সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্মম নির্যাতনে রায়হান আহমদ নামক এক যুবক নিহতের ঘটনার ইতোমধ্যে ৫০দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। এরই মধ্যে মূল অভিযুক্ত বহিষ্কৃত আকবরর হোসেন ভূঁইয়াসহ মোট ৪ পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেককে রিমান্ড শেষে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন আদালত। কিন্তু এ ঘটনার ৫০দিন পার হলেও মানুষের আক্রোশ কমেনি আকবরদের উপর। আকবর গ্রেপ্তারের পর সে আক্রোশের প্রমাণ মিলেছে বার বার। যখনই আদালতে আকবরকে তোলা হয়েছে তখনই উত্তেজিত জনতা জড়ো হয়েছিলেন আদালত প্রাঙ্গণে। ঠিক তেমনই জেল অভ্যন্তরেও আকবরদের নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়।
রায়হান হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার আকবর কিংবা অন্য পুলিশ সদস্যকে দেখলেই অন্য হাজতি ও বন্দীরা আক্রমণ করতে চান। কেউ কেউ আবার পায়খানা ছুড়ে মারতে চান আকবরদের উপর।
সিলেটের কেন্দ্রীয় কারাগারের এক কর্মকর্তা জানান, রায়হান হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪ পুলিশ সদস্যকেই আলাদা আলাদা সেলে বন্দী রাখা হয়েছে। তাদেরকে অন্য হাজতির মতো স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে দেওয়া হয় না। নিয়ম করে প্রতিদিন শরীরে আলো-বাতাস লাগানোর জন্য একবার বের করা হয়। নির্ধারিত সময় হাঁটাচলার পর আবার সেলে বন্দী রাখা হয়। এসময় অন্য সকলকে দূরে সরিয়ে দিয়ে জেল পুলিশ পাহারায় তাদের বের করে আনা হয়। তা না হলে অন্যরা হামলা করতে চান।
সূত্র আরও জানায়, আকবরকে জেলে নেওয়ার পর একজন বন্দী পায়খানা ছুড়ে মারতে চেয়েছিলেন। এখনো অন্যরা আকবরদের দেখলেই উত্তেজিত হয়ে হামলা করতে চান। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে যখনই তাদের বের করা হয় তখন অন্য সকলকে দূরে সরিয়ে জেল পুলিশ পাহারায় খুব সামান্য সময় হাঁটাচলার সুযোগ দেওয়া হয়।
এদিকে এ মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষের দিকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন- পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের পুলিশ সুপার খালেদ-উজ-জামান। তিনি বলেন, মামলার তদন্ত কার্যক্রমন যাতে দ্রুত শেষ করা যায় সেদিকেই আমরা এগোচ্ছি।
আকবর বা গ্রেপ্তার কাউকে নতুন করে রিমান্ডে আনার পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে যদি তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজন হয় তাহলে যে কাউকে রিমান্ডে আনা হতে পারে।
যে দিন থেকে সেলে বন্দী আকবররা :
এর আগে এ মামলায় সর্বশেষ গ্রেপ্তার হওয়া আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে ১৭ নভেম্বর জেলহাজতে পাঠান সিলেটের মহানগর মুখ্য হাকিম আদালত। জেলহাজতে যাওয়ার পর থেকেই আকবরকে পৃথক একটি সেলে বন্দী রাখা হয়েছে। এছাড়া যে রায়হানকে ধরে আনা বহিষ্কৃত এএসআই আশেক এলাহীসহ গ্রেপ্তার ৩ পুলিশ সদস্যকে রিমান্ড শেষে জেল হাজতে পাঠানো হলে তাদেরকেও আলাদা আলাদা সেলে বন্দী রাখা হয়।
এর আগে ১১ অক্টোবর ভোরে রায়হান নিহতের পর ১২ অক্টোবর থেকে পালিয়েছিলেন আকবর। পরে গত ৯ নভেম্বর কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আকবরকে। পরদিন ১০ নভেম্বর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের পক্ষ থেকে আদালতে তুলে রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত তার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ঘটনার সূত্রপাত :
গত ১১ অক্টোবর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে গুরুতর আহত হন রায়হান নামের ওই যুবক। তাকে ওইদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন বন্দরবাজার ফাঁড়ির এএসআই আশেকে এলাহীসহ পুলিশ সদস্যরা। সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান রায়হান।
ঘটনার পর পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, নগরের কাস্টঘরে গণপিটুনিতে রায়হান নিহত হন। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় ফাঁড়িতে পুলিশি নির্যাতনে প্রাণ হারান রায়হান।
এ ঘটনায় রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে সিলেট মহানগর পুলিশের তদন্ত কমিটি ঘটনার সত্যতা পেয়ে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবরসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করেন। মামলাটি পুলিশ সদরদপ্তরের নির্দেশে পিবিআইয়ের তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
একে একে চাঞ্চল্যকর এই মামলায় এসএমপির মোট আট পুলিশ সদস্য সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজন প্রত্যাহার হয়েছেন। এছাড়া এ পর্যন্ত এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়াসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে চার পুলিশ সদস্যকে। একই সাথে রায়হানের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ দাতা হিসেবে সন্দেহভাজন একজনকেও গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই।