মৌলভীবাজারের বড়লেখায় পল্লী বিদ্যুতের লোডশেডিং কোনোভাবেই থামছে না। গত কয়েকদিন থেকে তা প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে তারাবি ও সেহরির সময় বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। ফলে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে গ্রাহকদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটছে। এতে গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। 

এদিকে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের দাবি, বড়লেখায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। গত কয়েকদিন থেকে ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। একারণে গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ছিঁড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টি না হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকছে।  

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৈশাখের শুরু থেকেই বড়লেখা উপজেলায় লোডশেডিং শুরু হয়েছে। গড়ে প্রতিদিন দিনে-রাতে ৮-১০ বার বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করছে। বিশেষ করে তারাবি ও সেহরির সময় বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। কোনো কারণ ছাড়াই লোডশেডিং হচ্ছে। একটু বাতাস কিংবা বৃষ্টি হলেই উধাও হয়ে যায় বিদ্যুৎ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও সংযোগ পাওয়া যায় না। আবার সংযোগ দিলেও কিছুক্ষণ পর তা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এই অবস্থায় গ্রাহকরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। তারা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন।   

পৌর এলাকার বাসিন্দা প্রবাসী মনসুর আহমদ তানিম বলেন, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ঘাটতি নেই। অথচ বড়লেখায় গত দুই সপ্তাহ থেকে গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লোডশেডিং হচ্ছে। বিশেষ করে তারাবিহ ও সেহরির সময় বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করছে। অতীতে এরকম লোডশেডিং হয়নি। আমরা ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের প্রতিকার চাই। 

গৃহিনী তামান্না আক্তার বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে ফ্রিজের খাবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পানি তোলা যাচ্ছে না। গরমে রাতে ঘুমানো যাচ্ছে না

বড়লেখা সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তাজিয়া করিম বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে তারা ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারছি না।   

পৌর শহরের কাপড় ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বলেন, সারা বছরের মধ্যে ঈদে আমাদের একটু বেচাকেনা হয়। কিন্তু এবছর সীমাহীন লোডশেডিং হচ্ছে। যার কারণে আমাদের বেচাকেনা ব্যাহত হচ্ছে। 

পাখিয়ালা এলাকার ব্যবসায়ী শাহরিয়ার ফাহিম বলেন, প্রতিদিন ৮-১০ বার লোডশেডিং হচ্ছে। একটু বাতাস কিংবা বৃষ্টি হলেই উধাও হয়ে যায় বিদ্যুৎ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যায় না।  

কাঠালতলী এলাকার দর্জি মুহিবুর রহমান বলেন, আমার দোকানে বিদ্যুৎ দিয়ে সেলাই মেশিন চালাতে হয়। দুদিন পরে ঈদ। হাতে অনেক কাজ। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে।   

একই এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণ জানতে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে কল দিলে তারা (কর্তৃপক্ষ) লাইন ছিঁড়ে যাওয়ার অজুহাত দেখায়। অথচ সারা বছর দেখি গাছের ডালপালা কেটে দেওয়া হয়। তারপরও কেমনে গাছ পড়ে লাইন ছিঁড়ে যায় তা আমাদের বুঝে আসে না। অভিযোগ কেন্দ্রে যোগাযোগ করেও কোনো প্রতিকার মিলছে না।  

ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণ জানতে চাইলে পল্লী বিদ্যুতের বড়লেখা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এমাজ উদ্দিন সরদার মুঠোফোনে বলেন, বড়লেখায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। বৈশাখের শুরু থেকে বড়লেখায় ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। একারণে বিভিন্নস্থানে গাছপাল পড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ছিঁড়ে যাচ্ছে। যার কারণে কিছু সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়। পরে লাইনের কাজ শেষে হলেই বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হচ্ছে। কারণ ঝড়ের সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ না রাখলে পরে কোথাও গাছ পড়ে লাইন ছিঁড়ে গিয়ে বিদ্যুৎ¯পৃষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ঝড়-বৃষ্টি না হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে। সবসময় যে লোডিশেডিং হচ্ছে তা ঠিক নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *