ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত যুবক মো. তায়িব (১৮)। ইউক্রেনের হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন তিনি। কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে। মঙ্গলবার (১ মার্চ) সন্ধ্যায় ইউক্রেন থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপে তায়িবের যুদ্ধে অংশগ্রহণের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন তার বাবা আয়ুবুর রহমান ওরফে মোহাম্মদ হাবিব।

তায়িবের বাবা মোহাম্মদ হাবিবের বাড়ি গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার পাবুর গ্রামে। তার বাবা মৃত সামির উদ্দিন। কাপাসিয়ায় তার গ্রামের বাড়িতে কেউই থাকেন না। স্বজনদের খোঁজ করতে গেলে পাওয়া যায় তার ভাগ্নে মোক্তাদিরকে। তিনিই হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দেন মো. হাবিবের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর আমি ইউক্রেনে আসি। এখানে বিয়ে করে সংসার শুরু করি। আমার দুই ছেলে, মোহাম্মদ তায়িব ও মোহাম্মদ কারিম। ২০ বছর আগে আমি ইউক্রেনের পাসপোর্ট পাই। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের নিপ্রস্কি জেলায় ত্রিশ বছর ধরে বসবাস করছি। এখানে আমার তৈরি পোশাকের ব্যবসা রয়েছে। তুর্কি প্যান্ট, শার্ট-জ্যাকেট বিক্রি করি আমি।

বড় ছেলে ১৮ বছর বয়সী মোহাম্মদ তায়িব ইউক্রেনের হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে গেছে জানিয়ে মোহাম্মদ হাবিব বলেন, তায়িব শহরের কিয়েভেস্কি টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। রাশিয়া যেদিন বোম্বিং শুরু করে ওইদিন সকালেই সে যুদ্ধে চলে যায়। যুদ্ধে যাওয়ার আগে তায়িব বলে, ‘রাশিয়া আমাদের দেশটাকে ধ্বংস করে ফেলছে। দেশে শত্রু ঢুকেছে, আমি আর ঘরে বসে থাকব না, আমি অস্ত্র ধরব। আমি এই দেশের নাগরিক, সুতরাং এটা আমার নৈতিক দায়িত্ব। আমি আমার দায়িত্ব পালন করব। আমি আর সহ্য করতে পারছি না।’

মোহাম্মদ হাবিব আরও বলেন, আমি ও আমার স্ত্রী তাকে অনেক বারণ করেছি। কিন্তু সে আমাদের কথা মানেনি। সে বলেছে, তোমরা আমাকে বারণ করো না। তোমরা আমার জন্য দোয়া করো। এই মুহুর্তে আমি আর ঘরে বসে থাকতে পারব না। কারণ আমার এটা কর্তব্য ও দায়িত্ব। আমার ওপর এটা ফরজ হয়ে গেছে। দেশ শত্রুমুক্ত করতে হবে। আমি যখন বাড়িতে আসব, তখন আমি বীরের বেশে আসব।

মো. হাবীব জানান, রাশিয়া ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো দখল করে নিচ্ছে। তারা অনেক সাধারণ মানুষ মেরে ফেলছে। বসতবাড়ি ধ্বংস করে দিচ্ছে, সরকারি স্থাপনা ধ্বংস করে দিচ্ছে। কোনো কিছুই বাদ যাচ্ছে না। শিশু ও নারী-পুরুষ সবাই মারা যাচ্ছে। বাড়িঘরে বোম্বিং করে, রকেট মেরে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এই দেশে একটা কেয়ামত চলছে।

যুদ্ধে যাওয়ার পর তায়িব টেলিফোন করেছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি জানান, যখন অ্যাটাকে থাকে, তখন টেলিফোন করে না। তখন টেলিফোন সব বন্ধ থাকে। মাঝে মধ্যে যখন খাবার-দাবার ও বিশ্রামের সময় পায় তখন সে ফোন করে, দুই চার মিনিট কথা বলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *