সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার পাটলী ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামের এক যুবক লিবিয়াতে গিয়ে মাফিয়া চক্রের নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। লিবিয়া থেকে ইতালি যেতে যুবকের কাছে ২০ লাখ টাকা চায় মাফিয়াচক্র। সেই টাকা দিতে না পারায় তাকে অনাহারে রেখে, নির্যাতন করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে মাফিয়াচক্র।

পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, পরিবারের সচ্ছলতা আনতে দালালদের মাধ্যমে পৈতৃক ভিটামাটি বিক্রি করে চার লাখ টাকা দিয়ে লিবিয়া গিয়েছিলেন সাহাদ আলী (৩০) নামের ওই যুবক। স্বপ্ন ছিল সেখানে আয় রোজকার করে ইতালি গিয়ে অসচ্ছল পরিবারের সচ্ছলতা আনবেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে মাফিয়া চক্রের কবলে পড়ে মুক্তিপণের দিতে না পেরে নির্যাতনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) লিবিয়াতে মৃত্যু হয় সাহাদ আলীর। তিনি বনগাঁও গ্রামের কৃষক মৃত. তবারক আলী ও গৃহিণী হাজেরা বিবি দম্পতির ছোট ছেলে।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ২১ মে চার লাখ টাকা দিয়ে উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের পাড়ারগাঁও গ্রামের দালাল শাহীনের মাধ্যমে লিবিয়া যায় সাহাদ আলী। সেখানে পরিচয় হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দালাল সাদ্দামের সঙ্গে। ওই বছরের নভেম্বর মাসে সাদ্দাম তাকে মাফিয়া চক্রের হাতে তুলে দেয়। তখন মাফিয়া চক্র তার পরিবারের কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চায়।

সাহাদ আলীর বোন সেবিকা বেগম জানান, আমরা মুক্তিপণের টাকা দিতে না পারায় আমার ভাইকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। দিনের পর দিন অনাহারে রাখা হয়। আমরা দালাল সাদ্দামের মাধ্যমে মাফিয়া চক্রের সাথে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করে প্রাণভিক্ষা চেয়ে টাকা পাঠিয়েও বাঁচাতে পারলাম না। আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে।

সাহাদ আলীর ভাই সজ্জাদ মিয়া জানান, দালাল শাহীন ও সাদ্দাম দেশে ব্যাংকে তাদের স্বজনদের মাধ্যমে টাকা নিয়েছে। টাকা নিয়েও আমার ভাইকে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে।

বনগাঁও গ্রামের ইমাদ উদ্দিন আকাশ জানান, মাফিয়া চক্রের হাতে নির্যাতনের খবর পেয়ে আমরা এলাকার লোকজন দরিদ্র পরিবারের এ ছেলেকে বাঁচাতে চাঁদা তুলে আরও দেড় লাখ টাকা পাঠাই। এরপরও মাফিয়া চক্র তাকে বাঁচতে দিল না।

জগন্নাথপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *