মোঃইবাদুর রহমান জাকির বিশেষ প্রতিনিধিঃ পাহাড় দুহিতা নদীগুলো উজানি ঢলে আগেই ছাপিয়ে গেছে। সিলেটের সবকটি নদীর দুকূল যখন ঢলের স্রোতে প্লাবিত ঠিক তখনই আষাঢ়ের আকাশ ভাঙ্গা বর্ষণ। ভরাট নদীর দুই তীরে এখন তাই প্লাবন ডেকেছে।
সুরমা, কুশিয়ারা, সারী, গোয়াইন, পিয়াইনসহ সবকটি নদীর পানি বিপদ সীমা ছাপিয়ে বইছে ক’দিন আগ থেকেই।
ফলে একটা বিপদসংকেত বয়ে বেড়াচ্ছে। একটা প্রবল বন্যার পদধ্বনিতে উদ্বেগাকুল কয়েকটি উপজেলার লাখো বাসিন্দা। হাজারো মানুষ পানিতে নিমজ্জিত। বন্দী আছেন শত শত পরিবার।
সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানিগন্জের অধিকাংশ এলাকা এখন পানিতে নিমজ্জিত। জৈন্তাপুর সদরের বেশিরভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে এলাকার বাসিন্দারা মারাত্মক দুর্ভোগে পড়েছেন।

জৈন্তাপুরের বেশিরভাগ এলাকা পানিতে টুইটুম্বর।নিম্নাঞ্চলে ঘর বাড়ি পানিতে সওলাব হয়ে পড়েছে। শত শত বাড়ি ঘরে এখন পানি।
গোয়াইনঘাট থেকে আবদুল মালিক জানান, এক মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফা আকস্মিক বন্যায় উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছেন।হাজার খানেক কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অনেকে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন। তবে বেশিরভাগ মানুষ আশ্রয়হীন অবস্থায় আছেন।
এমনিতেই করোনা পরিস্থিতিতে আয় রোজগারবিহীন গরীব এই উপজেলার বেশিরভাগ মানুষ এখন চরম সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে কোনোমতে বেঁচে আছেন। বন্যা তাদের জীবনে এখন মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে।
এদিকে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার রাস্তাঘাট। গোয়াইন সারী সড়ক ডুবে যাওয়ায় উপজেলার অভ্যন্তরীণ ও জেলার সাথে যোগাযোগ ভেঙে পড়েছে।
বালু পরিবহনকারী বলগেট নৌকার ধাক্কায় গোয়াইনঘাটের গোয়াইন সেতুর সিকিউরিটি পোস্ট হেলে পড়েছে। ফলে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সেতু এখন কিছুটা ঝুঁকিতে রয়েছে। দ্রুত মেরামত না করলে সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
হাওরাঞ্চলের ২৫/৩০টি গ্রামের অর্ধসহস্রাধিক ঘরবাড়েতে পানি উঠেছে। লোকজন স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। শতশত ষ্টিলবডি বলগেট আসায় গোয়াইনব্রীজের সিকিউরিটি পোস্ট ৩/৪দিন পূর্বে হেলে পড়ে আজ একেবারে পড়ে যাওয়ায় ব্রীজ এখন ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
ইউএনও নাজমুস সাকিব বলেন, বলগেটের ধাক্কা এবং স্রোতের তোড়ে এমন হয়েছে। শনিবার বিশেষজ্ঞ দল আসবে। থানার অফিসার ইনচার্য আবদুল আহাদ বলেন, একটি বলগেট(জাহাজ) আটক করা হয়েছে।
ইউএনও জানিয়েছেন, ৩৫০টি ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে।প্রায় ১৩ হজার লোক পানি বন্দী রয়েছেন। বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এখনও আশ্রয়কেদ্রে কেউ আসেনি।
দ্রুত গতিতে বাড়ছে পানি। প্রবল বর্ষণ আর ঝড় অব্যাহত রয়েছে।রাত বাড়লে অবস্হা আরো ভয়ানক হতে পারে।কবলিত এলাকায় তাৎক্ষনিক উদ্ধার করে নিরাপদে আনার তেমন কোন প্রস্তুতিও সংশ্লিষ্টদের নেই।
বন্যার কারণে লকডাউনে এখন ঘরে বন্দী লাখো মানুষ। গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুরের হাজার হাজার বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ায় তারা লকডাউনে আছেন বাধ্য হয়ে।
এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষ পাথর কোয়ারীতে অথবা বালু তোলার শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। আবহাওয়া বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, আরো কয়েক দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।
সুরমা, কুশিয়ারা, সারীসহ জেলার অধিকাংশ নদ নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে পড়ায় বৃষ্টি অথবা ঢলের পানি ধারণ ক্ষমতা কমেছে অনেক। তাছাড়া হাওর বাওরও পলিতে ভরে গেছে। ফলে বানের পানি সহজেই এসব জনপদ প্লাবিত করে ক্ষয়ক্ষতি বাড়িয়ে দেয়।