সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজারের তরুণ মোহাম্মদ রোমান বছর পাঁচেক আগে ইউক্রেন যান পড়াশোনা করতে। থাকেন নিপের নদীতীরের ছোট্ট শহর নিকপোলে। বয়স ২৮ বছর। স্ত্রী-সন্তান নেই। ঝাড়া হাত-পা। পোল্যান্ডে নিরাপদ আশ্রয় নিতে পারতেন। কিন্তু নিকপোলে আটকে পড়া বাংলাদেশি এক নারী ও তার সন্তানকে ফেলে যাবেন না বলে যুদ্ধপীড়িত ইউক্রেনে রয়ে গেছেন তিনি।

নিকপোলে রোমান ছাড়াও বাংলাদেশি আছেন আরও তিনজন- আবদুর রহমান, তার স্ত্রী আজমেরি রহমান ও তাদের চার বছর বয়সী সন্তান। আবদুর রহমান রোমানের সহকর্মী। ব্যবসার কাজে রয়েছেন পোল্যান্ডে। রাশিয়ার হামলা শুরু হওয়ায় ফিরতে পারেননি স্ত্রী-সন্তানের কাছে। রোমান দায়িত্ব নিয়েছেন তাদের পোল্যান্ডে পৌঁছে দেবেন। স্বদেশি বোনকে বিদেশ বিভুঁইয়ে যুদ্ধের ময়দানে একা ফেলে যাবেন না।

ইউক্রেনে আটকা পড়া বাংলাদেশিদের ১৫ দিনের ভিসা দিয়ে আশ্রয় দিচ্ছে পাশের দেশ পোল্যান্ড। শনিবার ভোরে ট্যাক্সিতে ৯১৫ কিলোমিটার দূরের লিভিভ সীমান্ত হয়ে পোল্যান্ড যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল রোমানের। কিন্তু স্বদেশি বোন ও তার শিশুসন্তানকে ট্যাক্সিতে নিয়ে যাওয়া নিরাপদ নয় বলে ট্যাপি ধরেননি। রয়ে গেছেন নিকপোলে। সমকালকে বলেছেন, যা হওয়ার হবে। কিন্তু একজন বাংলাদেশি নারীকে এভাবে একা বিপদের মধ্যে ফেলে যেতে পারেন না। গেলে এক সঙ্গেই যাবেন।

শনিবার বাংলাদেশ সময় দুপুরে এক লাইভের মাধ্যমে নিকপোলের স্তব্ধ জীবন ও রাস্তাঘাট দেখান মোহাম্মদ রোমান। এসময় বলেন, নিকের নদীর মতোই শান্ত এই মফস্বল শহরের জীবন। কোনো সামরিক ঘাঁটি নেই। ফলে এখানে হামলা হয়নি। প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরের বড় শহর জাপরিজহিয়ায় ব্যাপক হামলা হয়েছে। মিসাইল, গোলার শব্দ নিকপোল থেকে শোনা গেছে।

হামলা না হলেও নিকপোল শহর এখন আতঙ্কের জনপথ। যে কোনো সময় রাশিয়ার সেনাবাহিনী আসতে পারে- এ আতঙ্ক বিরাজ করছে। লাইভে যুক্ত হওয়ার মিনিট কয়েক আগেও রোমান বললেন, ঘরের বাইরে থাকা নিরাপদ নয়। যে কোনো সময় আর্মি চলে আসতে পারে। শুক্রবার পর্যন্ত ট্রেন-বাস চললেও এখন তাও বন্ধ। ইউক্রেন ছাড়ার সুযোগ কমে আসছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *