গত ৭ এপ্রিল সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে করোনাভাইরাস পরীক্ষা শুরু হয়। এরপর থেকে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিদিন এই ল্যাবে প্রায় ৪৫০টি করে নমুনা আসে। তবে এরমধ্যে প্রতিদিন গড়ে ১৫০টির মতো নমুনা পরীক্ষা হয়।

এরফলে ওসমানীর ল্যাবে বিপুলসংখ্যক নমুনা পরীক্ষার জন্য পড়ে আছে। সপ্তাহখানেক আগে নমুনা পাঠিয়েও এখন পর্যন্ত রিপোর্ট পাননি অনেকে। ফলে বিপাকে পড়েছেন এই রোগীরা। রিপোর্ট না জানায় শঙ্কা আর  আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের। রিপোর্ট না পাওয়ায় অনেকেই আগের মত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেসহ অন্যদের সঙ্গে মিশছেন। এতে বাড়ছে ঝুঁকি।

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাব সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, ল্যাবে এখন প্রায় এক হাজার নমুনা পরীক্ষার জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়া প্রতিদিনই বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসছে নতুন-নতুন নমুনা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লোকবল সঙ্কট ও নমুনা প্রস্তুতের আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি সঙ্কটের কারণে চাইলেও দিনে অধিক পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য সিলেটে আরও একাধিক ল্যাব স্থাপনের প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।

সিলেটের ৩টি উপজেলার একাধিক করোনা সন্দেহভাজন রোগীর সাথে আলাপ করে জানা যায়, ৮ থেকে ৯ দিন আগে উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের নমুনা সংগ্রহ করে ওসমানী হাসপাতালের ল্যাবে প্রেরণ করেন। তবে এখন পর্যন্ত রিপোর্ট পাননি তারা। ফলে রোগীসহ তাদের পরিবারের সকলে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন।

রোগীদের কয়েকজন বলেন, পরীক্ষার পর যাদের রিপোর্ট পজিটিভ আসে তাদেরকে এ তথ্য জানানো হয়। তবে যাদের নেগেটিভ আসে তাদের কিছু জানানো হয় না। ফলে তাদের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছেন কি না এই তথ্যও জানতে পারেন না রিপোর্ট নেগেটিভ আসা রোগীদের অনেকে।

ওসমানীর পিসিআর ল্যাবের চলতি সপ্তাহের পরীক্ষার তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, এখানে গত শুক্রবার ১৩৬টি, শনিবার ১৭৮টি, রোববার ১৫৬টি, সোমবার ১৮০টি ও মঙ্গলবার ৮০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়।

সিলেটে করোনাভাইরাস আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হন গত ৫ এপ্রিল। ৭ এপ্রিল থেকে ওসমানীর ল্যাবে শুরু হয় করোনার পরীক্ষা। প্রথমদিকে এই ল্যাবে পরীক্ষায় পজিটিভ রোগী কম মিললেও গত সপ্তাহ থেকে রোগী বাড়তে শুরু করে। মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) পর্যন্ত সিলেট বিভাগে মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ১০৭ জনের।

এদিকে, ওসমানীতে পরীক্ষার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে বিভাগের বিভিন্ন স্থান সিলেটের বাইরের ল্যাবেও নমুনা পাঠানো হচ্ছে। এরমধ্যে ঢাকায় পরীক্ষায় হবিগঞ্জের ২০ জনের করোনা শনাক্ত হয়। আর সোমবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ল্যাবে পরীক্ষায় সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার দুইজনের করোনা শনাক্ত হয়।

কম সংখ্যক পরীক্ষা হওয়া প্রসঙ্গে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ ও সিলেট করোনাভাইরাস আইসোলেশন ইউনিটের সভাপতি অধ্যাপক ডা. শিশির রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, এখানে নমুনা প্রস্তুতের জন্য যে আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের দরকার তা যথেষ্ট নয়। বিশেষত কেবিনেট সঙ্কট রয়েছে। এছাড়া লোকবল সঙ্কটও রয়েছে। যে লোকবল রয়েছে তার সকাল থেকে কাজ শুরু করে নমুনা প্রস্তুত করতেই সন্ধ্যা হয়ে যায়।

তিনি বলেন, এই ল্যাবে প্রতিবার ৯৪টি করে পরীক্ষা করা সম্ভব হয়। আমরা প্রতিদিন দুইবার করে পরীক্ষা করি। পরীক্ষার পরিমাণ বাড়াতে হলে আলাদা ল্যাব ও লোকবলের প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব ও হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজের ল্যাবে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন এই চিকিৎসক।

তবে নমুনা কয়েকদিন থাকলেও নষ্ট হবার ঝুঁকি নেই জানিয়ে ডা. শিশির চক্রবর্তী বলেন, আমাদের এখানে নমুনা সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে নষ্ট হওয়ার কোনো ঝুঁকি নেই।

চাপ কমাতে সিলেটের প্রায় ৬০০টি নমুনা মঙ্গলবার ওসমানীর ল্যাব থেকে ঢাকায় রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এ পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে, মঙ্গলবার সিলেটে এসে বস্ত্র ও পাট সচিব লোকমান হোসেন মিয়া ওসমানী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে চাপ কমানো, দ্রুত রিপোর্ট প্রদান ও পরীক্ষার পরিমাণ বাড়াতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনা শনাক্তের ল্যাব দ্রুত চালুর নির্দেশ দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *