ভারতের কেরালায় এক বাংলাদেশি তরুণীকে বিবস্ত্র করে যৌন নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। কয়েকজন যুবক ও এক নারী ওই তরুণীকে নির্যাতন করেন। ১৫-১৬ দিন আগের ভিডিও এটি।  যৌন নির্যাতনকারীদের মধ্যে একজনের সঙ্গে ঢাকার মগবাজারের এক তরুণের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করা ছবির মিল পাওয়া যায়। তদন্ত করে তার আসল নাম-ঠিকানা শনাক্ত করেছে পুলিশ।  তার নাম রিফাতুল ইসলাম হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ।

তিনি বলেন, এরপর ছেলেটির মা ও মামাকে ভিডিওটি দেখানো হয়। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে মা স্বীকার করেন ভিডিওতে তার ছেলে রিফাতুল ইসলাম হৃদয় রয়েছে। স্থানীয়রাও হৃদয়কে শনাক্ত করে। স্থানীয়ভাবে তিনি টিকটক হৃদয় নামে পরিচিত। তার বয়স ২৬ বছর। উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের কারণে চার মাস আগে তাকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। তারপর থেকে বাসার কারো সংগে তার যোগাযোগ ছিলো না বলে পুলিশকে জানান হৃদয়ের মা ও মামা।

হৃদয়ের বাসা তল্লাশি করে তার জাতীয় পরিচয়পত্র, জেএসসি পরীক্ষার এডমিট কার্ড, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও রমনা থানায় তার নামে দায়েরকৃত একটি ডাকাতি প্রস্তুতি মামলার এজাহার ও এফআইআর কপি জব্দ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, কৌশলে হৃদয়ের মামার হোয়াটসঅ্যাপ থেকে তার ভারতীয় নম্বরে যোগাযোগ করে পুলিশ। সে জানায়, তিন মাস আগে ভারতে গেছে। যৌন নির্যাতনের যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, সেই ঘটনা ১৫ থেকে ১৬ দিন আগের। ভিডিওর ভিকটিম বাংলাদেশি তরুণী এবং ঢাকার বাসিন্দা। বয়স ২০-২২ বছর।

ওই তরুণীর আরও পরিচয় জানতে চাওয়া হলে হৃদয় হোয়াটসঅ্যাপে ভিক্টিমের একটি ভারতীয় পরিচয়পত্র আধার কার্ড পাঠায় বলে জানান তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মো. শহিদুল্লাহ।

তিনি বলেন, হৃদয় জানিয়েছে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় তার কয়েকজন বন্ধুও জড়িত ছিল। ভারতের কেরালায় ওই ঘটনা ঘটে। ওই তরুণীর সঙ্গে আগে থেকেই তার পরিচয় ছিল।

তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার আরও বলেন, হৃদয়ের দেওয়া তথ্যমতে তরুণীর পরিবারের সন্ধান পেয়েছি। পরিবারের সঙ্গে মেয়েটির গত দুই বছর ধরে কোনো যোগাযোগ ছিল না।

তিনি বলেন, হৃদয় বর্তমানে ভারতের পুনেতে অবস্থান করছে জানালেও তার প্রকৃত অবস্থান শনাক্তের পাশাপাশি সে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছে কি-না তা যাচাই করা হচ্ছে। হৃদয়ের সহযোগী যারা ছিল তাদের পরিচয় শনাক্তের পাশাপাশি তারা বাংলাদেশি না ভারতীয় নাগরিক তা যাচাই চলছে। যেহেতু ঘটনাটি ভারতে ঘটেছে, সেক্ষেত্রে তাদের ফিরিয়ে আনাটা সময়সাপেক্ষ। 

জানা যায়, ওই তরুণীর স্বামী কুয়েতে থাকেন। ২০১৪ সালে তাদের প্রেম করে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার সহ্য করতে হত মেয়েটিকে। সেই কারণে বিয়ের পরও প্রায় পাঁচ বছর বাবার বাড়িতে থাকতেন তিনি। বাবার আর্থিক অনটন মেটাতে ওই তরুণী সৌদি আরব যাওয়ার চেষ্টা করেন। তার বাবা এক দালালের মাধ্যমে মেয়েকে সৌদি আরবে পাঠাতে গিয়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকা ঠকে যান। এরপর ওই তরুণী কাউকে কিছু না জানিয়ে ভারত চলে যান।

ডিএমপির কর্মকর্তা বলেন, মেয়েটির বাবা-মা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পরে আমরা দ্রুত মেয়েটিকে ফেরত এনে চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো। মেয়েটিকে উদ্ধার ও যারা তাকে যৌন নির্যাতন করেছে তাদেরকে ভারতীয় পুলিশ ও ইন্টারপোলের সহযোগিতায় গ্রেফতার করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *