সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের যাদুকাটা নদীর তীর থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ছবি তুলতে যাওয়ায় গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন স্থানীয় এক সংবাদিক। এসময় তার কাছ থেকে ক্যামেরা, মোবাইল ফোন এবং মোটরসাইকেল নিয়ে যান নির্যাতনকারীরা।

নির্যাতনের শিকার ওই সাংবাদিকের নাম কামাল হোসেন। তিনি তাহিরপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং দৈনিক সংবাদ ও দৈনিক শুভ প্রতিদিন-এর উপজেলা প্রতিনিধি। তিনি তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

নির্যাতনের শিকার কামাল হোসেন জানান, সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের যাদুকাটা নদীতে প্রতিদিন প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে শত শত শ্রমিক অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন করেন। সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকালে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের ছবি তুলতে গেলে একটি চক্র তাকে বাধা দেয়। পরে ছবি তোলার ক্যামেরা, মোবাইল ফোন এবং মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিয়ে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করেন।

তিনি অভিযোগ করেন, যাদুকাটা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত একটি সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে নির্যাতন করেছেন। তার মাথা, কপাল এবং চোখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তিনি বর্তমানে তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এদিকে সাংবাদিককে মারধরের পর তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশমির রেজা নিজের ফেসবুক আইডিতে এই ভিডিও ছেড়ে দিয়ে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

ভাইরাল ১ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, মারধরের পর সাংবাদিক কামাল হোসেনকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। তার মুখমণ্ডলে আঘাতের চিহ্ন। চারপাশ ঘিরে রেখেছে মানুষ। একপর্যায়ে তার বাঁধন খুলে দেয়া হয়। তবে হামলাকারীদের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।

হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশমির রেজা জাগো নিউজকে বলেন, ‘এক সাংবাদিক জাদুকাটা নদীতে অবৈধভাবে পাড় কেটে বালু-পাথর উত্তোলন করার ছবি তুলতে যান। তাকে ছবি তুলতে দেখে প্রকাশ্যে পাথরখেকোরা গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করে। আমি জোর দাবি জানাই, এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক।’

‘যাদুকাটা নদী থেকে বালু-পাথর উত্তোলন অবৈধ’ উল্লেখ করে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রদ্মাসেন সিংহ জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘ঘটনাটি আমরা শুনেছি। খুবই গুরুতর ঘটনা ঘটে গেছে। আমরা এর সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি। নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক মামলা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু প্রশাসনের লোকজন গেলে শ্রমিকরা পালিয়ে যান। আবার চলে আসলে এরা লুকিয়ে বালু উত্তোলনের চেষ্টা করেন। তারপরও আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *