গোনাহমুক্ত পরিশুদ্ধ  স্বচ্ছ এবং সুন্দর জীবনের অনন্য উপায় আত্মসমালোচনা। কুরআন-সুন্নাহর বর্ণনায় আত্মসমালোনার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় সুস্পষ্ট। দুনিয়া ও পরকালীন জীবনের সফলতায় আত্মসমালোচনার বিকল্প নেই। তাই তো হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতেন-

حَاسِبُوا أَنْفُسَكُمْ قَبْلَ أَنْ تُحَاسَبُوا وَزِنُوا أَنْفُسَكُمْ قَبْلَ أَنْ تُوزَنُوا فَإِنَّهُ أَهْوَنُ عَلَيْكُمْ فِي الْحِسَابِ غَدًا أَنْ تُحَاسِبُوا أَنْفُسَكُمُ الْيَوْمَ ، وَتَزَيَّنُوا لِلْعَرْضِ الأَكْبَرِ ، يَوْمَئِذٍ تُعْرَضُونَ لا تَخْفَى مِنْكُمْ خَافِيَةٌ

‘(পরকালে) হিসেবের সম্মুখীন হওয়ার আগে তোমরা নিজরা নিজেদের (কাজের) হিসাব নাও এবং (পরকালে) তোমাদেরকে মাপার আগে তোমরা নিজেরা নিজেদের মেপে নাও। কেননা আজকের তোমার এই নিজে নিজে হিসাব-নিকাশ করাটা আগামী কালকে হিসাব দেওয়ার চেয়ে অনেক সহজ। আর তোমরা বড় পরীক্ষা দেয়ার সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তুত হও। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন-

يَوْمَئِذٍ تُعْرَضُونَ لا تَخْفَى مِنْكُمْ خَافِيَةٌ

সেদিন তোমাদের (আল্লাহর সামনে হিসাব-নিকাশ ও প্রতিদান প্রদানের জন্য) পেশ করা হবেতখন তোমাদের কোনো কিছুই গোপন থাকবে না।‘ (মুসান্নেফে ইবনে আবি শায়বামুয়াত্তা মালেক)

আত্মসমালোচনার গুরুত্ব

আত্মসমালোচনা জ্ঞানীদের কাজ। একটি আরবি প্রবাদে তা সুস্পষ্ট। প্রবাদটি হলো-

أبصر الناس من نظر إلى عيوبه

সবচেয়ে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন বা বিচক্ষণ মানুষ হলো ওই ব্যক্তি যে নিজের দোষ-ত্রুটি দেখে।

কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা মানুষকে নিজের কাজে প্রতি সতর্ক থাকার বিষয়টি একাধিক আয়াতে গুরুত্বসহকারে তুলে ধরেছেন-

১. اقْرَأْ كَتَابَكَ كَفَى بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ حَسِيبًا

‘পাঠ কর; তুমি তোমার কিতাব (আমলনামা)। আজ তোমার হিসাব গ্রহণের জন্যে তুমিই যথেষ্ট।’ (সুরা বনি-ইসরাঈল : আয়াত ১৪)

২. بَلِ الْإِنسَانُ عَلَىٰ نَفْسِهِ بَصِيرَةٌ

‘বরং মানুষ নিজেই নিজের ব্যাপারে খুব ভালো জানে।’ (সুরা কেয়ামাহ : আয়াত ১৪)

৩. يَوْمَئِذٍ تُعْرَضُونَ لا تَخْفَى مِنْكُمْ خَافِيَةٌ

সে দিন তোমাদেরকে (আল্লাহর সামনে হিসাব-নিকাশ ও প্রতিদান প্রদানের জন্য) পেশ করা হবেতখন তোমাদের কোনো কিছুই গোপন থাকবে না।’ (সুরা আল-হাক্কাহ : আয়াত ১৮)

আত্মসমালোচনা করবেন যেভাবে

১. যে কোনো আমল করার পর পর্যালোচনা করা যে, আমি কি আল্লাহর হক যথাযথভাবে আদায় করতে পেরেছি? বা আমলটা কি যেভাবে করা দরকার সেভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে? অতঃপর এ ক্ষেত্রে যদি ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়ে তাহলে আল্লাহর কাছে তওবা করে তা সংশোধন করা এবং পরবর্তীতে আরও সতর্ক হওয়া ও ভালোভাবে আমল করার চেষ্টা করা।

২. এ ছাড়া সামগ্রিক জীবনের দোষ-ত্রুটি, পাপাচার, আল্লাহর নাফরমানি, ব্যক্তি পরিবার ও সমাজ জীবনের সব দায়িত্ব-কর্তব্য, করণীয়-বর্জনীয় ইত্যাদি নিজে নিজে হিসাব করার পর নিজের দোষ-ত্রুটি সংশোধন করা, সে জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং আগামী দিনে আরও যত্নসহকারে ও সুন্দরভাবে আল্লাহর নির্দেশিত পথে জীবন পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।

মনে রাখতে হবে

যে কোনো আমল করার আগে আমল সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যে, এ আমলটি শিরক-বিদআতমুক্ত কিনা। আমলটি যথাযথভাবে হচ্ছে কিনা। কেননা সাওয়াবের নিয়েতে শিরক-বিদাআতের চর্চা নিজের অন্য ভালো কাজগুলোকে বরবাদ করে দেবে।

তাছড়াা আমল করার আগে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যকে একমাত্র ধ্যানজ্ঞান করা। আমলটি যেন কোনোভাবেই লোক দেখানো না হয়; সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, প্রতিদিন নিয়মিত নিজের আমল-ইবাদত ও কাজ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা তথা আত্মসমালোচনা চালিয়ে যাওয়া। এটি মানুষকে সঠিক পথের দিকে নিয়ে যাবে। সঠিকভাবে আত্মসমালোচনা করতে পারলে নিশ্চিতভাবে আশা যায় যে, তার দুনিয়ার জীবন যেমন সুন্দর হবে ঠিক তেমনি আখিরাতের জীবন হবে আরও বেশি সাফল্যমণ্ডিত।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নিজেদের দোষ-ত্রুটি ও ভুলগুলো থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। নিজেদের ভুলগুলো খুঁজে বের করে তা থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। সবাইকে সঠিক পথে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সূত্রঃ জাগো নিউজ ২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *