মৌলভীবাজারের বড়লেখায় চিকিৎসা অবহেলায় সুমা রানী দাস (২১) নামে এক নারীর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠেছে। বড়লেখা পৌর শহরের হলি লাইফ স্পেশালাইজ্ড হসপিটালের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ।
নিহত সুমা বড়লেখা পৌরসভার তেলিগুল এলাকার মোহন দে’র স্ত্রী।
এ ঘটনায় সুমার স্বামী মোহন দে গত ২৮ জুন হলি লাইফ স্পেশালাইজ্ড হসপিটালের পরিচালকসহ ৩ জনের নাম উল্লেখ ও ৫জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে বড়লেখা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে অভিযোগ (সিআর ১৫৩/২১) দায়ের করেছেন।
অভিযুক্তরা হচ্ছেন- হাসপাতালের পরিচালক মৌসুমী কিবরিয়া ও একই হসপিটালে কর্মরত তার স্বামী চিকিৎসক নূর নবী রাজু ও ব্যবস্থাপক বিপুল কান্তি দাস।
আদালত দায়ের করা অভিযোগটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ২০ জুন সুমা রানী দাস কীটনাশক পান করেন। তাকে প্রথমে বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে হলি লাইফ স্পেশালাইজড হসপিটালে ভর্তি করা হয়। পরদিন ২১ জুন অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিলেট নেওয়া হয়। এরপর ইবনে সিনা হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে (সুমা) মৃত ঘোষণা করেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, সুমা রানী দাস মানসিকভাবে অসুস্থ। গত ২০ জুন সকালে তিনি কীটনাশক পান করেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে তার স্বামী মোহন দে ও প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। ৪ নম্বর স্বাক্ষী অরুনাভ দে রাজুর সঙ্গে হলি লাইফ স্পেশালাইজ্ড হসপিটালের ব্যবস্থাপক বিপুল কান্তি দাসের পূর্ব পরিচয় থাকায় তিনি তার সঙ্গে কথা বলেন। এসময় বিপুল কান্তি দাস সুমাকে দ্রুত হলি লাইফে নিয়ে আসতে বলেন এবং তাদের এখানে ভালো চিকিৎসক ও যন্ত্রপাতি আছে বলে জানান। তখন সুমার স্বজনরা তাকে বড়লেখা পৌরশহরের হলি লাইফ স্পেশালাইজড হসপিটালে ভর্তি করেন। এরপর অভিযুক্তরা সুমাকে ভর্তি করে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরাক্ষা করে তার স্বামী মোহন দে-কে জানান তাকে সিলেটে নিয়ে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। সিলেটের চিকিৎসা তাদের এখানে হবে। পরদিন ২১ জুন তারা (অভিযুক্তরা) জানায় তাদের দ্বারা চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। সুমার অবস্থা খারাপ। তাকে দ্রুত সিলেট নিয়ে যেতে বলে। এসময় সুমার স্বামী মোহন দে অভিযুক্তদের কাছে ছাড়পত্র চাইলে তারা তাকে গালাগালি করে এবং হুমকি-ধমকি দেয়। পরে মোহন নিরুপায় হয়ে অ্যাম্বুলেন্স এনে সুমাকে সিলেট নিয়ে যাওয়ার জন্য রওয়ানা দেন। এসময় সুমার অবস্থার ক্রমেই অবনতি হতে থাকে। পরে সিলেট ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সুমা রানী দাসের স্বামী মোহন দে জানান, হলি লাইফ স্পেশালাইজ্ড হসপিটালের ডাক্তাররা (অভিযুক্তরা) আমাকে বলেছে আমার স্ত্রী সুমাকে সুস্থ করে তোলবে। তাকে সিলেটে নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি তাদের ওপর বিশ্বাস করে সুমাকে এখানে (হলি লাইফে) ভর্তি করেছি। সিলেট নিয়ে যাইনি। তারা আমার স্ত্রীকে ঠিকমতো চিকিৎসা দেয়নি। অবহেলা করেছে। এজন্য তার অবস্থা খারাপ হয়ে সে মারা গেছে। তা নাহলে হয়তো সিলেট নিয়ে গেলে তাকে বাঁচানো যেতো। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে হলি লাইফ স্পেশালাইজ্ড হসপিটালের পরিচালক মৌসুমী কিবরিয়ার স্বামী চিকিৎসক নূর নবী রাজুর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আপনি হাসপাতালের ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বললে এবিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
হলি লাইফ স্পেশালাইজ্ড হসপিটালের ব্যবস্থাপক বিপুল দাস হুমকি-ধমকির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ওই নারীর (সুমা) অবস্থা খারাপ হওয়ায় আমরা মানবিক কারণে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। পরদিন আমরা তাকে সিলেট নিয়ে যেতে বলি। হুমকি-ধমকি দেইনি।
বড়লেখা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) গোপাল চন্দ্র দত্ত মঙ্গলবার রাতে বলেন, চিকিৎসকের অবহেলায় সুমা রানী দাস নামে এক নারীর মৃত্যুর অভিযোগ এনে তার স্বামী মোহন দে হাসপাতালটির পরিচালকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত অভিযোগটি তদন্ত করে ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে পুলিশ ব্যুারো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
সূত্রঃ সিলেট টুডে