বিয়ানীবাজারসহ পুরো সিলেটজুড়ে দেশীয় মাছে সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে। গ্রামগঞ্জের বাজারে আগের মতো এখন দেশীয় মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। হাওর, বিল ও নদী এখন না পাওয়ায় বাজারজাতও করা যাচ্ছে না বলে মাছ ব্যবসায়ীরা জানান। নানা কারণে উৎপাদন কমে যাওয়ায় লোকজন দেশীয় মাছের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বিভিন্ন এলাকায় হাওর ও খাল-বিলে অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ করায় মাছ ঢুকতে পারছে না। ব্যাহত হচ্ছে মাছের সঠিক প্রজনন। ফলে শুষ্ক মৌসুম খাল-বিল সেচেও তেমন মাছ পাওয়া যায় না। তাছাড়া ধান রক্ষায় অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণের জন্য মাছের প্রজণন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে হাওরের মাছ কমে যাচ্ছে। রোগবালাই থেকে রক্ষার জন্য ধান গাছে অতিমাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগও হাওরের মাছ কমে যাওয়ার কারণ।
জেলেরা বলছেন, আমরা এখন আগের মতো মাছ ধরতে পারছি না। আমরা হাওরাঞ্চলের অনেক মানুষ যারা মাছের উপর ভরসা করে চলতাম এখন আর চলতে পারছিনা। এজন্য বউ-বাচ্চা নিয়ে বিপদে আছি।
স্থানীয় মৎস্য আড়ত মালিকরা জানান, বাজারে এখন দেশীয় মাছ নেই বললেই চলে। আমাদের ব্যবসাও খুব মান্দা। এলাকার অনেক কৃষকের ভাষ্য, উচ্চফলনশীল ধান ফলানোর প্রতিযোগিতায় নেমে আমরা অতিরিক্ত সার, অতিমাত্রায় কীটনাশক দিয়ে নিধন করছি মাছ ও মাছের প্রজণন।
অন্যদিকে অবাধে পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ নিধন হচ্ছে। অবাধে বিক্রি হচ্ছে রেণু পোনা, কেউ বাঁধা দিচ্ছে না। মাছের প্রজাতির বিলুপ্তি ঠেকাতে ও উৎপাদন বাড়াতে অবশ্যই পোনা মাছ এবং ডিমওয়ালা মাছ নিধন বন্ধ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে ক্ষতিকর জালের ব্যবহারও। হাওর এলাকায় এসব কেউ মানছে না।
মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, এক যুগ আগেও প্রায় ১০৭ প্রজাতির দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। এর মধ্যে গত কয়েক বছরে বেশকিছু প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিলুপ্ত হওয়ার পথে আরও কিছু প্রজাতি। সংকটাপন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে রয়েছে- বাছা, বেদা, ছেপচেলা, ঢেলা, বাঁশপাতা, কুঁচে, নাপতে কই, বাতাসিয়া টেংরা, ফলি ও গুজিআইড়। আর বিপন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে রয়েছে- গুলশা, গনিয়া, দাড়কিনা, আইড়, পাবদা, বড় বাইম, গজার, তারাবাইম, তিতপুঁটি, নামা চান্দা ও কালিবাউশ দারপিনা।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, নদীর মাছ আগে হাওর ও বিলে গিয়ে আশ্রয় নিতো। এখন বাঁধের কারণে নদী থেকে হাওর বা বিলে যেতে পারছে না মাছ। সিলেটে প্রতিবছর বন্যার পানি নামার উপর হাওর, বিলে প্রচুর পরিমান দেশীয় মাছ পাওয়া যেত. কিন্তু এ বছর হাওর বিল থেকে পানি নামার পর তেমন কোন দেশীয় মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। সিলেটে জেলার প্রতিটি বাজারে দেখা যায় বিদেশি ও ফিশারির মাছ। দেশি মাছ দেখা গেলেও মাছ থেকে ক্রেতা বেশি, দামও চওড়া।