বাংলাদেশ পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহসভাপতি ও সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিকের বিরুদ্ধে আন্দোলন নিয়ে বিরাজ করছে তুমুল উত্তেজনা। এ উত্তেজনা থেকে পরিবহন শ্রমিকদের দুটি পক্ষ জড়িয়েছে সংঘর্ষে। তাদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় দক্ষিণ সুরমাস্থ সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা।

আজ মঙ্গলবার (২জুন) বিকাল ৪টা থেকে প্রায় ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদেরকে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ গুলি ও র‌্যাব টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।

জানা গেছে, শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিলের প্রায় দুই কোটি টাকা সেলিম আহমদ ফলিক আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। এ টাকার কোনো হিসাবও তিনি দিতে পারছেন বলে শ্রমিকদের অভিযোগ। এরই প্রতিবাদে মঙ্গলবার বেলা ১টার দিকে দক্ষিণ সুরমার বাবনা পয়েন্টে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান নেন শ্রমিকরা। তারা ফলিকের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন।

বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, ঈদের আগে কল্যাণ তহবিলের টাকা থেকে পরিবহন শ্রমিকদের ঈদ উপহার হিসেবে খাদ্যসামগ্রী প্রেরণের দাবি জানিয়েছিলেন কয়েকজন শ্রমিক নেতা। কিন্তু সেলিম আহমদ ফলিক এতে রাজি হননি। পরে তার কাছে তহবিলের প্রায় আড়াই কোটি টাকার হিসাব চাওয়া হলে তিনি ৪১ লাখ টাকার হিসাব দেন।

মিতালী শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক মিলাদ আহমদ রিয়াদ জানান, শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিলের প্রায় আড়াই কোটি টাকা ছিল। কিন্তু সেলিম আহমদ ফলিক আমাদের মাত্র ৪১ লাখ টাকার হিসাব দিয়েছেন। বাকি ২ কোটি টাকার হিসেব চাইলে তিনি শ্রমিকদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। এরপর শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে ফলিককে প্রতিহত করা ঘোষণা দেয়।

তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিলের পুরো টাকার হিসাব না দিলে তাকে কার্যালয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

সিলেট সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিক ব্যস্ত আছেন জানিয়ে ফোন কেটে দেন।

সিলেট জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু সরকার বলেন, আমরা দুইপক্ষকে নিয়ে বসার জন্য এসেছিলাম। কিন্তু তারা ছোট একটা বিষয় নিয়ে সংঘর্ষে জড়ালেন। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি সমঝোতা করার জন্য। 

এদিকে, ফলিকের বিরুদ্ধে পরিবহন শ্রমিকদের একটি পক্ষের এই আন্দোলনে অপর পক্ষও (ফলিকের অনুসারী) মাঠে নামে। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে আজ মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে বাস টার্মিনাল এলাকায় উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পরিবহন শ্রমিকরা লাঠিসোটাসহ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তারা ইটপাটকেলও ছুড়েন। সংঘর্ষ চলাকালে মিতালী পরিবহনের একটি বাস ও এনা পরিবহনের কাউন্টারে ভাঙচুর চালানো হয়।

সংঘর্ষ থামাতে র‌্যাব ও পুলিশ ব্যাপক চেষ্টা চালিয়ে ও ফাঁকা গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিকাল প্রায় ৫টার দিকে থামে সংঘর্ষ। এতে আহত প্রায় ৫০ জনকে কয়েকটি গাড়িযোগে হাসপাতালে প্রেরণ করতে দেখা গেছে।

সংঘর্ষের বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহসভাপতি ও সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিককেও বারবার চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।

দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি খায়রুল ফজল  বলেন, ‘সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এছাড়া র‌্যাব ৩ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। উভয়পক্ষের প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছেন সংঘর্ষে।’

তবে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জেদান আল মুসা বলেন, ‘সংঘর্ষ থামানো হয়েছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। ক্ষয়ক্ষতির পুরো হিসাব জানা যায়নি এখনো।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *