শুধু পশু জবাই করাই কোরবানির মূল উদ্দেশ্য নয়। বনের পশুর গলায় ছুরি চালানোর সঙ্গে সঙ্গে মনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা পশুত্বকে কোরবানি করে আত্মত্যাগের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করাই কোরবানির আসল উদ্দেশ্য। আল্লাহতায়ালা কেবল মুত্তাকিদের কোরবানিই কবুল করেন। আমরা যদি তাকওয়াবান অর্থাৎ আল্লাহভীরু হতে না পারি তবে যত সুন্দর ও যত দামি পশুই কোরবানি করি না কেন- তা কখনই আল্লাহর কাছে কবুল হবে না।
এ জন্য পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের কোরবানির পশুর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, পৌঁছে তোমাদের মনের তাকওয়া। সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ দাও।’ (সূরা হজ, আয়াত ৩৭)।
দুঃখের কথা হল আজ মুসলমানদের মধ্যে তাকওয়ার কোরবানির বড় অভাব। এমন বহু মানুষ আছে, যারা গোশতের লোভে কোরবানি দেয়। আবার কেউ কোরবানি দেয় সামাজিকতা রক্ষার জন্য। হরেক রকম মনোভাব ও চিন্তাচেতনা নিয়ে মানুষ কোরবানি দেয়।
কোরবানি কি শুধুই লোক দেখানো আর গোশত খাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ? নাকি কোরবানির পেছনে কোনো বড় উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে? আমাদের মাঝে প্রতিযোগিতা চলে কে কত বড় পশু কোরবানি করবে, কার পশুর দাম কত বেশি, কে সোশ্যাল মিডিয়ায় তার কোরবানির পশু বেচাকেনা নিয়ে ভাইরাল হবে। এসব যেন এখন মানুষের আসল উদ্দেশ্য হয়ে গেছে।
যেখানে উদ্দেশ্য হওয়ার কথা ছিল, কোরবানি হবে তাকওয়ার। কথা ছিল- কোরবানির মাধ্যমে বান্দা ত্যাগের শিক্ষা নেবে, দাম্ভিকতা পরিহারের শিক্ষা নেবে আর সমাজের নিরীহ অসহায় ও দুস্থ মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর চর্চা করবে। এ ত্যাগের মাধ্যমে দূর হবে ধনী-গরিবের বৈষম্যের শেকল।
বনের পশু কোরবানি দিয়ে নিজের মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা পশুত্বের কোরবানি করবে। আর প্রতিটি মুসলমান তাকওয়ার কোরবানি দিয়ে ভেতরে-বাইরে হয়ে উঠবে একজন প্রকৃত মানুষ। অথচ আজ কোরবানির নামে কী হচ্ছে- এসব ভাবলেও গা শিউরে ওঠে।
মহান আল্লাহতায়ালা হজরত ইবরাহিম (আ.)কে আনুগত্যের পরীক্ষা হিসেবে প্রিয়বস্তু উৎসর্গ করার হুকুম দেন। ওই হুকুম পালনে ব্রত হয়ে হজরত ইবরাহিম (আ.) তার প্রাণপ্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.)কে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে কোরবানি করতে উদ্যোগ নেন। তবে কোরবানি শেষে দেখেন পুত্রের পরিবর্তে তিনি একটি পশু জবাই করেছেন। আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের এ মহান ত্যাগের ঘটনার স্মরণে যুগ যুগ ধরে উম্মতে মোহাম্মদির ওপর পশু কোরবানি আবশ্যক করে দেয়া হয়েছে।
মুসলমানদের এ ধর্মীয় রীতি অনুসারে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু কোরবানি করা হয়ে থাকে। প্রতিটি সামর্থ্যবান মুসলমান যেন কোরবানির পশুর গোশত আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে সমাজে সাম্যের উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারেন। পাশাপাশি পশু কোরবানির সঙ্গে মনের পশুত্বেরও কোরবানি হোক। হিংসা, ক্রোধ, পাশবিকতা ও পাপ চিন্তাগুলো জবাই করে আমরা সবাই যেন শুদ্ধ মানুষ হতে পারি।