কুশিয়ারা নদীর ভাঙনে ফসলি জমি হারিয়েছেন অনেক আগেই। সহায় সম্বল হারিয়ে কোনোমতে নদীর তীরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছিলেন গোলাপগঞ্জের ভাদেশ্বর ইউনিয়নের শেখপুর কৃষক সাদ উদ্দিন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিষ্ঠুর কুশিয়ারা তার মাথার গোঁজার ঠাঁইটাও কেড়ে নিলো।

গত রোববার হঠাৎ নদীগর্ভে চলে যায় সাদ উদ্দিনের বসতভিটে। শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে আজ তিনি নিঃশ্ব, দিশেহারা। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন অনত্র।

শুধু সাদ উদ্দিন নয় শেখ গ্রামের কুশিয়ারা তীরবর্তী অনেক পরিবার নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বসতভিটা ঘর-বাড়ি হারিয়ে নিঃশ্ব হয়ে অন্যত্র বসবাস করছেন। আবার অনেকের দিন রাত কাটে ভয়ে ভয়ে, কখন জানি কুশিয়াররা ভয়াল থাবায় পড়তে হয় তাদের।

সরেজমিন কুশিয়ারা তীরবর্তী শেখপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সাদ উদ্দিনের অর্ধেক বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

এলাকাবাসী জানান, শুধু ঘরবাড়ি নয়, নদী তীরবর্তী মসজিদ মাদ্রাসাসহ অনেক ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও রয়েছে নদী ভাঙনের কবলে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভাদেশ্বর ইউনিয়নের শুধু শেখপুর গ্রাম নয় কুশিয়ারার নদীভাঙনের কবলে রয়েছে এ ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী ফতেহপুর, গোয়াসপুর, শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের মেহেরপুর, খাটকাই, পানিয়াগা, কদুপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম। এসব গ্রাম গুলোর মানুষ প্রতিনিয়ত আতংকের মধ্যে দিন কাটান। কখন জানি তাদের ফসলি জমি, মাথা গোঁজার ঠাঁই নদীগর্ভে চলে যায়।

এলাকাবাসী জানান, কুশিয়ারা তীরবর্তী শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের খাটকাই-মেহেরপুরের সড়কটি নদী ভাঙ্গনে বিলীন হওয়ার পথে। এতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন স্থানীয় লোকজন। ইতিমধ্যেই পনাইচক জামে মসজিদ ও উচ্চ বিদ্যালয়ের পার্শবর্তী রাস্তাটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ রাস্তাটি নদী গর্ভে চলে যাওয়ায় বিপাকে রয়েছেন পনাইরচক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ এলাকার শত শত লোক। পনাইরচক স্কুলের নিকটবর্তী রাস্তাটি নদীগর্ভে চলে গেছে। নদী ভাঙ্গনে হুমকির মুখে রয়েছে ওই এলাকার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ পনাইরচক উচ্চ বিদ্যালয়।

এছাড়া খাটকাই-পনাইচক গ্রামের অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়েছেন ঘরবাড়ি হারিয়ে। নদী তীরবর্তী ফসলের জমি হারিয়ে কৃষকরা হয়ে পড়েছেন একেবারে নিঃশ্ব। এছাড়া মেহেরপুর বাজার (কালাবাজার), কাদিপুর বাজার, নয়া বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজারের দোকানপাঠ কুশিয়ারা নদীতে ইতোমধ্যে ধসে পড়েছে।

রাক্ষুসী কুশিয়ারা নদী ভাঙ্গনের ফলে ভাদেশ্বরের শেখপুর এলাকার বেশ কয়েকটি কৃষক পরিবার বসতভিটে ঘরবাড়ি হারিয়ে বসবাস করছেন এখন অন্যের বাড়িতে। সর্বশেষ রোববার বিকেলে হঠাৎ করে শা শা শব্দে শেখপুর গ্রামের কৃষক সাদ উদ্দিনের বসত বাড়ির বড় একটি অংশ কুশিয়ারা নদীতে তলিয়ে গেছে। এসময় বাড়ির অপরাংশে দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। যে কোন সময় এ অংশটি নদীতে তলিয়ে যাওয়ার ভয়ে তিনি পরিবার নিয়ে চলে গেছেন অন্যত্র।

শেখপুর গ্রামের বিশিষ্ট সমাজসেবী নুরুল আম্বিয়া মঙ্গলবার জানান, শুধু সাদ উদ্দিন নয়, শেখপুর গ্রামের অনেক লোকজন ঘরবাড়ি ও বসতভিটে হারিয়ে অন্যত্র বসবাস করছেন। তিনি কয়েকটি অসহায় পরিবারকে আশ্রয়ও দিয়েছেন বলে জানান।

এই গ্রামের কৃষক কটাই মিয়া জানান, আমার ঘরবাড়ি জমজামা সব চলে গেছে কুশিয়ারা নদীর গর্ভে। সব কিছু হারিয়ে আমি বসবাস করছি অন্যের বাড়িতে’।

রসন্দ্র বাবু আক্ষেপ করে জানান, আমার প্রায় এক কিয়ার (৩০ ডেমিসেল) ভূমির ওপর ঘরবাড়ি ছিল। এখন কিছুই নেই। সব তলিয়ে গেছে কুশিয়ারা নদীর পেটে। এখন আমার বসবাসের একমাত্র সমম্বল একটি ছোট মাটির ঘর রয়েছে। কোন সময় সেটি তলিয়ে যায় এ আতংকে থাকি আমরা। এ কারণে রাতে আমরা ভয়ে ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনা।

মীরগঞ্জ বাজারের ব্যবসাযী লুৎফুর রহমান জানান নদীতে ব্লক না থাকার ফলে ভাদেশ্বরের বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক ঘরবাড়ি ফসলী জমি নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। এতে নিঃশ্ব হয়ে পড়ছে অসহায় লোকজন। এ অঞ্চের ঐতিহ্যবাহী মীরগঞ্জ বাজার, মেহেরপুর বাজার নদীভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে।

শরিফগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম কবির উদ্দিন জানান, শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের কুশিয়ারা অঞ্চলের নদীভাঙ্গন প্রখর আকার ধারণ করেছে। এরজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরাদ্দের প্রয়োজন। ইউনিয়নের পক্ষ থেকে যতটুকু করার আমি করবো। তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. গোলাম কবির বলেন, নদী ভাঙ্গনের ব্যপারে আবেদন দিলে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ভাঙ্গনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *