বিয়ানীবাজারের প্রবেশদ্বারে প্রতিষ্ঠিত সৈয়দ নবীব আলী কলেজের গভর্ণিং বডির সভাপতি নির্বাচন নিয়ে দু’পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে। কলেজ পরিচালনার জন্য গভর্ণিং বডির অন্যান্য সদস্য নির্বাচন করা হলেও সভাপতির পদে মনোনয়ন নিয়ে বিরোধ তুঙ্গে ওঠেছে। এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে একপক্ষ কলেজের পাঠদান কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে বলে এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছে।

এদিকে কলেজের অধ্যক্ষ মো: দেলোওয়ার হোসেনের অনুপস্থিতি নিয়েও আছে নানা রহস্য। উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে গত কয়েকদিন থেকে অধ্যক্ষের কলেজে না যাওয়ার বিষয়টি নিয়েও চলছে নানা সমালোচনা। সৈয়দ নবীব আলী কলেজ উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের টিকরপাড়ায় অবস্থিত। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই প্রতিষ্ঠানটি সুনামের স্বাক্ষর রাখছে।

জানা যায়, গত ২০০৬ সাল থেকে সৈয়দ নবীব আলী কলেজের পরিচালনায় কোন গভর্ণিং বডি গঠন করা হয়নি। নানা জঠিলতা কাটিয়ে ২০১৮সালে এই প্রতিষ্টানের গভর্ণিং বডি গঠন করা হলেও সভাপতি পদ নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। সে সময় গভর্ণিং বডির জনৈক ব্যক্তি বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রীট করেন এবং তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ আদালতের নির্দেশে সভাপতির পদ লাভ করেন। বিষয়টি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকায় মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও এই কলেজের গভর্ণিং বডি গঠন করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে চলতি বছরের ২২ জানুয়ারী হাইকোর্টে রীটের নিষ্পত্তি হলে সৈয়দ নবীব আলী কলেজ পরিচালনার জন্য একটি এডহক কমিটি গঠন করা হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদাধিকার বলে সেই কমিটির আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার গত ৯ জুলাই সৈয়দ নবীব আলী কলেজের গভর্ণিং বডির বহুল কাংখিত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

সূত্র জানায়, নির্বাচন পরবর্তী সভাপতি পদের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ৩ জনের নাম প্রস্তাব করে পাঠানোর কথা। সে অনুযায়ী কলেজের অধ্যক্ষ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম জায়গীরদার, সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান মনির এবং সিলেট মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গীরদারের নাম প্রস্তাব করেন। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ আলীনগর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি আহবাবুর রহমান খান শিশুর নাম প্রস্তাব করার জন্য অধ্যক্ষকে অনুরোধ করেন। বিষয়টি সূরাহার জন্য নজরুল ইসলাম জায়গীরদার ও মনিরুজ্জামান ঢাকায় গিয়ে এমপির দ্বারস্থ হন। এমপি বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার জন্য তাদের নির্দেশণা দেন। সেই থেকে দুই পক্ষে মনোস্তাত্বিক দূরত্ব সৃষ্টি হয়।

আলীনগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির জানান, কলেজের অধ্যক্ষ বিধি অনুযায়ী আমিসহ ৩ জনের নাম প্রস্তাব করে প্রেরণ করেন। কিন্তু এমপি সাহেব সভাপতি পদে চেয়ারম্যানের নাম সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রেরণ করার নির্দেশণা দেন।

এদিকে গভণির্ং বডির সভাপতি নিয়ে এমন বিভক্তির মাঝে কলেজের পাঠদান কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে মর্মে খবর চাউর হয়। সিলেট শিক্ষা বোর্ড থেকে জারীকৃত (স্মারক নং ৩৭.১৪.৯১০০.৩০০.৫১.০০২.২০-২৩৭০) এক প্রজ্ঞাপন থেকে জানা যায়, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে এক্দাশ শ্রেণীতে ভর্তি সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পাদনের লক্ষে বিভিন্ন তথ্য সম্বলিত প্রতিষ্ঠানের তালিকায় সৈয়দ নবীব আলী কলেজের নাম নেই। এ বিষয়ে আলীনগর ইউপি চেয়ারম্যান আহবাবুর রহমান খান শিশু জানান, আমি এই বিজ্ঞপ্তিটি পেয়েছি। বিভিন্ন দপ্তরে অধ্যক্ষের অনিয়ম নিয়ে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছি। তিনি বলেন, কলেজের পাঠদান স্থগিত বিষয়ক সঠিক তথ্য জানতে আমি শিক্ষা বোর্ডের সচিব সাহেবের সাথে যোগাযোগ করেছি। তিনি এ ধরনের কোন বিষয় জানেননা মর্মে আমাকে অবহিত করেছেন। চেয়ারম্যান আরো বলেন, শিক্ষা বোর্ডের অন্য এক কর্মকর্তা পাঠদান বিষয়ক বিভাগ তদ্রাকি করেন। তার সাথে এখনো যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সিলেট শিক্ষা বোর্ডের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বিয়ানীবাজার উপজেলাসহ পুরো সিলেট বিভাগের সকল উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম একাদশ শ্রেণীর ভর্তি তালিকায় থাকলেও সৈয়দ নবীব আলী কলেজের নাম নেই। এ নিয়ে এলাকায় নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

চেয়ারম্যান আহবাবুর রহমান খান অভিযোগ করেন, কলেজের উদ্বুদ্ধ এই পরিস্থিতিতে অধ্যক্ষ অনুপস্থিত রয়েছেন। কলেজের রেজিষ্ট্রার অনুযায়ী তিনি গত ১লা জুলাই থেকে অনুপস্থিত আছেন। তবে ৯ জুলাই গভর্ণিং বডির নির্বাচনে তিনি উপস্থিত ছিলেন। অধ্যক্ষের অনীহার কারনে এই কলেজটিতে তক কোর্স চালু করা সম্ভব হচ্ছেনা।

কলেজের সভাপতি পদ প্রত্যাশী মনিরুজ্জামান বলেন, অধ্যক্ষ অসূস্থ নাকি কারো ভয়ে আসছেন না তা বলা যাচ্ছেনা। তবে অচিরেই তিনি কলেজে আসবেন বলে তাকে জানিয়েছেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে সৈয়দ নবীব আলী কলেজের অধ্যক্ষ মো: দেলোওয়ার হোসেনের সাথে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এদিকে একটি প্রতিষ্টিত কলেজের এমন দূর্দশায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মুহিবুল হাসান নামের একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, সম্প্রীতির এলাকা খ্যাত আলীনগর ইউনিয়ন এখন দুইধারায় বিভক্ত। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা ভালো কিন্তু সেটা যেনো প্রতিহিংসাপরায়ণ না হয়। সম্ভাব্য সভাপতি প্রার্থীগণ রাজনৈতিক পরিচয় বহনকারী হওয়ায় প্রতিপক্ষ বিরোধী দলের কাছে হাসির খোরাক হচ্ছে।

কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মাজেদ আহমদ লিখেছেন, যতদুর শুনলাম সভাপতি নির্বাচনের লক্ষে আমাদের ইউনিয়নের তিনজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম বোর্ডে প্রেরণ করা হয় কিন্তু সেখানে স্থানীয় এমপি মহোদয়ের সুপারিশ না থাকায় তালিকাটি কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে ফেরত দেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *