সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ঝিংগাবাড়ী ইউনিয়নের আগতালুক গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ্ব ৬ সন্তানের জননী বিধবা মহিলাকে যৌন হেনস্তার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় আরও এক আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর)জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর সেলফি ব্রীজের কাছ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আব্দুল জব্বার (২২)আগতালুক গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের পুত্র।

এর আগে গত বুধবার(১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম পিপিএম এবং ওসি (তদন্ত) জাহিদুল হকের নেতৃত্বে একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর এলাকা থেকে আগতালুক গ্রামের বরকত উল্লার পুত্র বড় আব্দুল্লাহ (৩৫), একই গ্রামের রফিক আহমদের পুত্র সায়েদ উল্লাহ (৩০) কে গ্রেফতার করে।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ আগস্ট ভয়ভীতি দেখিয়ে যৌন নির্যাতন ও হেনস্তা করে ৬ সন্তানের জননী পঞ্চাশোর্ধ্ব এক মহিলার আপত্তিকর ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে বখাটেরা। ওই দিন রাতে মহিলার পাকা ঘরের বারান্দার গ্রিলের ভিতরে ভিডিও ধারণ করে মহিলার নাতি একই বাড়ির আব্দুল্লাহ এবং এ কাজে তাকে সহযোগিতা করে একই বাড়ির জব্বার।

স্থানীয়রা জানান, গোষ্ঠী প্রথার দ্বন্দের জের ধরে গ্রামের এক পক্ষ সাবেক ইউপি সদস্য হারুন রশিদ ও অপরপক্ষ মাওলানা জসিম উদ্দিনের পাল্টাপাল্টি মামলা চলছে। মামলার আসামি হয়ে গ্রামের হারুন রশীদ গোষ্ঠীর বরকত উল্লাহর ছেলে বড় আব্দুল্লাহ ওই মহিলার বসতঘরে বিভিন্ন সময় রাত্রিযাপন করতেন। জমিজমা নিয়ে মহিলার পরিবারের সাথে একই বাড়ির সিরাজ উদ্দিনের ছেলে জব্বারদের বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে গত ২৩ আগস্ট রাতে মহিলার স্বামীর সম্পর্কে ভাতিজা আব্দুল্লাহ তার ঘরে রাতযাপন করতে গেলে এই সুযোগে জব্বার ও ছোট আব্দুল্লাহ মহিলার ঘরের দরজায় তালা মেরে রাখে।

একপর্যায়ে তারা এই মহিলাসহ বড় আব্দুল্লাহকে বলে, ‘তোমাদের আপত্তিকর ভিডিও আমরা ধারণ করেছি। ৩০ হাজার টাকা না দিলে ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দিব।’ একর্পযায়ে বড় আব্দুল্লাহকে তারা ফুসলিয়ে রাজি করিয়ে বলে, ‘তুমি মহিলার গায়ে জড়িয়ে ধরো, আমরা ভিডিও করে মোটা অংকের টাকা পাবো। সেই টাকা ৩ জন ভাগ করে নেবো।’ বড় আব্দুল্লাহ তাদের কথামতো ওই মহিলার বহু আকুতি-মিনতির পরও একপ্রকার বিবস্ত্র করে যৌন হেনস্তা করে এবং সেটি ছোট আব্দুল্লাহ ও জব্বার মোবাইলে ধারণ করে।

এদিকে, সামাজিক লজ্জার ভয়ে ঘটনার দিন মহিলা তাদেরকে ২০ হাজার টাকা দেন ভিডিও না প্রকাশ করার জন্য। এরপরও তারা মহিলার কাছে মোটা অংকের টাকা চায়। টাকা না দিলে ধারণকৃত ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দিবে বলে হুমকি দেয় তারা। তাদের সাথে পরে যুক্ত হয়ে সায়েদ উল্লাহ শালিস বসিয়ে তারা মহিলাকে তাদের দাবিকৃত মোটা অংকের টাকা দেওয়ার জন্য নানাভাবে হুমকি দিতে থাকে। একপর্যায়ে টাকা না পেয়ে ছোট আব্দুল্লাহ তার মোবাইলে ধারণকৃত এ মহিলার আপত্তিকর যৌন হেনস্তার ভিডিওটি গ্রামের অপর গোষ্ঠীর একজনের কাছে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে ফেলে।

মহিলাকে হেনস্তাকারী হারুন রশীদ গোষ্ঠীর লোক হওয়ায় মহিলাসহ ভিডিও ধারণকারীদের সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য গত রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) প্রথমে কয়কেটি ফেইক ফেসবুক আইডি থেকে ভিডিওটি আপলোড করা হয়। পরে অনেকে ঘটনার বিচার চেয়ে প্রতিবাদী পোস্ট দিতে শুরু করলে ভিডিওটি ব্যাপক ছড়িয়ে পড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *