সারা দেশের ন্যায় সিলেটেও চামড়া ব্যবসায়ী এবং ক্বওমি মাদরাসা ও এতিখানাগুলোর কাঁচা চামড়া সংগ্রহের প্রধান মৌসুম ঈদুল আযহা। এক দশক আগেও একটি গরুর চামড়া আকারভেদে ১২০০ থেকে ৩০০০ টাকায় বিক্রি করা যেত। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সেই একই চামড়া ৩৫০ টাকাতেও বিক্রি করতে পারছেন না মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। ফলে, আয় কমেছে ব্যবসায়ী ও মাদরাসা-এতিমখানা কর্তৃপক্ষের। 

পরপর কয়েক বছর কাঁচা চামড়ার বাজারে এই অস্থিরতা দেখা দিলে সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেওয়া শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঈদের আগে কোরবানির গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং খাসি ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরি ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়া এ দামে কিনবেন ট্যানারি মালিকরা। তবে ঈদের দিন বা তার পরের দিন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এলাকা ও চমড়াভেদে স্থানীয়ভাবে দাম নির্ধারণ করে চামড়া কেনেন। এবার সিলেটে আকারভেদে ৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তি ও মাদরাসা-এতিমখানার কাছ থেকে চামড়া কিনছেন ব্যবসায়ীরা। এবার চামড়ার দাম গতবারের চেয়েও কম বলে জানিয়েছেন তারা। 

সিলেটের বিভিন্ন মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও চামড়া ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) দুপুরের পর থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ব্যক্তি ও মাদরাসা-এতিমখানা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে চামড়া সংগ্রহ শুরু করেছেন। এসময় ছোট আকারের গরুর চামড়া ১০০-১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর মাঝারি ও বড় আকারের গরুর চামড়া ২০০–৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে অধিকাংশ আড়তদার ছোট আকারের গরুর চামড়া এবং খাসি ও বকরির চামড়া কিনতে অনীহা দেখান। ছোট আকারের গরুর চামড়া কেউ বিক্রি করতে আনলে ৫০ টাকা দামও বলছেন ব্যবসায়ীরা। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গরুর চামড়ার সঙ্গে ছাগলের চামড়া ‘ফ্রি’ পাওয়া গেছে। 

সিলেটের কয়েকজন চামড়া ব্যবসায়ী জানান, বড় আকারের গরুর চামড়া ৩৫-৪০ বর্গফুট, মাঝারি আকারের গরুর চামড়া ২১-৩০ এবং ছোট আকারের গরুর চামড়া ১৬-২০ বর্গফুটের হয়। একেকটি গরুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে লবণ ও শ্রমিকের মজুরিসহ গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা খরচ হয়। গত বছরের তুলনায় এবার সবকিছুর দাম বেশি হওয়ায় খরচ কিছুটা বেশি পড়েছে। তাই এর প্রভাব কাচা চামড়ার দামে পড়েছে।

দক্ষিণ সুরমার চামড়া ব্যবসায়ী স্বপন দাস বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বলেন, আমি প্রতি বছরই দক্ষিণ সুরমা, বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জসহ সিলেটের বিভিন্ন এলাকার মাদরাসাগুলোর চামড়া ক্রয় করি। এবার ছোট আকারের গরুর চামড়া ১০০-১৫০ টাকা, মাঝারি ও বড় আকারের গরুর চামড়া ২০০–৩০০ টাকায় কিনেছি। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার চামড়া কিনেছি এবার। 

ছাগলের চামড়া কেনাবেচা হচ্ছেই না বলে জানালেন ওই ব্যবসায়ী। জানালেন- গরুর চামড়ার সঙ্গে ছাগলের চামড়া ‘ফ্রি’ মিলছে।

এদিকে, রতন সরকার নামের এক ব্যবসায়ী জানান- সিলেটে ব্যক্তি পর্যায় থেকে ছোট গরুর চামড়া ৫০ টাকা করে কিনেছেন তিনি।আর মাঝারি ১০০ এবং বড় গরুর ২০০-২৫০ টাকা দরে কিনেছেন।

আম্বরখানা এলাকার চামড়ার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন বলেন- বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে আমরা চামড়া কিনেছি কিন্তু এখন পর্যন্ত বড় আড়তদারের কাছে বিক্রি করতে পারিনি। যদি বিক্রি করতে না পারি তবে লবণ দিয়ে রাখবো এবং পরে বিক্রি করবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *