জাতীয় নির্বাচনের দিন যতই এগোচ্ছে ততই উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। কোনো কোনো স্থানে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল প্রকট। রাজনীতিতে এখন চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। শঙ্কাজনিত একটা উত্তেজনাও রয়েছে।

২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বিরোধী নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষপ্রসূত উত্তেজনা প্রায় সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ে। উত্তেজনা নিরসনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ অভিযান চালায় সারা দেশে। গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের।

জেলাগুলোতে তারপরও সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। অন্তত ৩৭টি জেলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পুলিশ। দুটি গোয়েন্দা সংস্থা আশঙ্কা ব্যক্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে। তফসিলের আগে সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক বৈঠকেও ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলো নিয়ে বিশদ কথা হয়েছে। সেসব জেলায় বিশেষভাবে সতর্ক থাকার জন্য পুলিশ ও র‌্যাবকে বলা হয়েছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়ও হামলার আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

যেসব জেলা নিয়ে পুলিশের ভয় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে সিলেট ও সুনামগঞ্জও। এছাড়াও বগুড়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, নাটোর, চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী, ঝিনাইদহ, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, মানিকগঞ্জ, পটুয়াখালী, কক্সবাজার, ঢাকা, গাজীপুর, নেত্রকোনা, ঝালকাঠি, লক্ষ্মীপুর, বান্দরবান, নড়াইল, পাবনা, ভোলা, নীলফামারী, পঞ্চগড় ও জয়পুরহাটে বাড়তি নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নাটোর ও কয়েকটি জেলায় মুখোশধারীদের হামলার বিষয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে পুলিশ। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ও রেঞ্জ ডিআইজিদের কার্যালয়ে এ বিষয়ে বিশেষ বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বলা হয়েছে মুখোশধারীরা ‘চিহ্নিত’। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স বলেছে, যারা এসব অপকর্ম করছে প্রমাণসহ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোয় অভিযান চালাতে ও কঠোর নজরদারি করতেও বলা হয়েছে। নির্দেশনা পেয়ে জেলা পুলিশ এখন তৎপর বলে জানা গেছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করলে কঠোরভাবে দমন করা হবে। যেসব জেলা বা উপজেলা ঝুঁকিপূর্র্ণ সেগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করছে পুলিশ।’

নাম প্রকাশ না করে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘একাধিক জেলা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। তবে আমরা সতর্ক। প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি রয়েছে। আমাদের কাছে তথ্য এসেছে, অন্তত ৩৭টি জেলায় সরকারবিরোধীরা বিশৃঙ্খলা করতে পারে। তবে তাদের শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হবে। ইউনিটপ্রধান ও জেলার এসপিদের কাছে বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘নাটোরসহ অন্তত ১০ জেলায় মুখোশ পরে হামলা চালানো হচ্ছে। এসব আমাদের বিব্রত করছে। মুখোশধারী বেশিরভাগকেই চিহ্নিত করা হয়েছে। আপাতত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না গেলেও জেলার এসপিদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া আছে।’

সংশ্লিষ্টরা জানায়, তফসিল অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন নিয়ে বিএনপিসহ সরকারবিরোধীরা আন্দোলন করছে। সামনের দিনগুলোতে জ¦ালাও-পোড়াও এবং সহিংসতার আশঙ্কা করছে আইনপ্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থা। দুটি গোয়েন্দা সংস্থা গোপন প্রতিবেদনে সরকারকে সতর্ক করেছে। অন্তত ৫৩ জেলায় সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। জেলাগুলোয় চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কা করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোয় হামলা হতে পারে। যারা সহিংসতা চালানোর পরিকল্পনা করছে ওইসব জেলায় তাদের অবস্থান বেশ মজবুত। সেখানে বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান শক্ত।

আসন্ন নির্বাচন কেন্দ্র করে বিএনপির চলমান অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচিতে জেলাগুলোয় সহিংসতার শঙ্কা আছে। হরতাল-অবরোধে ঢাকা মহানগরীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং পুলিশের উপস্থিতি কম ও ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত সরে পড়া সম্ভব এমন স্থানে নাশকতার আশঙ্কা করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, প্রতিবেদনটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, বেশিরভাগ শীর্ষ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হলেও তৃণমূল নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা ও নেতৃত্বে আন্দোলন সফল করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বিএনপি। বিএনপি ও জামায়াত ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন বানচাল ও প্রতিহত করার চেষ্টা করতে পারে। আগেরবারের মতো এবারও তারা আন্দোলন সফল না হলে সহিংস ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করবে।

বঙ্গভবন, গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জাতীয় সংসদ ভবন, সচিবালয়, বিমানবন্দর, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ কেন্দ্র, বিদেশি দূতাবাস, মন্ত্রীদের বাসভবন, সাবমেরিন কেব্লস, রেলস্টেশন, বাসডিপো, ফ্লাইওভার, নৌ-টার্মিনাল, পেট্রোলপাম্প, সিএনজি স্টেশন, সরকারি বা বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে। হামলাকারীরা চা-পান বিক্রেতা, আইসক্রিম বিক্রেতা বা অন্য হকারের ছদ্মবেশে যানবাহনে উঠে অগ্নিসংযোগ করে, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ঢুকে বোমা হামলা চালিয়ে জানমালের ক্ষতি করতে পারে বলে পুলিশের আশঙ্কা।

এসব বিষয়ে কয়েকজন জেলা পুলিশ সুপার বলেন, নাটোরসহ অন্তত ১০টি জেলায় হেলমেট পরে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তাদের চিহ্নিত করা গেলেও বিশেষ কারণে তাদের আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। তারা বলেন, নাটোরে সবচেয়ে বেশি হামলা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপাররা বলেন, জেলাগুলোয় সহিংসতা রোধে কঠোর নিরাপত্তাবলয় গড়ে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *