সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের শ্রীধরপাশা গ্রামের কৃষক তরিকুল ইসলাম। জমি বিক্রি করে ছেলে একুয়ান ইসলামকে (১৯) বিদেশ পাঠিয়েছিলেন। বাবা স্বপ্ন দেখেছিলেন ছেলে বিদেশে গেলে সংসারে স্বচ্ছলতা আসবে। কিন্তু সংসারে স্বচ্ছলতা আর হয়নি। তিন মাস পর লাশ হয়ে ছেলে বাড়ি ফিরেছে। অথচ তার যাওয়ার কথা ছিল ইতালি। এর জন্য দালালকে ১৯ লাখ টাকা দিয়েছিলেন তরিকুল।

আজ শুক্রবার একুয়ানের মরদেহ গ্রামে এলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

এলাকাবাসী ও একুয়ানের পরিবারের লোকজন জানান, গত বছরের মার্চে একই গ্রামের লিবিয়া প্রবাসী আলী হোসেনের মাধ্যমে ৪ লাখ টাকায় সে দেশে যান একুয়ান। সেখানে পৌঁছার পর দালাল চক্র তাকে আটক করে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। সেখান থেকে ছেলের একটি হাড় জিরজিরে ছবি পাঠিয়ে টাকা দাবি করা হয়। ছেলের প্রাণ রক্ষা করার জন্য মাফিয়াদের টাকা দিতে হবে বলে জানান আলী হোসেন। কথা মতো ১০ লাখ টাকা পাঠায় একুয়ানের পরিবার। পরে আরও ৫ লাখ টাকা দিয়ে তাকে ইতালি পাঠানোর চুক্তি হয় দালাল আলী হোসের সঙ্গে। গত ১৬ জুন সাগরপথে ইতালি যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় একুয়ানের। এ খবর জানার পর ভেঙে পড়েন পরিবারের লোকজন।

এরপর থেকেই দালাল আলী হোসেনের বাবা-মা গ্রাম ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় একুয়ানের মরদেহ দেশে আসে। আজ বিকেলে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্তের পর গ্রামের বাড়িতে আসে তার মরদেহ।

একুয়ানের বাবা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘জায়গা জমি সব বিক্রি করে করে তিন কিস্তিতে দালাল আলী হোসেনের বাবা আবুল মিয়া ও মা আসমা বেগমের কাছে ১৯ লাখ টাকা দেই। আমার ছেলেকে অমানবিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের কাছে সাক্ষ্য প্রমাণ রয়েছে। আমি দালাল আবুল ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করব।’

একুয়ানের চাচা ফজলু মিয়া বলেন, ‘দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে একুয়ান ছিল সবার বড়। অভাবের সংসারে সচ্ছলতা আনতে দালালদের প্ররোচনায় জমি বিক্রি করে লিবিয়া যায়। সেখানে তাকে মারধর করে। মাফিয়া চক্রের কাছ থেকে তাকে বাঁচাতে ১০ লাখ টাকা এবং ইতালি পাঠানোর জন্য আরও ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু লাশ হয়ে ফিরল সে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।’

এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ‘একুয়ানের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *