দুয়ারে এসে হাজির পবিত্র রমজান মাস। চাঁদ দেখাসাপেক্ষে আগামী রবি অথবা সোমবার থেকে রোজার প্রথম দিন। রমজান উপলক্ষে এক সপ্তাহ আগে থেকেই রোজার আঁচ পড়ছে নিত্যপণ্যের বাজারে। সরকারের নানা পদক্ষেপ গ্রহণের পরও স্বস্তি নেই নিত্যপণ্যের দামে। সিলেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মধ্যে পেঁয়াজ আর আলু ছাড়া আর সবকিছুর দামেই অস্বস্তি।

এরই মাঝে সিলেটে সোয়াবিন তেলের কোম্পানিগুলোর ডিলারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠেছে- অর্ডার অনুযায়ী দোকানগুলোতে মাল দিচ্ছেন না ডিলাররা। সিলেটের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (৩১ মর্চ) সকাল থেকে সোয়াবিন কোম্পানিগুলোর ডিলাররা অর্ডার অনুযায়ী মাল দিচ্ছে না। বলছেন- মাল কম। এই অবস্থা আজ শুক্রবারও। ডিলারদের বিরুদ্ধে ফের কৃত্রিম সংকট তৈরির অভিযোগ করছেন ব্যবসায়ীরা।

নিত্যপণ্যের দামের বিষয়ে সিলেটের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত কদিনে ডালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫-১০ টাকা। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে চিনি ও তেলসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। আগে থেকে চড়া দামে বিক্রি হওয়া চালের দাম রোজা শুরুর আগে আরও কিছুটা বেড়েছে। ফলে সিলেটে চালের বাড়তি দামে নাভিশ্বাস উঠেছে স্বল্প আয়ের মানুষের।

জানা গেছে, সিলেটে রোজা ঘিরে একমাস আগে থেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে। রোজায় ইফতারের অন্যতম উপকরণ ছোলা, বুটের ডাল, খেজুরের পাশাপাশি চাল, আটা, ময়দা দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। গত কদিনে ছোলা, বুটের ডাল, বেসনের দামও বেড়েছে। চালের বাজারও ঊর্ধ্বমুখী।

এদিকে তেলের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে সরকার সম্প্রতি ভোজ্যতেল আমদানির ওপর ১০ শতাংশ মূল্যসংযোজন কর (ভ্যাট) কমিয়েছে। কিন্তু তার খুব একটা প্রভাব পড়েনি তেলের বাজারে। এখনো অস্বাভাবিক দামেই বিক্রি হচ্ছে খোলা ও বোতলজাত সয়াবিন তেল।

সিলেটের বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোটা চাল এখন বাজারে ৪০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। মান অনুযায়ী চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৭০ টাকা। মাসখানেক আগেও চালের কেজি সর্বনিম্ন ৩৫ টাকা ছিলো।

চালের এ বাড়তি দামের পাশাপাশি সিলেটে গত কদিনে ছোলা, বুটের ডাল, মশুরের ডালসহ বেসনের দাম বেড়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে ছোলার দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে এখন ৭৫ টাকা। বুটের ডালের দামও কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে এখন ৭৫ টাকা। কদিন আগেও ৯০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ছোট দানার মশুর ডালের দাম বেড়ে হয়েছে ১০০ টাকা। মাঝারি দানার মশুর ডালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকা, যা কিছুদিন আগেও ছিল ৮০-৮৫ টাকা কেজি।

অপরদিকে বুটের ডালের বেসন বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা কেজি, যা কিছুদিন আগে ছিল ৮০-৯০ টাকার মধ্যে। আর খেসারির ডালের বেসন বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা কেজি, যা কিছুদিন আগে ছিল ৬৫ টাকার মধ্যে। গত কদিনে আটা ও ময়দার দাম নতুন করে বাড়েনি। তবে আগে থেকেই বাড়তি দামে বিক্রি হওয়া আটা-ময়দা ক্রেতাদের খুব একটা স্বস্তি দিচ্ছে না। বাজারে খোলা আটার কেজি এখন ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং ময়দার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা দরে।

ভোজ্যতেল আমদানিতে সরকার ১০ শতাংশ ভ্যাট কমালেও এখনো আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। বোতলজাত ৫ লিটার সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৭৯০ থেকে ৮০০ টাকা এবং এক লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা।

রোজার মাসে ইফতারির অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ খেজুরের দামও নতুন করে বেড়েছে। গত কদিনে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে খেজুরের দাম। মান অনুযায়ী খেজুরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। অন্যান্য নিত্যপণ্যের মধ্যে চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭৫, দুধ ৬২০, আদা ৭৫-৫০ ও রসুন ১১৫-১৪০ টাকা কেজিতে। এ অবস্থায় নিম্ন আয়ের মানুষের উঠছে নাভিশ্বাস। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

তবে সিলেটে নিম্ন আয়ের ক্রেতাদের নাভিশ্বাসের বাজারে স্বস্তি দিচ্ছে শুধু পেঁয়াজ। মানভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা। নতুন করে দাম বাড়েনি আলুরও। গত বেশ কিছুদিন ধরে ১৫-১৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে আলু।

নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকার বিষয়ে সিলেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজার এক-দুই বাকি। তাই সবাই এখন রোজার কেনাকাটা করছে। রোজার কারণেই নিত্যপণ্যের দাম একটু বেশি। রোজা শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যে দাম কমতে পারে।

সূত্রঃ সিলেট ভিউ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *