নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে লেখা সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ের একটি অংশে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এডুকেশনাল সাইট থেকে হুবহু নিয়ে অনুবাদ করে ব্যবহার করা হয়। এর দায় স্বীকার করে নেন বইটির রচনা ও সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত থাকা অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। ওই ঘটনার জন্য এবার তিনি সাংবাদিকদের ওপর দায় চাপালেন।

বুধবার (২৯ মার্চ) রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ‘নতুন শিক্ষাক্রম- ২০২২’ শীর্ষক এক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই দায় চাপান।

জাফর ইকবাল বলেন, ‘নতুন কারিকুলাম নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী কোনো সংবাদ না করে সংবাদমাধ্যমগুলো নেতিবাচক প্রতিবেদন করতে ব্যস্ত।’ তার অভিযোগ, ‘যে কোনো কাজ করতে গেলে শুরুতে যাদের বাধা আসে, তারা হলেন সাংবাদিক। ওনারা (সাংবাদিকরা) আমাদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে দেন। আমি এখন পর্যন্ত দেখলাম না কোনো পত্রপত্রিকা নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সুন্দরভাবে বিশ্লেষণধর্মী সংবাদ প্রচার করতে।’  

চলতি বছরের কারিকুলাম নিয়ে নানা বির্তকের বিষয়টি সামনে এনে অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল বলেন, কোনো কাজ করলে একমাত্র সাংবাদিকরা বাধা হয়ে দাঁড়ান। তাই গণমাধ্যমে কী লেখা হচ্ছে তা আমলে না নিতে নীতিনির্ধারক, শিক্ষকদের পরামর্শ দেন তিনি। ‘পত্রিকার বিক্রি বাড়াতে তারা এসব উল্টাপাল্টা সংবাদ প্রচার করেন’ বলেও মন্তব্য তার।

সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, ‘আমি সংবাদমাধ্যমের অনেক কিছু জানি। এগুলো বললে তারা পালিয়ে যাবেন। এজন্য মাঝে মধ্যে চিন্তা করি, যে সমস্ত মিডিয়া এটার পেছনে এত কঠিনভাবে লেগেছে, তাদের সামনা-সামনি বলে… এক-একটি বিষয়ে কথা বলি, দেখি আপনারা কতক্ষণ কথা বলতে পারেন। কাজেই এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা আছেন তারা গণমাধ্যমে যা লেখা হয় তা নিয়ে ভাববেন না।’

গণমাধ্যমকে তাদের মতো বলতে দেন। কারণ, তাদের পত্রিকা বিক্রি করতে হয়। কেউ ভালো কথা শুনতে চায় না, গালাগালি দিয়ে কথা বললে তা শুনতে ভালো লাগে। পত্রপত্রিকা কী বলছে তা নিয়ে আপনারা মাথা ঘামাবেন না। আপনারা নিজেরা সত্যিকার অর্থে যেটা করার কথা সেটা করছেন কি না, আপনারা আপনাদের হৃদয়ের কাছে আন্তরিক কি না, নিজেদের ছেলে-মেয়েদের দায়িত্ব নিয়েছেন কি না? গালাগালির মূল দায়িত্বটা আমি নিজে নিচ্ছি। আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি, সে কারণে আমি বেশি গালাগালি শুনে সহ্য করে যাচ্ছি।’

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে চালু হওয়া নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে লেখা সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ে একটি অংশে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এডুকেশনাল সাইট থেকে নিয়ে হুবহু অনুবাদ করে ব্যবহার করার অভিযোগ ওঠে জাফর ইকবাল, অধ্যাপক হাসিনা খানের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক হাসিনা খান নিজেদের দোষ স্বীকার করে নেন। পরে ওই অধ্যায়টুকু প্রত্যাহার করে নেয় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনটিসিটি)।

অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের সচিব, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ শিক্ষাবিদ, শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *