মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত-মৃতের সংখ্যা প্রতিদিনই উদ্বেগজনক হারে বাড়লেও আগামী ১০ মে থেকে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান ও শপিংমল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে সরকার। এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, দোকান মালিক সমিতির আবেদনের পরিপ্রক্ষিতেই সীমিত পরিসরে দোকান-পাট ও শপিংমল খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে কেউ চাইলে না-ও খুলতে পারেন।

বৃহস্পতিবার (৭ মে) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দোকান মালিক সমিতির আবেদনের পরিপ্রক্ষিতেই ঈদকে সামনে রেখে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামী ১০ মে থেকে সকাল ১০টা থেকে বিকলে ৪টা পর্যন্ত দোকান-পাট ও শপিংমল খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে বড় দুটি শপিংমল (বসুন্ধরা ও যমুনা ফিউচার পার্ক) সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা মল খুলবে না। এটা তাদেন নিজস্ব সিদ্ধান্ত। কেউ যদি মনে করে দোকান খোলা ঠিক হবে না, তারা খুলবে না। তবে যারা খুলবে তাদেরকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

মার্কেট খোলার অনুমতি দেয়া হলেও গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। তাহলে ক্রেতা মার্কেটে আসবে কীভাবে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে যিনি যে এলাকার বাসিন্দা তিনি সে এলাকার মার্কেটে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনবেন। এজন্যই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

করোনাভাইরাসের চলমান এ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে রমজানে খুলবে না দেশের অন্যতম সেরা শপিংমল বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স ও যমুনা ফিউচার পার্ক। এই দুই জায়ান্ট শপিংমলের এমন সিদ্ধান্তের পর এবার রোজায় মার্কেট না খোলার পক্ষেই নিউমার্কেট দোকান মালিক সমিতি।

তবে অধিকাংশ ব্যবসায়ী দোকান খুলতে চান বলে জানিয়েছে ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি। মার্কেট খোলার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। তবে আরও দু-তিনদিন পর্যবেক্ষণ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা গেছে। বুধবার (৬ মে) মার্কেট খোলা প্রসঙ্গে নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি ও নিউমার্কেট দোকান মালিক সমিতি ভার্চুয়াল মিটিং করে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

এ বিষয়ে নিউমার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আশরাফ গণমাধ্যমকে বুধবার রাতে বলেন, ‘এখন পরিবহন বন্ধ, এ অবস্থায় আমরা দোকান খুলে কী করব? পরিবহন বন্ধ থাকলে মিরপুরের একজন ক্রেতাও দোকানে আসতে পারবে না। সংক্রমণ বাড়তে থাকলে দোকান খুলে কী করব? আমার একজন দোকানি যদি আক্রান্ত হয়, এই দায়ভার কে নেবে? তারপরও সংক্রমণ যদি কমতে থাকে এবং নিউমার্কেটের আশপাশের দোকান খুলে দেয় তখন ভেবে দেখা যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এসব কারণে ১০ তারিখ মার্কেট খোলা হবে কি হবে না-এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমরা ৯ মে পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করব। পরিস্থিতির যদি উন্নতি হয় এবং আশপাশের মার্কেট খোলে তাহলে আমরাও খুলব।’

ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম (শাহিন) গণমাধ্যমকে বলেন, অধিকাংশ ব্যবসায়ী দোকান খুলতে চান। তবে আমরা ৯ মে পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করবে। তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।

এর আগে বুধবার দুপুরে দেওয়ান আমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকেই এখন পর্যন্ত ফলো করছি। নিউমার্কেট এলাকার পুলিশ আগামী ১০ মে থেকে মার্কেট খোলার বিষয়ে এবং গাইডলাইন দেয়ার জন্য আমাদের ডেকেছিলেন। আজকে আমরা মার্কেটে এসেছি, কীভাবে দোকানপাট খোলা যায় দেখার জন্য।’

তিনি বলেন, ‘আমরা নিউমার্কেটের পক্ষ থেকে জানিয়েছি, বর্তমানে তো করোনা পরিস্থিতি প্রতিদিন খারাপ হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি বলি, আমার জীবনটা আগে। কিন্তু আমরা তো কোনো সেক্টর থেকেই কোনো সুবিধা পাচ্ছি না। তাই রুটি-রুজির জন্য আমরা রাজি হয়েছিলাম। তবে মার্কেট খোলা রাখার বিষয়ে আমাদের এক্সিকিউটিভ (নির্বাহী) কমিটির সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব। আমরা আমাদের নিজের, কর্মচারীদের এবং ক্রেতাদের সর্বোপরি দেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেব না।’

আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, ‘লকডাউনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দোকানদাররা। আবার যদি এখন আমরা মার্কেট খুলে দেই, তাহলে আমরাই বেশি স্বাস্থ্যগত দিক দিয়েও ক্ষতিগ্রস্ত হবো। তাই আমরা আমাদের সমিতির এক্সিকিউটিভ মেম্বারদের (নির্বাহী সদস্য) সঙ্গে কথা বলব, তারপর সিদ্ধান্ত নেব। তাছাড়া পুলিশ যে গাইডলাইন দিয়েছে, তাতে মার্কেটের চারটা গেটের মধ্যে মাত্র দুটাে গেট খোলা রাখা যাবে। নতুন করে আরও একটি টানেল তৈরি করতে হবে। এতকিছুর পর মনে হয় না মানুষ কেনাকাটা করতে আসবে।’

তিনি বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে বেচাকেনা হওয়ার সম্ভাবনা কম। এতদিন আমাদের দোকানের সব কর্মচারী দেশের বাড়ি চলে গেছেন। এখন তাদের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কিছু টাকা দিলেই হবে। কিন্তু অল্প কয়েক দিনের জন্য ঢাকায় আনলে তো পুরো বেতন দিতে হবে, বোনাসও দিতে হবে। না আমি দোকান খুলে কিছু বিক্রি করতে পারব। সভাপতি হিসেবে আমি দ্বন্দ্বে রয়েছি।

প্রথম ১৪ দিন যদি শক্তভাবে মনিটরিং করা হতো, তাহলে এখন দোকান খোলা যেত। সরকার যদি ১৪ দিন কারফিউ দিয়ে দিত তাহলে সব থেকে ভালো হতো। কারণ বারে বারে আমরা আর কত ক্ষতিতে পড়ব।’

এর আগে, সোমবার (৪ মে) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠি পাঠায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে দোকান ও শপিংমল আগামী ১০ মে থেকে খোলার কথা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। তবে তা বিকেল ৪টার মধ্যে বন্ধ করার কথা বলা হয়।

এতে বলা হয়, কোভিড-১৯ রোগের বিস্তাররোধ এবং পরিস্থিতির উন্নয়নের লক্ষ্যে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার আগামী (৭ থেকে ১৬ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি-

জনসাধারণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা সীমিত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে শর্তাদি বিবেচনা করে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় অভ্যন্তরীণভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য, দোকানপাট, শপিংমলসহ অন্যান্য কার্যাবলি ১০ মে থেকে সীমিত আকারে খুলে দেয়ার ব্যবস্থার অনুরোধ জানানো হলো। তবে এক্ষেত্রে আন্তঃজেলা ও আন্তঃউপজেলা যোগাযোগ/চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

হাট-বাজার, ব্যবসা কেন্দ্র, দোকানপাট ও শপিংমল সকাল ১০টায় খুলবে এবং বিকেল ৪টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রতিটি শপিংমলে প্রবেশের ক্ষেত্রে স্যানিটাইজার ব্যবহারসহ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত সতর্কতা গ্রহণ করার কথা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

সৌজন্যে: জাগোনিউজ ২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *