বিয়ানীবাজার গ্যাসক্ষেত্রের পরিত্যক্ত ১ নম্বর কূপ থেকে প্রতিদিন আট মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় সঞ্চালন লাইনে সরবরাহ শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে জাতীয় সঞ্চালন লাইনে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। যা জাতীয় সঞ্চালন লাইনের ২০২২ সালের সর্বশেষ গ্যাস সংযোজন। এরপর চলতি বছরে আর কোন কূপ থেকে নতুন করে গ্যাস যুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই বলে জানান দায়িত্বশীলরা।

রোববার রাতে কারিগরি দিক পর্যালোচনার পর থেকে গ্যাস লাইনের বর্র্জ্র পরিস্কার করার কাজ শুরু করেন দায়িত্বশীলরা। ধারণা ছিল সোমবার দুপুরের মধ্যে জাতীয় সঞ্চালন লাইনে গ্যাস সরবরাহ শুরু করার উপযোগী করা সম্ভব হবে। কিন্তু লাইনের বর্জ্র পুরোপুরি পরিস্কার হয় দুপুর ২টার পর। এ বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীলদের অবহিত করার পর জাতীয় সঞ্চালন লাইনে গ্যাস সরবরাহ করার অনুমোদন আসে। পরে সন্ধ্যায় সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহম নের উপস্থিতিতে ৬টা ১০ মিনিটে জাতীয় সঞ্চালন লাইনে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রভাহের সাথে গ্যাসের চাপ রয়েছে ৩৩৯০ পিএসআই। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (এলপিএম) প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার বিশ্বাস ও বিয়ানীবাজার গ্যাস ক্ষেত্রে উপ ব্যবস্থাপক আনোয়ার কবির।

এসজিএফএল সূত্রে জানা গেছে, বিয়ানীবাজার গ্যাস ক্ষেত্রের ১ নম্বর কূপ থেকে ১৯৯১ সালে গ্যাস তোলা শুরু হয়। ২০১৪ সালে তা বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৬ সালে আবার উত্তোলন শুরু হলেও ওই বছরের শেষ দিকে আবারও তা বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৭ সাল থেকে কূপটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। এরপর বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন (বাপেক্স) ওই কূপে অনুসন্ধান কাজ চালিয়ে গ্যাসের মজুদ পায়। পরবর্তীতে বাপেক্সের কারিগরি সহায়তায় গত ১০ সেপ্টেম্বর ওই কূপে নতুন করে পুনঃখনন কাজ (ওয়ার্ক ওভার) শুরু করা হয়। কূপে গ্যাস প্রাপ্তি নিশ্চিতের পর গত ১৭ নভেম্বর থেকে গ্যাসের চাপ পরীক্ষা শেষে কূপ থেকে দ্রুত জাতীয় সঞ্চালন লাইনে গ্যাস দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়।

সিলেট গ্যাস ফিল্ডের ব্যবস্থাপন মো. মিজানুর রহমান বলেন, সিলেট গ্যাস ফিল্ডের মাধ্যমে ৬টি নতুন কূপ খনন এবং ৮টি কূপের ওয়ার্ক ওভারের পরিকল্পনার মাধ্যমে ১৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট নতুন গ্যাস বৃদ্ধি করার আমাদের পরিকল্পনা আছে। তারই অংশ হিসেবে বিয়ানীবাজার গ্যাস ক্ষেত্রের ১নং কূপের ওয়ার্ক ওভার বাপেক্ষের মাধ্যমে করা হয়েছে। গ্যাসের চাপ রয়েছে ৩২৭৫ পিএস যা দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চাপ। উল্লেখ যোগ্য বিষয় হচ্ছে এখান থেকে আমরা ১৮ ব্যারেল কনডেন্স গ্যাস পরিলক্তিত হচ্ছে। তিনি বলেন, বিয়ানীবাজার গ্যাস ক্ষেত্রে ১নং কূপে ৮ মিলিয়ন এবং ২ নং কূপে ৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দৈনিক জাতীয় সঞ্চালন লাইনে যুক্ত হচ্ছে। এভাবে গ্যাস সরবরাহ করলে এ দুই কূপ থেকে আগামী ১০ বছর পর্যন্ত জাতীয় সঞ্চালন লাইনে গাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

গ্যাস সংকটের এ সময়ে বিয়ানীবাজার গ্যাস ক্ষেত্রের পরিত্যক্ত কূপ থেকে ওয়ার্ক ওভার শেষে ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় সঞ্চালন লাইনে যুক্ত হচ্ছে এটি বড় দেশের সুখবর করে মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিয়ানীবাজার গ্যাস ফিল্ডের ১ নম্বর কূপে গ্যাস পাওয়া পর আনুষঙ্গিক কাজ দ্রুত শেষ করে জাতীয় সঞ্চালন লাইনে সরবরাহের জন্য বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় নির্দেশনা পাওয়ার পর আমরা সেইভাবে কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছি। প্রতিমন্ত্রী মহোদয় ও সিনিয়র সচীব স্যারের দিক নির্দেশনায় আমরা সফলভাবে কাজটি দ্রুত করতে পেরেছি।’ তিনি বলেন, বিয়ানীবাজার উপজেলার ১৯১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে থ্রিডি সেসমিক জরিপ চলছে। সেই জরিপ বর্তমানে অনেকটা শেষ পর্যায়ে। আরো কিছুদিন পরে আমরা দেশবাসীকে সুখবর দিতে পারবো। নতুন জরিপ শেষ হলে তিনের অধিক কূপের সন্ধ্যান পাওয়া যাবে বলে আমরা অনুমান করছি। আমাদের জরিপে পুরো বিয়ানীবাজার এলাকায় গ্যাস রয়েছে।’

বিয়ানীবাজার গ্যাস ক্ষেত্রের ১নং কূপের ৩ হাজার ২৫৪ মিটার গভীরে ৭০ বিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস মজুত আছে। দুই কূপ মিলিয়ে ১০০ বিলিয়ন ঘনফুটের কাছাকাছি গ্যাস মজুত রয়েছে। গ্যাসের চাপ পরীক্ষার পর দেখা গেছে কূপটি দৈনিক ১০ থেকে ১১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে সক্ষম। তবে কারিগরি বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে দৈনিক আট মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এতে দৈনিক ১৮ ব্যারেল কনডেন্স গ্যাস পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন দায়িত্বশীলরা।

বর্তমানে এসজিএফএলের আওতায় পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র আছে। এগুলো হলো হরিপুর গ্যাস ফিল্ড, রশিদপুর গ্যাস ফিল্ড, ছাতক গ্যাস ফিল্ড, কৈলাশটিলা গ্যাস ফিল্ড ও বিয়ানীবাজার গ্যাস ফিল্ড। এর মধ্যে ছাতক গ্যাস ফিল্ড পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। বাকিগুলোর ১২টি কূপ থেকে বর্তমানে প্রতিদিন ৯১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *