
অবশেষে বিশ্বের সুপার পাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হার মানলো আফগান তালেবানের কাছে। দীর্ঘ দুই দশকের যুদ্ধের পর আজ কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবান ও আমেরিকার মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির মাধ্যমে কার্যত আফগান তালেবানের কাছে পরাজয় বরণ করলো বিশ্বের সুপার পাওয়ার আমেরিকা।
আজ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে ঐতিহাসিক এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তালেবানের আমীর শাইখুল হাদিস মোল্লা হেবাতুল্লাহ আখন্দজাদার পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন মোল্লা আবদুল গণী বেরাদর ও আমেরিকার পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ডোনাল্ড ট্র্যাম্পের বিশেষ প্রতিনিধি জালমাই খালিলজাদ ।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণী, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও, কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুহাম্মাদ বিন আবদুর রহমান আল সানিসহ প্রমুখ বিশ্বনেতারা।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশী, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলুসহ ভারত, ইন্দোনেশিয়া, উজবেকিস্তান এবং তাজিকিস্তানসহ ৫০টি দেশের প্রতিনিধিরা নেতারা।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর তালেবানের আমীর শাইখুল হাদিস মোল্লা হেবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘২০০১ সালের ১৭ অক্টোবর আমেরিকা আফগানিস্তান আক্রমণ করেছিল।
দীর্ঘ ১৯ বছর লড়াইয়ের পর আফগান জনগণের প্রতিনিধি হয়ে তালেবান এই যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে সক্ষম হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ!’
তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তান থেকে সমস্ত বিদেশী সৈন্য প্রত্যাহার এবং ভবিষ্যতে আফগানিস্তানে কোনো রকম হস্তক্ষেপ না করার সম্মতি আদায় নিঃসন্দেহে একটি বড় বিজয়। এ জয় আফগানিস্তানের সকল নারী-পুরুষের বিজয়। দুই দশকের এই যুদ্ধে আফগানীরা তাদের জান-মালের কুরবানি দিয়েছে।
তালেবান প্রধান বলেন, ‘নিঃসন্দেহে এটি বড় বিজয়। তবে এই বিজয়কে কোন পক্ষের অর্জন বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। এটা প্রথমত আল্লাহ’র অনুগ্রহ এবং মুজাহিদিন ও তাদের পরিবারের আত্নত্যাগের ফসল।
তিনি বলেন, ‘আমেরিকার সাথে সংঘটিত এই শান্তি চুক্তিতে ইসলামি শরীয়ার মুলনীতি ও বৈধতার প্রতিটি দিক পরিপূর্ণ রক্ষা করা হয়েছে। আফগান রীতিনীতির প্রতিও এই চুক্তিপত্রে সম্মান দেখানো হয়েছে। ইসলামে বিশ্বাসঘাতকতা ও ষড়যন্ত্রের কোনো স্থান নেই।
অতএব এই চুক্তিপত্রের প্রতিটি অক্ষরের প্রতি বিশ্বস্ত ও দায়িত্বশীল থাকা প্রতিটি আফগানির কর্তব্য। তবে যদি অপরপক্ষ থেকে চুক্তিপত্রের প্রতি অবিশ্বস্ততা ও কোনো লঙ্ঘন অনুভূত হয়, তাহলে তাদেরকে প্রতিরোধের জন্য অতীতের মত সব সময় প্রস্তুত থাকা আফগানীদের দায়িত্ব।
তিনি আরো বলেন, ‘আফগান জনতা; বিশেষত মুজাহিদীনদের জন্য আবশ্যক হল, আপনারা এই বিজয়কে কেবলমাত্র আল্লাহ’র একটি বিশেষ অনুগ্রহ মনে করবেন। তাকওয়া, আমানত ও বিনয়ের প্রতি আরো যত্নবান হবেন। অহংবোধ, অন্যের উপর প্রাধান্য বিস্তার ও নিজেদেরকে বিশেষায়িত করার প্রবণতা থেকে দূরে থাকবেন। এই বিষয়গুলো ইসলামে জিহাদ ও বিজয়ের সত্বার বিরোধী।
ইমারাতে ইসলামিয়্যাহ (আফগানিস্তান) মুজাহিদ, শহীদ ও বন্দীদের পরিবার, যুদ্ধাহত, মুহাজির ও সমস্ত জাতির প্রতি আন্তরিক শুকরিয়া জ্ঞাপন করছে। এই সুস্পষ্ট বিজয় নিঃসন্দেহে আল্লাহ’র পক্ষ থেকে একটি বিরাট অনুগ্রহ।’
তালেবান প্রধান বলেন, ‘শান্তি চুক্তির সফলতা আন্ত এবং আঞ্চলিক সমস্ত পক্ষকে এই বার্তা দিচ্ছে যে, আমরা যৌক্তিক ও ইনসাফপূর্ণ সমাধানের সক্ষমতা রাখি।
অতএব আমাদের ইসলামি ও জাতীয় মূল্যবোধের প্রতি সম্মান রেখে যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনার টেবিলে আসুন।’
আফগান সরকারের উদ্দেশ্যে তালেবান প্রধান বলেন, ‘আমাদের আহবান থাকলো, আপনারা জনগণের বিরোধিতার পথ থেকে সরে আসুন।’
আফগানিস্তানের বুদ্ধিজীবী, লেখক ও সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে তালেবান প্রধান বলেন, ‘ইমারাতে ইসলামিয়্যাহ (আফগানিস্তান) আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমস্ত দেশের সাথে ইতিবাচক ও সম্পর্কের নিশ্চয়তা দিচ্ছে। শিক্ষক, ছাত্র, বুদ্ধিজীবী, লেখক, সাংবাদিক ও নেতৃবৃন্দ আফগানিস্তানে স্থায়ী শান্তি ও ইসলামি প্রশাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবেন।
তালেবানের আমীর শাইখুল হাদিস মোল্লা হেবাতুল্লাহ আমেরিকার সাথে আলোচনার পরিবেশ তৈরি করায় কাতারের আমীরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘শান্তি আলোচনার মধ্যস্থতায় অভূতপূর্ব ভূমিকা রাখায় কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামদ আল সানিকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
পাকিস্তান, উজবেকিস্তান, চীন, ইরান, রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুর্কমেনিস্তান, কিরগিজিস্তান, আরব-আমিরাত এবং শান্তি আলোচনায় যারাই কোনো ভাবে সহযোগিতা করেছেন সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা তাদের প্রচেষ্টাকে কবুল করুন এবং তাদেরকে উত্তম বিনিময় প্রদান করুন।