বিয়ানীবাজারে মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের ঘর উদ্বোধনের ৫ দিনের মাথায় ফাটল দেখা দিয়েছে! অভিযোগ উঠেছে, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ঘর নির্মাণ করায় এমন ফাটল দেখা দেয়। শুধু তাই নয়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের নতুন ঘরের টিনের চাল চুয়ে পানি পড়া, কাঠের তীরে ফাটল ও পোকায় ধরা, টয়লেটের ফিটিংস স্থাপনে অব্যবস্থাপনা, পানীয় জল ও বিদ্যুৎ সংযোগহীনতাসহ সংযোগ রাস্তা না থাকায় সুবিধাভোগী নিম্নবিত্ত মানুষগুলোর মধ্যে বিরাজ করছে অস্বস্তি।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ জুন প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়ণে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় বিয়ানীবাজার উপজেলার ৭৪টি ভূমি ও গৃহহীনদের মাঝে নতুন ঘর ও দলিল হস্তান্তর করে উপজেলা প্রশাসন। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে উপজেলার ৭৪টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ খাস জমির দলিলসহ একটি সেমি পাকা গৃহ নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা মোল্লাপুর ইউনিয়নের কটুখালিরপার গ্রামে নির্মাণ করা হয়েছে ৫৭টি ঘর। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে বিয়ানীবাজার উপজেলার আরও ৩০টি পরিবার পেয়েছিল প্রথম পর্যায়ের ঘর। প্রতিটি গৃহ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যার পুরোটাই বহন করা হয়েছে। এ কাজের দেখভাল করছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন।

মোল্লাপুর ইউনিয়নের কটুখালিরপার গ্রামে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কটুখালিরপার গ্রামে গড়ে তোলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। অন্য আরও ৮/১০টি ঘরের দেয়ালের পলেস্তারার আস্তরণেও রয়েছে একাধিক ফাটলের চিহ্ন। দুটি ঘরের টিনের চাল চুয়ে পানি ঝরছে। ঘরের উপরের কাঠের তীরে ফাটল ও পোকায় ধরেছে। এমনকি একটি ঘরের টয়লেটের ফিটিংসেও রয়েছে অব্যবস্থাপনা। নতুন ঘর পাওয়া দরিদ্র মানুষগুলোর চোখে মুখে এখন দুশ্চিন্তার ভাঁজ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অনেকটা তড়িঘড়ি করে ঘরগুলো নির্মাণ ও মানসম্মত উপকরণ ব্যবহার না করে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ঘর নির্মাণ করায় এ ধরণের ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে, নতুন পাকা ঘরের দেয়াল ফেটে যাওয়ায় দুঃশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনেক বাসিন্দা। কটুখালিরপার গ্রামের ফয়জুর রহমান নামে এক উপকারভোগী জানান- ‘ভূমিহীন বলেই ঘর পেয়েছিলাম কিন্তু টয়লেটের রিং-স্লাব ভাঙ্গা। নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। এমনকি টিউবওয়েলের ব্যবস্থাও নেই। ঘরের দেয়ালের মধ্যে একাধিক স্থানে ফাটল ধরেছে।’

তিনি জানান, ‘বাধ্য হয়ে একজন মিস্ত্রিকে ডেকে টয়লেটের ফিটিংস পুনঃস্থাপন করেছি। পাশাপাশি ঘরের দেয়ালের পলেস্তারা মেরামত ও রং করেছি। এছাড়া নিজ উদ্যোগে বিদ্যুতের মিটারও স্থাপন করছি।’ তিনি জানান, এখনই যদি নতুন পাকা ঘরের এই দশা হয় তাহলে সামনের দিনগুলোতে তারা কি করবেন? অন্যদিকে, কটুখালিরপার গ্রামে ফাটল ধরা ঘরটির উপকারভোগী সেখানে অবস্থান না করায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দে শুরু থেকেই ব্যাপক অনিয়ম ও ঘাপলার অভিযোগ রয়েছে জানিয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আশরাফুল ইসলাম বলেন, এসব ঘর প্রকৃত উপকারভোগীরা পাননি। যাদের ঘর আছে, জমি আছে- এমনও পরিবারও এসব ঘর পেয়েছে।

বর্তমান সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহৎ এই উদ্যোগ কোন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অবহেলা ও খামখেয়ালিপনার কারণে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির শিকার হতে পারে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে ঘরগুলো পুনরায় মেরামত করে উপকারভোগীদের বসবাস উপযোগী করে দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

মোল্লাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ মান্নান বলেন, ‘ঘরগুলো যদি উপকারভোগীদের বসবাস উপযোগী না হলে তো বিষয়টা খুবই খারাপ দেখাবে। আমি ঘরগুলো পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করবো।’

ফাটল ধরার ব্যাপারে বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘দেয়াল ঢালাইয়ে পানির ব্যবহার কম থাকায় অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। তবে কাজে কোন অনিয়ম হয়নি। কাজ চলাকালে আমরা সরেজমিনে গৃহ নির্মাণ প্রকল্পগুলোতে উপস্থিত ছিলাম।’

বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে পল্লীবিদ্যুৎকে বিষয়টি অবগত করেছি। তারা শীঘ্রই বৈদ্যুতিক মিটার প্রতি ঘরে স্থাপন করে দিবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কাগজে-কলমে এসব ঘর তো উপকারভোগীদের। রক্ষণাবেক্ষণে তাদেরও কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে। আমরা তো আমাদের কাজ করে দিয়েছি, এখন এসব রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তো তারাই পালন করবে। তবে কটুখালিরপার অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকায় হওয়ায় সেখানে কিছু সমস্যা দেখা দিতেই পারে। সরেজমিনে পরিদর্শন করে আমরা সেইসব সমস্যা সমাধান করে দেবো।’

এ ব্যাপারে বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশিক নূর বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে উপকারভোগীদের হাতে ঘরের দলিলপত্র হস্তান্তর করা হলেও ঘরগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ, টিউবওয়েল স্থাপন, রঙ করা প্রভৃতি কাজ এখনো চলমান রয়েছে। আমরা কাজ সম্পূর্ণরুপে শেষ হবার আগেই সবগুলো সমস্যা পর্যালোচনা করে দেখে সমাধান করে দেবো।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *