বুধবার রাত থেকেই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে, সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বড় ধরণের পরিবর্ত আসছে। মাসুদ উদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক জাকির হোসেন, এডভোকেট নাসির খান শীর্ষ পদে আসছেন বলেও গুঞ্জন শোনা যায়। এডভোকেট লুৎফুর রহমান স্বপদে থাকছেন, এমনটিও বুধবা রাতে নিশ্চিত করে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র। 

আগের রাতের এই গুঞ্জনই শেষ পর্যন্ত সত্য হলো। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘোষিত সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটির শীর্ষ চার পদে এলেন বুধবার রাত থেকে আলোচনার থাকা চার নেতা। জেলার সভাপতি পদে ভারমুক্ত হলেন লুৎফুর রহমান। বাকী তিন পদেই এসেছে নতুন মুখ। মহানগর সভাপতি হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ। আগে তিনি জেলার সহ-সভাপতি ছিলেন। সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন আগের কমিটির যুগ্ন সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন। আর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান। তিনিও আগের কমিটির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

তিন নতুন মুখকে ঠাঁই দিতে গিয়ে বাদ পড়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত সাধারেণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ ও কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবে সুনাম থাকা জেলার সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী।

বুধবার রাতের পূর্ব পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কমিটি বিষয়ক কোনো আলোচনায়ই এতো পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যায়নি। আগের চার নেতাই স্বপদে বহাল থাকতে পারেন বলে আলোচনা চলছিলো। বিশেষত শফিকুর রহমান চৌধুরী জেলা শীর্ষ দুই পদের একটিতে থাকছেন এমনটি প্রায় ধরেই নিয়েছিলেন সবাই। বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ভালো পদ দিয়ে মহানগরের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেওয়া হতে পারে এমন আলোচনা ছিলো। তবে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষিত কামরানকেই দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলেও মনেকরেছিলেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা। মাসুক আহমদ জেলা কমিটির সভাপতি হতে পারেন এমন আলোচনা ছিলো। মাসুক পদ পেলে তার অনুজ আসাদ উদ্দিন বাদ পড়তে পারেন এমনটিও ধরে নিয়েছিলেন নেতাকর্মীরা। তবে বৃহস্পতিবারে সম্মেলনে অনেককেই অবাক করে দিয়ে জেলার বদলে মহানগরের সভাপতি পদ দেওয়া হয় মাসুক উদ্দিনকে। লুৎফুর রহমান প্রথম দিকে অবসরের কথা বললেও পরে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে সক্রিয়ভাবে মাঠে নামেন তিনি। তাকে ভারমুক্ত করা হতে পারে এমন আলোচনা ছিলো।

নাসির উদ্দিন ও জাকির হোসেন জেলা ও মহানগরের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী ছিলেন। এই দুই পদ পেতে প্রচারণাও চালিয়েছেন তারা। তবে এই দুই পদে তাদের আগে আরও একাধিক নেতার নাম আলোচিত হচ্ছিলো।

তবে বুধবার রাত থেকেই পাল্টে যেতে থাকে হিসেব। সব আলোচনা এসে থামে এই চার নেতাকে ঘিরে।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, মূলত দলের হাইকমান্ডই নতুন নেতাদের বাছাই করে নিয়েছে। তবে এক্ষেত্রে সিলেটের একাধিক প্রবাসী নেতার প্রভাব থাকতে পারে বলে মনে করেন তারা। তবে কমিটি নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি আওয়ামী লীগের কোনো নেতা।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সদ্য বিদাযী ও নতুন দায়িত্ব পাওয়া নেতাদের মধ্যে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, শফিকুর রহমান চৌধুরী, মাসুক উদ্দিন আহমদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা ফোন রিসিভ করেননি।

প্রসঙ্গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন এডভোকেট লুৎফুর রহমান রহমান ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান এবং সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছেন মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে জেলা ও মহানগরের শীর্ষ চার পদের নাম ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, নিজেদের মধ্যে সমঝোতার জন্য শীর্ষ দুই পদের ৩২ প্রার্থীকে ২০ মিনিট সময় দেওয়া হলে তারা বিষয়টি নেত্রীর উপর ছেড়ে দেন। পরে উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতারা দলীয় প্রধানের সাথে পরামর্শ করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন।

এর আগে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেষে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের চার পদের ৩৫ প্রত্যাশীকে সমঝোতায় পৌঁছাতে ২০ মিনিট সময় বেঁধে দেন ওবায়দুল কাদের।

প্রায় ১৪ বছর পর বৃহস্পিতবার নগরীর আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে সিলেট জেলা ও আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *