সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার বড়বন্দ ৪র্থ খণ্ড গ্রামের হবিবুর রহমানের পুত্র দরিদ্র গিয়াস উদ্দিন হত্যা মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। একইসাথে শাহাব উদ্দিনের লুণ্ঠিত ১৩ লক্ষ টাকাও এখন পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি। এতে করে নিজেদের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে কানাইঘাট থানা পুলিশ।

এর আগে গত ২৭ জুন রাত দেড়টার দিকে বড়বন্দ ৪র্থ খণ্ড গ্রামের মৃত আব্দুল হকের পুত্র শাহাব উদ্দিনকে হামলাকারীদের হাত থেকে রক্ষা করতে গিয়ে নির্মমভাবে চুরিকাঘাতে খুন দরিদ্র পরিবারের সন্তান গিয়াস উদ্দিন।

এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে কানাইঘাট থানায় হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে উপজেলার সোনাতনপুঞ্জি গ্রামের শফিকুল হকের পুত্র ইব্রাহিম ওরফে ইমন আহমদ (৩১), একই গ্রামের ফরিদ আহমদের পুত্র নেওয়াজ শরীফ (৩২) এবং ঘটনার দিন স্থানীয় জনতার হাতে আটক সোনা মিয়ার পুত্র জামাল আহমদ (২৩)কে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানার মামলা নং- ২১, তারিখ- ২৮/০৬/২০২৩ইং।

মামলা দায়েরের একসপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত অপর আসামিদের গ্রেপ্তার কিংবা শাহাব উদ্দিনের লুন্টিত অর্থ উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। তবে মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই রামচন্দ্র দেব।

দরিদ্র গিয়াস উদ্দিন হত্যাকান্ডের পর শাহাব উদ্দিন স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছিলেন, তিনি স্থানীয় বড়বন্দ বাজারের একজন ফার্নিচার ব্যবসায়ী। গত ২৭ জুন রাত দেড়টার দিকে তার বিশ্বস্ত লোক গিয়াস উদ্দিনকে সাথে নিয়ে নিজ বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে গিয়াস উদ্দিনকে তার বাড়িতে চলে যাওয়ার জন্য বলেন। একপর্যায়ে শাহাব উদ্দিন তার বাড়ির পাশে রাস্তার উপর ৫ জন লোক দেখতে পেয়ে তারা কেনো এখানে দাঁড়িয়ে আছে জানতে চাইলে ভারতীয় কিছু মাল এদিকে আসবে বলে তারা জানায়। ৫ জনের মধ্যে ২ জনকে তিনি চিনতে পারেন। একপর্যায়ে তার উপর ওই ৫ জন হামলা চালিয়ে তার সাথে থাকা ব্যবসার ১৩ লক্ষ টাকা জোরপূর্বক লুট করে নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে জামাল আহমদকে তিনি ঝাপটে ধরেন এবং হামলাকারীদের কবল থেকে তাকে রক্ষা করার জন্য গিয়াস উদ্দিনকে ফোন দিলে সে তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসার সময় হামলাকারীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়।

স্থানীয়রা জানান, গিয়াস উদ্দিন দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার স্ত্রীসহ ৩টি অবুঝ ছেলে-মেয়ে রয়েছে। শাহাব উদ্দিনকে বাঁচাতে গিয়ে সে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান তারা।

এদিকে শাহাব উদ্দিনের কথা অনুযায়ী টাকা লুটের সাথে ৫ জন জড়িত থাকলেও হত্যাকাণ্ডের মামলায় ৩ জনকে আসামি করেছেন নিহত গিয়াস উদ্দিনের ভাই রিয়াজ উদ্দিন। তবে একেক সময় একেকভাবে ঘটনার বর্ণনা দেয়ায় ফার্নিচার ব্যবসায়ী দাবীদার শাহাব উদ্দিনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য স্থানীয় সচেতন মহল পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এ হত্যাকান্ডের পর সিলেট জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং শাহাব উদ্দিনের কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত জানেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই রামচন্দ্র দেব জানান, গিয়াস উদ্দিন হত্যাকাণ্ড এবং ব্যবসায়ী শাহাব উদ্দিনের দাবী অনুযায়ী তার টাকা হামলাকারী ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনার সার্বিক তদন্তের পাশাপাশি হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশের সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

সূত্রঃ সিলেট ভয়েস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *