মেহের আফরোজ শাওন ও চঞ্চল চৌধুরী দু’জনই অভিনয় জগতের মানুষ হলেও কণ্ঠশিল্পী হিসেবে শ্রোতাপ্রিয় তারা। সম্প্রতি ‘আইপিডিসি আমাদের গান’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে তাদের গাওয়া ‘সর্বত মঙ্গল রাধে’ গানটি প্রকাশ হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী পার্থ বড়ুয়ার সংগীতায়োজনে গানটি প্রকাশের পরই ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। উঠেছে বিতর্কও।

বিতর্কতটা মূলত কপিরাইট ইস্যু নিয়ে। এ ইস্যুর জের ধরেই গানটি ইউটিউব থেকে নামিয়েও নেওয়া হয়েছে।


আইপিডিসি গানের পরিচয় দিতে গিয়ে লিখেছে, এ গান সংগৃহীত। তবে সরলপুর ব্যান্ডের ভোকালিস্ট ও গিটারিস্ট তারিকুল ইসলাম তপনকে গানটির গীতিকার ও সুরকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে কপিরাইট অফিস। এ বান্ডের আপত্তির জেরেই গানটি ইউটিউব থেকে নামানো হয়েছে বলে জানা গেছে। 

অনুমতি ছাড়াই কপিরাইট আইন ভঙ্গ করে তাদের গান বাজারজাত করার জন্য প্রতিবাদ করে এটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য ইউটিউবে অনুরোধ করেছে সরলপুর ব্যান্ড। গান সরিয়ে ক্ষমা না চাইলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন ব্যান্ডের মুখপাত্র এবং লিড গিটারিস্ট মারজিয়া তুরিন।

তুরিন বলেন, ‘আমরা সরলপুর ব্যান্ড ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশে সংগীত চর্চা করে আসছি। এ পর্যন্ত আমাদের ৫০টির মতো মৌলিক গান তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন কনসার্ট, টেলিভিশন লাইভ শোতে আনরিলিজ ট্র্যাক হিসেবে ১০-১২টি গান ইতোমধ্য শ্রোতামহলে দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে।

‘এর মধ্যে আমাদের লোকজ ধারার মৌলিক গান ‘যুবতী রাধে’ মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, গানটি নিয়ে মানুষের মাঝে নানা ধরনের বিভ্রান্তিও ছড়িয়ে পড়েছে যে এটি ময়মনসিংহ গীতিকা থেকে সংগৃহীত একটি গান। মূলত গানটি আমাদের ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ভোকাল ও গিটারিস্ট তারিকুল ইসলাম তপনের লেখা এবং সুর করা। গানটি সরলপুর ব্যান্ড শুরু থেকেই পরিবেশন করে আসছে। কিন্তু বিভিন্ন সময় আমাদের গানটি অনেকেই নিজের বলে প্রকাশের চেষ্টা করে এসেছেন। ফলে ২০১৮ সালে আমরা গানটির কপিরাইট সংগ্রহ করি।”

আইপিডিসির বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ”গত ২০ অক্টোবর ‘আইপিডিসি আমাদের গান’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী পার্থ বড়ুয়ার সংগীতায়োজনে জনপ্রিয় দুই তারকা মেহের আফরোজ শাওন ও চঞ্চল চৌধুরীর কণ্ঠে গানটি প্রকাশ করা হয়। যাতে আমাদের গানটিকে লোকজ গান হিসেবে সংগৃহীত বলে উল্লেখ করা হয়। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গানটি ইউটিউব কর্তৃপক্ষ তাদের চ্যানেল থেকে সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড কর্তৃপক্ষ গানটি তাদের ফেসবুক পেজসহ বিভিন্ন পেজ থেকে প্রকাশ করে আমাদের মেধাস্বত্বকে আরও বিপন্ন করে তুলছে। তারা এখান থেকে গানটি সরিয়ে ক্ষমা না চাইলে আমরা আইনের আশ্রয় নেব। এ ব্যাপারে আমরা কপিরাইট কর্তৃপক্ষের কাছে সুষ্ঠু পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।”

‘যুবতী রাধে’ গানটি নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এ গানটি লেখা শুরু করি ২০০৬-২০০৭ সাল থেকে। তখনকার সময়ে আমরা কয়েকজন একদিন রাতব্যাপী পালাগান দেখতে যাই। যেখানে রাধাকৃষ্ণ সম্পর্কিত বিভিন্ন পালাগান হয়েছিল, যা আমাদের খুবই ভালো লাগে এবং মন কাড়ে। তারপর থেকে রাধাকৃষ্ণ’র গানগুলোর ওপর নির্ভর করে আমরা এ গানটি লেখা শুরু করি। রাধাকৃষ্ণের গল্প থেকে আমরা বিভিন্ন তথ্য-ভাবধারা, শব্দচয়ন সংগ্রহ করি। কিন্তু কোনো হুবহু কথা আমরা সংগ্রহ করিনি।’

‘আমাদের এ গানের সাথে কোথাও কোনো গানের হুবহু মিল নেই। গানের গীতিকার এবং সুরকার তারিকুল ইসলাম তপন। গানটি আমরা সম্পূর্ণরূপে কীর্তন ও লীলা কীর্তনের ওপর নির্ভর করে সুর করেছি। কীর্তন ও লীলাকীর্তনের ভাবধারা গানটিতে আনার চেষ্টা করেছি। ‘যুবতী রাধে’ গানটি আমরা ২০১০ সালে ময়মনসিংহে কনসার্টে পরিবেশন করি। ২০১২ সালে চ্যানেল নাইনে আমরা এ গানটিসহ আরও সাতটি গান আনরিলিজ ট্র্যাক হিসেবে প্রকাশ করি। পরবর্তীতে বিভিন্ন চ্যানেলেই আমরা একইভাবে আমাদের আনরিলিজ ট্র্যাকগুলো আমরা গেয়েছি।’

‘২০১০ সালে সরলপুর ব্যান্ডের প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে। ২০১৮ সালে আমরা সরলপুর ব্যান্ডের রেজিস্ট্রেশন করি। তার সাথে সাথে আমরা ১২টি মৌলিক গানের সনদ নিয়ে থাকি যার মধ্যে একটি ‘যুবতী রাধে’। ২০১৮ সালের জুন মাসে এর কপিরাইট হয়।’

‘যুবতী রাধে’ গানটি নিয়ে প্রথম বিভ্রান্তি তৈরি করেন সুমী মির্জা নামের এক শিল্পী দাবি করে তুরিন বলেন, “তিনি গানটির কথা পরিবর্তন করে লেজার ভিশনের ব্যানারে তাদের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করে। ইউটিউবের কমেন্টে সে আমাদের গানটিকে পালা গান, মহুয়া গান, গোয়ালিনী গানসহ নানা নামে প্রচার করে। ঘটনার প্রেক্ষিতে আমরা তার সাথে যোগাযোগ করলে সে আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। যার প্রেক্ষিতে আমরা আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হই। পরবর্তীতে কপিরাইট অফিস থেকে আমাদের দুই পক্ষকে ডাকে। সুমী মির্জা গানটিকে ময়মনসিংহ গীতিকার মহুয়া গান কিংবা গোয়ালিনি গান বলে দাবি করলেও কোনো প্রমাণ দেখাতে না পারায় দুটি শুনানির মাধ্যমে গানটির সত্যতা প্রকাশ হয় এবং গানটির কপিরাইট আমরা পাই। পরবর্তীতে সে আমাদের ‘যুবতী রাধে’ গানটির সুর ও কথার অংশ হুবহু নকল করে, ‘বিনোদিনী রাই’ নামে আরেকটি গান প্রকাশ করে এবং সাথে সাথে গানটির কপিরাইট নিয়ে নেয়।”

‘এ গানের ব্যাপারে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে যে, ‘বিনোদিনী রাই’ এবং ‘যুবতী রাধে’ গানটি এক। আসলে বিষয়টি তা নয়। সে প্রেক্ষিতে সুমী মির্জার সাথে আমাদের যে দ্বন্দ্ব তা কোর্টে এখনো চলমান। করোনা পরিস্থিতির পাশাপাশি আমরাও দেশের বাইরে অবস্থান করায় মামলার কার্যক্রম থমকে আছে। আমরা দেশে ফিরলেই পুনরায় কোর্টে মামলাটি নিয়ে অগ্রসর হবো এবং কলার টিউনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গানটি প্রকাশ করায় যে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন আমরা হয়েছি তার জন্য কোর্টে আবেদন করব।’

সরলপুর ব্যান্ডের বর্তমান লাইনআপ

মেইন ভোকাল মারজিয়া আমিন তুরিন এবং তারিকুল ইসলাম তপন। লিড গিটারিস্ট- তারিকুল ইসলাম তপন, রিদম গিটারিস্ট সুব্রত উল্লাস, বেজ গিটার তপু, ড্রামস সজীব, কিবোর্ড প্রীতম, দোতারা ও ব্যাঞ্জো শিশির ও খমক তুরিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *