বার বছরের নাতি কে নিয়ে বের হলাম বেড়াতে,
বহুকথা হল তাহার সনে দুঃখ ভরা এই রথে।
কহিলাম দাদু এই যে দেখিতেছ মরা বালুর নদী,
ছয় যুগ আগে মরা ছিলনা সে,জল বহিত নিরবধি।
বর্ষাকালে তার জোয়ানি ডর লাগিত মনে,
মেঘেরাও যুদ্ধ করত ইশান,আঁড়ি কোণে।
জাল ফেলিয়া শিকার করিতাম,জুটিত মাছ,তাজ!
রুই,কাতলা,চিংড়ি, ইলিশ কোথায় গেলি সব আজ।
নৌকাবাইচ এর প্রতিযোগিতা বসত কুশিয়ারা,
নাচে,গানে নৌকা বাইতো প্রতিযোগী জোয়ানরা।
ফাগুনের হাওয়ায় পাল তুলিয়া মাঝি ধরিত গান,
ভাটিয়ালী গান গাহিয়া বৈঠায় আনিত তান।

আকাশ পানে মুন্ডু উঠাইয়া টুপি ধরিলাম এক হাতে,
কহিলাম নাতিকে ভবনগুলোর নীচে কি ছিল আগে তাতে?
জানিবার লাগি সায় দিল নাতি-বলিল কি ছিল?
ভারাক্রান্ত শ্বাস ছাড়িলাম,চোখে জল আসিল।
উত্তরে ছিল বিরাট দিঘী, দক্ষিণেতে মাঠ,
পুর্বেতে ছিল ক্ষেতের জমি,পশ্চিমেতে হাট।
শনি,মঙ্গলে হাট বসিত,মাঠে করিতাম খেলা,
খেলা শেষে মোরা ঝাপিয়ে পড়তাম,দিঘী করিতাম ঘোলা।
সোনার ফসলে ভরে যেত ক্ষেতের জমি যত,
কৃষক,কৃষাণী মনআনন্দে ফসল তুলিত কত।
ওই যে দেখিতেছ বৃক্ষ শূন্য পোড়া মাটির স্তুপ,
পাখিদের গান নেই সেথায় নির্জন, নিশ্চুপ।
আট গ্রামের পাহাড় ছিল নাম,থাকিত বন্যেপ্রাণী,
উপরে ছিল ঔষধী বৃক্ষ, নীচে কয়লার খনি।
জ্বালানীর লাগি পাহাড় খনন আদেশ দিল সরকার,
পাহাড়,ভূমি,নদী-নালা মরুভূমিতে একাকার।
নাতি আমার করিল প্রশ্ন,দাদু কথাগুলো কি বাস্তব?
নাতির কথা শুনিয়া আমি নির্বোধ, তাজ্জব!
বুঝিলাম আমি নাতির কি দোষ,যাহা দেখিতে নাহি পায়,
কল্পকথা তাহার কাছে লাগে,শুনিবার কি মন চায়?