আল্লাহ রোযা আমাদের উপর ফরজ করে দিয়েছেন যেমনি ভাবে পূর্ববর্তী নবী রাসূল গনের উম্মতের উপর ফরজ করে দিয়েছিলেন।
রোযা হলো ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ সুবেহ সাদিক থেকে সূর্য্য অস্ত যাওয়ার আগ পর্যন্ত খাওয়া পিনাসহ যৌন পাপাচার কাজ থেকে বিরত(আল্লাহর উদ্দ্যেশ্য)থাকাই মূল রোযা।সাহরী ও ইফতার যেন এক স্বর্গীয় দৃশ্য রোযার জন্য উভয়টি সুন্নত। কোরআন ও হাদিসের আলোকে জেনে নেই সাহরী ও ইফতারের ফজিলতঃ
وَكُلُواْ وَاشْرَبُواْ حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ
আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত।সূরায় (বাকারা১৮৭)
সাহরী : গুরুত্ব ও ফযীলত
রোযার নিয়তে সুবহে সাদিকের পূর্বে যে খাবার গ্রহণ করা হয় তা হল সাহরী। সাহরী খাওয়া সুন্নত। সাহরীতে পেট ভরে খাওয়া আবশ্যক নয়; এক দুই ঢোক পানি পান করেও এ সুন্নত আদায় করা যায়।
সাহরীতে রয়েছে বরকত
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন
تَسَحّرُوا فَإِنّ فِي السّحُورِ بَرَكَةً.
তোমরা সাহরী কর। কেননা সাহরীর খাবারে বরকত রয়েছে।(সহীহ মুসলিম১০৯৫)

অতএব সাহরীর খাবার রোযা রাখতে শক্তি যোগায়। তেমনি এতে খায়ের ও বরকত এবং পুণ্য ও কল্যাণও নিহিত রয়েছে।
যারা সাহরী গ্রহণ করে তাদের উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়
আরেক হাদীসে এসেছে
السّحُورُ أَكْلُهُ بَرَكَةٌ، فَلَا تَدَعُوهُ، وَلَوْ أَنْ يَجْرَعَ أَحَدُكُمْ جُرْعَةً مِنْ مَاءٍ، فَإِنّ اللهَ عَزّ وَجَلّ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلّونَ عَلَى الْمُتَسَحِّرِينَ.
সাহরী খাওয়াতে বরকত রয়েছে। অতএব তোমরা তা ছেড়ো না; এক ঢোক পানি পান করে হলেও সাহরী গ্রহণ কর। কেননা যারা সাহরী খায় আল্লাহ তাদের উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতাগণ তাদের জন্য রহমতের দুআ করতে থাকে। মুসনাদে আহমাদ, (হাদীস ১১০৮৬), 
সাহরী : আমাদের রোযার একটি বৈশিষ্ট্য

রোযা বা সিয়ামের বিধান এ উম্মতের জন্য প্রথম নয়; পূর্ববর্তী উম্মতের উপরও রোযার বিধান ছিল। তবে আমাদের রোযা ও আহলে কিতাবের রোযার মাঝে সাহরী একটি বিশেষ পার্থক্যরেখা। রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন
فَصْلُ مَا بَيْنَ صِيَامِنَا وَصِيَامِ أَهْلِ الْكِتَابِ، أَكْلَةُ السّحَرِ.
আমাদের রোযা ও আহলে কিতাবের রোযার মাঝে পার্থক্য হল সাহরী খাওয়া। সহীহ মুসলিম, (হাদীস ১০৯৬)
অর্থাৎ আমাদের রোযায় সাহরী খাওয়ার যে গুরুত্ব ও ফযীলত রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে তা নেই। আমাদের নিকট সাহরী করাটাই একটি স্বতন্ত্র আমল এবং বড় সওয়াবের কাজ।
শেষ ওয়াক্তে সাহরী গ্রহণ করা উত্তম
সাহরী করা যেমন মুস্তাহাব তেমনি তা ওয়াক্তের শেষ দিকে করাও উত্তম। অর্থাৎ সতর্কতামূলক সময় হাতে রেখে সুবহে সাদিকের পূর্ব-নিকটবর্তী সময়ে সাহরী করা ভালো। নবীজী বলেন
إِنّا مَعَاشِرَ الْأَنْبِيَاءِ أُمِرْنَا أَنْ نُعَجِّلَ فِطْرَنَا، وَأَنْ نُؤَخِّرَ سَحُورَنَا.
আমরা নবীগণ এ মর্মে আদিষ্ট হয়েছি যে, সময় হওয়ার সাথে সাথেই ইফতার করব এবং শেষ ওয়াক্তে সাহরী গ্রহণ করব।মাযাউল যাওয়ায়েদ, হাদীস ৪৮৮০
সাহাবায়ে কেরামের আমলও এরকম ছিল। হযরত আমর ইবনে মাইমুন আলআউদী (র). বলেন
كَانَ أَصْحَابُ مُحَمّدٍ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ أَسْرَعَ النّاسِ إِفْطَارًا وَأَبْطَأَهُ سُحُورًا.
সাহাবায়ে কেরাম সময় হওয়ার সাথে সাথেই দ্রত ইফতার করতেন আর শেষ ওয়াক্তে সাহরী করতেন। মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, (বর্ণনা ৮৯৩২)
ইফতার : গুরুত্ব ও ফযীলত
অস্তপ্রায় সূর্য। কিছুক্ষণের মাঝে তা হারিয়ে যাবে পশ্চিমাকাশে। সাধ্য অনুসারে ইফতারের আয়োজন সামনে নিয়ে রোযাদার অপেক্ষায় আছে সূর্যাস্তের। হাতে খাবার। পেটে ক্ষুধা। পিপাসা কাতর ক্লান্ত শরীর। তবুও কিছু মুখে দিচ্ছে না। কারণ এখনও আল্লাহর হুকুম হয়নি। সে এক স্বর্গীয় দৃশ্য! আল্লাহ তাআলার নিকট এ দৃশ্যটি অত্যন্ত প্রিয়। বান্দার এ সময়ের এ অবস্থাকে আল্লাহ পাক বিশেষ মর্যাদা দিয়ে থাকেন।
ইফতার : রোযাদারের জন্য বিশেষ আনন্দের মুহূর্ত,ইফতারের সময় বান্দার দেহমনে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়।রাসূল (সাঃ)
لِلصّائِمِ فَرْحَتَانِ: فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِهِ، وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبِّهِ.
রোযাদারের জন্য দুটি বিশেষ আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে। একটি হল, ইফতারের সময়। অপরটি হল, যখন সে তার রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে সহীহ মুসলিম, (হাদীস ১১৫১)
ইফতার : যে সময় দুআ কবুল হয়
পুরো রমযানই রহমত-বরকতের মাস। তবে কিছু কিছু মুহূর্তে বান্দার প্রতি তা প্রবল বেগে ধাবিত হয়। ইফতারের সময়টিও এমন। তাই এ সময়ের দুআ আল্লাহ পাক বিশেষভাবে কবুল করেন। নবীজী বলেনإِنّ لِلصّائِمِ عِنْدَ فِطْرِهِ لَدَعْوَةً مَا تُرَدّ
ইফতারের সময় রোযাদারের একটি দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। অর্থাৎ কমপক্ষে একটি দুআ অবশ্যই কবুল হয়। মাজাহ,(১৭৫৩)
এ হাদীসের বর্ণনাকারী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. ইফতারের সময় এ দুয়া করতেন
اللّهُمّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِرَحْمَتِكَ الّتِي وَسِعَتْ كُلّ شَيْءٍ أَنْ تَغْفِرَ لِي .
ইয়া আল্লাহ, আমি আপনার সর্বব্যাপী রহমতের ওসিলায় প্রার্থনা করছি, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। ইবনে মাজাহ, হাদীস (১৭৫৩)
এজন্য ইফতারের একটি আদব হচ্ছে, সময় হওয়ার কিছুক্ষণ আগে ইফতার প্রস্তুত করে আল্লাহমুখি হওয়া, বেশি বেশি দুআ-দরূদ পড়া, তওবা-ইস্তিগফার করা। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা।ইফতার : যে সময় অসংখ্য জাহান্নামীকে মুক্তি দেওয়া হয়
ইফতারের মুহূর্তটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মুহূর্ত। এ সময়ে আল্লাহ তাআলা অসংখ্য জাহান্নামীকে মুক্তি দান করেন। নবীজী বলেন
إِنّ لِلهِ عِنْدَ كُلِّ فِطْرٍ عُتَقَاءَ، وَذَلِكَ فِي كُلِّ لَيْلَةٍ.
আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক ইফতারের সময় অনেক জাহান্নামীকে মুক্ত করে থাকেন এবং এটা প্রতি রাতে করেন। সুনানে ইবনে মাজাহ, (হাদীস ১৬৪৩)
তাই এ মুহূর্তে নিজের জন্য এবং আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের জন্য, পাশাপাশি সকল মরহুম মুমিন মুসলমানের জন্য মাগফিরাতের দোয়ায় মশগুল থাকা কাম্য। লেখক

মোঃইবাদুর রহমান জাকির
এম,এ,এল,এল,বি (অধ্যয়নরত)
সিলেট ল কলেজ
কার্যকরি পরিষদ
বড়লেখা মানব কল্যাণ পরিষদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *