প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় নিউইয়র্ক ও বৃটেনে ১০ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েয়েছে। ২৪ মার্চ পর্যন্ত নিউইয়র্কে এলমাস্ট হাসপাতাল ও প্লেইনভিউ হসপিটাল নর্থওয়েলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ৫ জন। মৃতের মধ্যে তিনজন নারী এবং দুজন পুরুষ।

এলমাস্ট হাসপাতালে যাঁরা মারা গেছেন তাঁরা হলেন আব্দুল বাতেন (৬০), নূরজাহান বেগম (৭০) এবং ৪২ বছরের এক নারী রয়েছেন। আর প্লেইনভিউ হসপিটাল নর্থওয়েলে মারা গেছেন এ টি এম সালাম (৫৯)। দুই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হিউম্যান রিসোর্স এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। এছাড়া অপর একটি সূত্রে জানা যায়, নিউইয়র্ক ওজন পার্কের জসিম উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী মারা গেছেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে।

আব্দুল বাতেনের বাড়ি নোয়াখালী জেলার সুনাইমুড়ি। তিনি ব্রুকলিনে বসবাস করতেন। মৃত ৪২ বছরের নারীর বাড়ি মৌলভীবাজার জেলায়। তিনি এস্টোরিয়ায় বসবাস করতেন। রংপুরের এ টি এম সালাম ছিলেন ওয়েস্টর বে লং ল্যান্ড এলাকায় থাকতেন। নূরজাহান বেগমের বাড়ি ঢাকার মোহাম্মদপুরে। তিনি থাকতেন নিউ ইয়র্কের এলমাস্ট এলাকায়।
এ নিয়ে করোনায় নিউইয়র্কে এ পর্যন্ত ৯ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে।

নিউইয়র্কের বোর্ড অব ইলেকসনের সদস্য মাজেদা আক্তার বলেন, ‘মেয়র অফিস থেকে আমাদের জানানো হয়েছে আক্রান্তদের বেশিরভাগই ট্যাক্সিচালক এবং ডেলিভারি কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তাদের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যরাও আক্রান্ত হয়েছেন।’

এদিকে, ২৩ মার্চ মারা গেছেন ৩৮ বছরের আমিনা ইন্দ্রালিব তৃশা এবং ৬৯ বছরের মোহাম্মদ ইসমত। আগের সাপ্তাহে মারা গেছেন মোতাহের হোসেন ও মোহাম্মদ আলী নামের দুইজন বাংলাদেশি। প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে প্রতিনিয়ত আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে ভয় আর আতঙ্ক। অনেকে আবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। এতে পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

লন্ডনে ৫ বাংলাদেশির মৃত্যু
যুক্তরাজ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও এক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে সেখানে পাঁচ বাংলাদেশি করোনায় প্রাণ হারালেন।
খসরু মিয়া নামের ৪৯ বয়স্ক ওই ব্যক্তি স্থানীয় সময় ২৪ মার্চ (মঙ্গলবার)স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় তিনি রয়েল লন্ডন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

জানা গেছে, লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসের হোয়াইটচ্যাপেল রোডে সেইন্সবারীর সম্মুখে সবজির ব্যবসা করতেন তিনি। খসরুর বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার শাহারপাড়া আটঘর গ্রামে।

এর আগে গত ৮ মার্চ ম্যানচেষ্টারে সর্বপ্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৬০ বছর বয়স্ক এক ইতালিয়ান বাংলাদেশি। এরপর ১৩ মার্চ টাওয়ার হ্যামলেটসে মারা যান ৬৬ বছল বয়স্ক রেহান উদ্দিন। ১৬ মার্চ লন্ডনের গ্রেট অরমন্ড হাসপাতালে মারা যান মৌলভীবাজারের মাহমুদুর রহমান। ২৩ মার্চ সোমবার রয়েল লন্ডন হাসপাতালে মারা যান টাওয়ার হ্যামলেটসের স্যাটেল স্ট্রিটের বাসিন্দা ৮০ বছর বয়স্ক হাজী জমশেদ আলী। তার মরহুমের গ্রামের বাড়ি বিয়ানীবাজার উপজেলার ছনগ্রামে।

সবশেষ ২৪ মার্চ মারা গেলেন খসরু মিয়া। পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসে করোনভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৬৭ জন।

সিলেটে কোয়ারেন্টাইনে থাকা বৃদ্ধের মৃত্যু
সিলেট নগরীর হাউজিং এস্টেট এলাকায় হোম কোয়রেন্টাইনে থাকা এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। ২৪ মার্চ (মঙ্গলবার) বাংলাদেশ স্থানীয় সময় দিবাগত রাত ৯টার দিকে ৬৫ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি মারা যান।

কোয়ারেন্টাইনে থাকা ওই ব্যক্তি দেশে থাকলেও সম্প্রতি তার ছেলে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ওই ব্যক্তি কিডনি রোগে ভুগছিলেন। তাকে নিয়মিত ডায়ালিসিস করাতে হতো তাকে। গত ১৪ মার্চ যুক্তরাজ্য থেকে তার ছেলে দেশে ফেরেন। পরদিন ওই ব্যক্তির শ্বাসকষ্ট শুরু হলে বাবাকে নিয়ে সিলেট কিডনি ফাউন্ডেশনে যান প্রবাসী ছেলে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিস্তারিত শুনে তাকে কোয়ারেন্টাইনে রাখার পরামর্শ দেন।

এরপর থেকেই তিনি সব নিয়মকানুন মেনে কোয়ারেন্টাইনে থেকে আসছিলেন। কিন্তু গতরাতে তার মৃত্যু হয়।সূত্র: ঠিকানা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *