্রসঙ্গে এক আয়াতে এসেছে, ‘হে মুমিনরা! যখন তোমাদের কাছে মুমিন নারীরা হিজরত করে আসে, তখন তোমরা তাদের পরীক্ষা করে নাও, তাদের ঈমান সম্পর্কে আল্লাহই ভালো জানেন। অতঃপর যদি তাদের মুমিন বলে জানতে পারো, তাহলে তাদের কাফিরদের কাছে ফিরিয়ে দিয়ো না। মুমিন নারীরা কাফিরদের জন্য হালাল নয়। আর কাফিররাও তাদের জন্য হালাল নয়…।’ (সুরা : মুমতাহিনা, আয়াত : ১০)

ইমাম বুখারি (রহ.)-এর শিক্ষক ইমাম আবদুর রাজ্জাক (রহ.) তাঁর গ্রন্থে লিখেছেন, আবু জুবায়ের (রা.) বলেন, আমি জাবের (রা.)-কে বলতে শুনেছি, আহলে কিতাবের নারীরা আমাদের (মুসলমানদের) জন্য হালাল। কিন্তু আমাদের নারীরা তাদের জন্য হারাম।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক : ৬/৪৩)

এ বিষয়ে খলিফা ওমর (রা.)-এর কর্মপন্থা কী ছিল—সে সম্পর্কে জায়েদ বিন ওয়াহাব (রা.) বলেন, ‘ওমর (রা.) এই মর্মে পত্র পাঠিয়েছেন যে মুসলিম পুরুষ খ্রিস্টান নারীকে বিবাহ করতে পারবে। কিন্তু কোনো খ্রিস্টান পুরুষ কোনো মুসলিম নারীকে বিবাহ করতে পারবে না।’ (কানযুলউম্মাল : ১৬/৫৪৮)

কেন মুসলিম পুরুষ আহলে কিতাব নারীকে বিয়ে করতে পারবে—এ প্রসঙ্গে শাহ ওয়ালি উল্লাহ (রহ.) লিখেছেন, ‘বৈবাহিক জীবনে স্বামীর ভূমিকা প্রভাব বিস্তারকারী হয়। স্ত্রীরা স্বামীদের তত্ত্বাবধানে চলে আসে। ফলে কোনো মুসলিম আহলে কিতাবের নারীকে বিয়ে করলে মুসলিম পুরুষের ধর্মীয় জীবনে প্রভাব বিস্তারের অবকাশ কম থাকে। তাই এ বিয়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’ (হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা : ২/১৩৩)

প্রশ্ন হলো, কোনো মুসলিম নারীর যদি ইতিপূর্বে অন্য ধর্মাবলম্বীর সঙ্গে বিয়ে হয়ে গিয়ে থাকে, তার করণীয় কী? এর জবাব হলো, হয়তো স্বামীকে মুসলিম বানিয়ে নতুনভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবে। সেটা সম্ভব না হলে অতিদ্রুত তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। (আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল : ৬/১৪৩)

আর ইসলাম অনুমোদিত নয়, এমন বিয়ের মাধ্যমে সন্তান জন্ম নিলে সন্তান ইসলামের পরিচয়ই বহন করবে। তবে শর্ত হলো সন্তান যদি নাবালেগ বা অপ্রাপ্তবয়স্ক হয়, তাহলেই সে মুসলিম হিসেবে গণ্য হবে। এ বিষয়ে ইসলামী আইনের গ্রন্থ ‘হেদায়া’য় রয়েছে, ‘স্বামী ও স্ত্রীর কোনো একজন যদি মুসলিম হয়, তাহলে সন্তান তাঁর ধর্ম—অর্থাত্ ইসলাম ধর্মাবলম্বী বলে গণ্য হবে।’ (হেদায়া : ২/৩৪৬)

কিন্তু সন্তান যদি প্রাপ্তবয়স্ক হয়, তাহলে সে নিজেই সত্যপথ খুঁজে নেবে। সে-ই তার গন্তব্য স্থির করে নেবে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘দ্বিন গ্রহণে জোর-জবরদস্তি নেই। সত্যপথ ভ্রান্তপথ থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে…।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৫৬)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *