ধর্মীয় নানা ব্যাখ্যায় বিজ্ঞানকে জড়িয়ে একের পর এক উদ্ভট বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসা মুফতি কাজী ইব্রাহীমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ডে দিয়েছে আদালত।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় বুধবার ঢাকার মহানগর হাকিম আবু সুফিয়ান মো. নোমান এ আদেশ দেন।

বুধবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের এসআই (নিরস্ত্র) মো. হাসানুজ্জামান আদালতে হাজির করার পর কাজী ইব্রাহীমকে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন।

বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকার মহানগর হাকিম আবু সুফিয়ান মো. নোমানের আদালতে রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি হয়।

আসামি পক্ষে আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক রিমান্ড বাতিল চেয়ে শুনানি করেন।

শুনানিতে তিনি বলেন, ‘কাজী ইব্রাহিম কোনো সাধারণ মানুষ নন। তিনি একটি ইনস্টিটিউট। তাই তাকে রিমান্ডে নিয়ে যা জিজ্ঞাসাবাদ করার তা ২৭ তারিখে তাকে গ্রেপ্তারের পরই করে ফেলেছে। নতুন করে কিছু জিজ্ঞাসাবাদের নাই।’

আইনজীবী বলেন, ‘তিনি সরকারের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছে সরকারের বিপক্ষে কোনো বক্তব্য দেন নাই। তিনি দেশ বা সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেননি।’

এ সময় বিচারক মুফতি ইব্রাহীমের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চান।

মুফতি ইব্রাহীম তখন বলেন, ‘আমরা ৫০ বছর আগে এ দেশের জন্য ৩০ লক্ষ মানুষের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও আমরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছি। আমরা এই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় জুলুম নির্যাতন চাই না। এই দেশের জন্য বঙ্গবন্ধু তার শেষ রক্তবিন্দু বিসর্জন দিয়েছেন।’

রাষ্ট্রপক্ষে রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন ঢাকা মহানগর আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন।

তিনি বলেন, ‘কাজী ইব্রাহিম ফেসবুক লাইভে এসে এ দেশের সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে হেয় করে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র-এর সঙ্গে তুলনা করে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। তাই তাকে ১০ দিনের রিমান্ড দেয়ার আবেদন করছি। এ দেশের বাহিনীর সদস্যদের র-এর সঙ্গে তুলনা করে জঘন্যতম অপরাধ করেছেন তিনি। তাই তাকে রিমান্ডে নিয়ে সব ষড়যন্ত্রের বিষয় উদঘাটন করা প্রয়োজন।’

মুফতি ইব্রাহীম এ সময় জাতীয় সঙ্গীতের অংশ বিশেষ কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে উচ্চারণ করতে থাকেন।

উভয় পক্ষের বক্তব্য শেষে বিচারক তার দুই দিনের রিমান্ড আদেশ দেন। সেই সঙ্গে রিমান্ড পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে কার্যকর করার কথাও আদেশে উল্লেখ করেন।

হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে তাকে সাবধানে আনা-নেয়া ও জিজ্ঞাসাবাদের আদেশও দেয় আদালত।

এ সময় মুফতি ইব্রাহীমের স্ত্রী শরীফা বেগম তার এক কিশোর ছেলেকে নিয়ে আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যমগুলোতে নানা সময়ে বিজ্ঞান ও ইসলামকে জড়িয়ে নানা উদ্ভট বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসেন মুফতি ইব্রাহীম।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করোনাভাইরাস নিয়ে নানা গুজব ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এমন সব অভিযোগে সোমবার রাত ১টার পর মুফতি ইব্রাহীম তার ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে আসেন। প্রায় ২০ মিনিটের লাইভে তিনি অভিযোগ করেন, মোহাম্মদপুর জাকির হোসেন রোডে তার বাসায় সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। তিনি আশপাশের সবাইকে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসতে বলেন।

মঙ্গলবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ- ডিবির পক্ষ থেকে থেকে জানানো হয়, সোমবার রাত ২টার দিকে ডিবির একটি বিশেষ দল ইব্রাহীমকে মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে আটক করেছে।

মঙ্গলবার তার নামে অর্থ আত্মসাত ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি মামলা করা হয়।

জেড এম রানা নামের এক ব্যক্তি মঙ্গলবার রাতে প্রতারণার মামলাটি করেন। আর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাটি করা হয়েছে ডিবির পক্ষ থেকে।

রানার করা মামলায় একটি স্কুলের টাকা আত্মসাত, চাঁদা দাবি ও প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *