বেশ কিছুদিন পূর্বে ফেইসবুকের কল্যাণে একটা ছবি দেখে আমার জীবনের সবচাইতে বেশি আশ্চর্যান্বিত হয়েছিলাম! ছবিতে দেখেছিলাম একটি আফ্রিকান শিশু দুর্ভিক্ষ পিরিত! কঙ্কালসার! মুমূর্ষু! অবস্থায় রাস্তায় পড়ে আছে, আর তারই পাশে একটি ক্ষুধার্ত শকুন বসে বসে অপেক্ষার প্রহর গুনছে কখন শিশুটির মৃত্যু হবে ।

শকুনটি তার কলিজা ছিঁড়ে খাবে । এমনকি এও শুনেছিলাম এই ছবিটি তুলে নাকি ফোটোগ্রাফার আত্মহত্যা করেছিলেন।
তার আত্মহত্যার কারণ ছিল মানবিক বোধ। তিনি এই দুর্ভিক্ষের কারণ জানতে পেরে নিজেকে মানুষরূপে আর দেখতে চাননি।

চরম ঘৃণা জন্মেছিল তার মানুষের চরিত্রের উপর, মানুষের কু রুচির উপর, মানুষের অর্থ লুলুপতার হীনতার চরম সীমা লঙ্গনের উপর।

উনপঞ্চাশের দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ পরিনতির কারণ ছিল ইংরেজদের সীমাহীন অর্থ লুলুপতা, এমনকি সত্তরের মন্বন্তরের কারণে বাংলার এক তৃতীয়াংশ মানুষের নির্মম মৃত্যুর কারণটাও ছিল একই। ঐ অর্থ লোভী শয়তানরা বরাবরই মহা প্রলয়ের সময় সাহায্যের হাত তো বাড়ায়ই না উপরন্তু শকুনের মত পাশে বসে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করে।

ঠিক যেমন বর্তমানে প্রাথমিকে যোগ্যতার মাপকাঠিতে নিয়োগ না পাওয়া তরুণদের নিয়ে এক শ্রেণীর জ্ঞানপাপীরা হীন খেলায় মেতেছে । একদিকে নিয়োগ না পেয়ে মৃত প্রায় অবস্থা অপরদিকে রিটের জন্য কাড়ি কাড়ি টাকা আইনজীবীদের পকেটে ঢালা এ যেন মরার উপর খারার ঘায়ের মত ।

এসব কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারী জ্ঞান পাপীরা ঐ অপেক্ষমান শকুনের চাইতে কোন অংশে কম নয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের চাইতে মানব সৃষ্ট দুর্যোগ যে কয়েক গুণে ভয়াবহ! তা পৃথিবীর ইতিহাসের দুর্ভিক্ষের ইতিহাস পাঠ করলেই অনুধাবন হয়। অনুধাবন হবে মানুষের চরিত্র কতটুকু দানবের মত হতে পারে।

কত হিংস্রতা আছে এই ভদ্র সমাজের মানুষের মুখোশের অন্তরালে। পশুরা যদি মানুষের এই ভদ্র মুখোশ পাঠ করতে পারত তবে তারাই শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করে বসত। এমনই কিছু মুখোশ আমাদের বর্তমান ভদ্র সমাজে বিরাজমান। যারা কোন দিনই চায়নি এই দেশ, এই দেশের মাুষ শান্তিতে থাকুক। সমৃদ্ধি ও সক্ষমতা আসুক এই দেশের মানুষের । মেরুদন্ড উচু করে দাঁড়াক বাংলার মানুষ।

তাই যখনই বাংলাদেশ ভালো কিছু করে বা ভালো কোন পদক্ষেপ নেয় ঠিক তখনই বাধাগ্রস্ত করতে দেশদ্রোহীরা তৎপর হয়। তারা হিংস্র দানবের মত জেগে উঠে।

ঠিক যেমন ১৯৭১ সালে দানব গুষ্ঠি বাংলার স্বাধীনতা অর্জনের বিপক্ষে দাড়িয়েছিল, তেমনি আজও স্বাধীন বাংলায় স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও স্বাধীনতার স্বপক্ষের সরকার যখনই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ নেয় দেশদ্রোহীরা হামলে পড়ে ।

বর্তমানে বাংলাদেশের যে কোন চাকরির নিয়োগের মধ্যে স্বচ্ছতার দিক থেকে ধরতে গেলে প্রথম অবস্থানেই আছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া।

যেখানে শতভাগ মেধা ও মনন এবং সঠিক যাচাই বাচাইয়ের পরেই চূড়ান্ত প্রার্থী বাচাই করা হয়। যেখানে ডিজিটাল পদ্ধতির পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যবহার করা হয় এবং দুর্নীতি বা লবিংয়ের পথ অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। কিন্তু ” ঘিয়ে কাটা বাছা ” র মত এই নিয়োগেও এক শ্রেণীর দেশদ্রোহী মহল তৎপর হয়ে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার পাঁয়তারায় নেমেছে ।

চাকরী প্রার্থী অসহায় দিকবিদিক ছুটেচলা ক্লান্ত তরুণদের ভ্রান্ত আশার আলো দেখিয়ে, তাদের দুর্বলতাকে পুঁজি করে তাদেরকে দিবা স্বপ্নে বিভোর করে কাড়ি কাড়ি অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে একটি কুচক্রী মহল ।

আর এদিকে আইনের মারপ্যাচে ফেলে মহামান্য আদালতের মাধ্যমে ভুগান্তিতে! অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে নতুন চাকরী পাওয়া হাজার হাজার মেধাবী তরুণ প্রজন্মকে এবং তাদের গুটা পরিবারকে ।

যাদের চোখে মুখে ছিল নতুন স্বপ্ন, নতুন উদ্দ্যেম নতুন আকাঙ্খা, নতুন প্রেরণা! এবং এটা তাদের যৌক্তিক দাবিও। আশ্চর্যের বিষয় এই তারাই কিনা আজ প্রতিটা মুহূর্ত কাটাচ্ছেন চরম দুশ্চিন্তায়!।

এই শকুন প্রজাতির শকুনী কার্যকলাপের কারণে অভিশাপ নেমে এসেছে বাংলাদেশের হাজার হাজার পরিবারে। কারও চাকরির বয়স শেষ, করো শেষ পর্যায়ে, কারো ঝণের বোজা ভাড়ি হওয়ার আশঙ্কা, কারও বিয়ে আটকে যাওয়ার দুশ্চিন্তা, কেউবা চলমান চাকরী ছেড়ে দিয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের অপেক্ষায়।

এমন হাজারো সমস্যার মধ্যে পড়েছে নিয়োগ প্রাপ্তরা কিছু অর্থলোভী শয়তানের কারণে। এই শয়তানরা ভালো করেই জানে সরকারী অধিদপ্তর তাদের আইন কানুন এবং রুল রেগুলেশন অনুযায়ীই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। রিট করে অসহায় চাকরী প্রার্থীর যে- কোন লাভ হবে না বিষয়টি জেনে শুনেই শকুন প্রজাতির মুখোশগুলো ফুসলিয়ে রিট আবেদন করাচ্ছে শত শত অসহায় যুবকদের।

শুধু মাত্র অর্থের লোভে। অধিদপ্তর বার বার তাদের অবস্থান সম্পর্কে স্পস্ট বক্তব্য দিচ্ছেন। বলছেন ২০১৩ সালের পরিপত্রের ধারা ৭ এর ক তে উল্লেখিত বিধি মোতাবেক যে কোটা ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে তার বিপরীতে যদি যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া যায় তবে মেধাক্রম অনুযায়ী সাধারণ কোটা থেকে প্রার্থী এনে পূর্ণ করতে যা একই ধারার খ তে উল্লেখিত।

পূর্বের নিয়মে এই যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া আসন শূন্যই রেখে দেওয়া হত। অযোগ্য প্রার্থী দিয়ে কোটা পূরণের নিয়ম কখনই ছিল না বা কখনই হবে না। তবে নতুন করে জ্ঞান পাপীরা অযোগ্যদের নিয়ে এ কোন খেলায় মেতেছে আমার বোধগম্য হচ্ছে না।

তার পরও শকুনদের প্ররোচনা চলতেই আছে। এতে শকুনরা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে আর বেকারত্বের থাবায় পিষ্ট যুবক এবং তার পরিবারের ঝণ করে আনা টাকা চলে যাচ্ছে শকুনদের দোজখের মত পেটে।

আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে আহব্বান জানাই এমন হীন চক্রান্তকারীদের লাগাম এখনই টেনে ধরতে এবং যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে। না হলে এই দেশ দ্রোহীদের দৌড়াত্ব দিন দিন আরও বাড়বে।

দেশের সচেতন নাগরীকদেরকেও আহব্বান জানাই এমন কুচক্রীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে এবং এদের বিস্তার রুখে দিতে।

চাকরী প্রার্থী ভাই বোনদের প্রতি আহব্বান জানাই অযথাই মরিচিকার পিছনে না ছুটে পড়াশুনায় মন দিতে, যে বা যারা আপনাদের ভ্রান্ত প্ররোচনা দিচ্ছে তাদের থেকে সাবধান হতে হবে। বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতাই তাদের টার্গেট, অর্থোপার্জনই এসব নর্দমার কীটদের ধর্ম ও কর্ম। সরকারের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে।

প্রাথমিকের পরবর্তী বিশাল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি পেতে হলে এই নিয়োগ কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। এতে সকলেরই মঙ্গল । আসুন সরকারকে সহযোগিতা করে চক্রান্তকারীদের চক্রান্ত রুখে দেই। সব শেষে সকলের মঙ্গল কামনা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *