উন্নত জীবন যাপন ও পরিবারের স্বচ্ছলতার চিন্তায় গত কয়েক মাস ধরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার হিড়িক পড়েছে সিলেটিদের। বিশেষ করে তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী ও শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষাসহ অন্যান্য ভিসা নিয়ে যাচ্ছেন যুক্তরাজ্যে।

তবে সম্ভাবার পাশাপাশি সেখানে গিয়ে সমস্যায়ও পড়ছেন অনেক সিলেটি। সেখানে যাওয়া বেশ কয়েকজনের সঙ্গে বিভিন্ন সময় কথা বলে জানা গেছে এ বিষয়ে অনেক তথ্য।

জানা গেছে, লন্ডন তথা যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমালেই যে আর্থিক স্বচ্ছলতা বা নিজের উন্নত জীবন মেলে বিষয়টা এমন নয়। সেখানে গিয়ে সিলেটিদেরকে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। ভাষাগত সমস্যা ছাড়া যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের ব্যয়বহুল জীবনের সাথে তাল মিলিয়ে চলা খুব কঠিন হচ্ছে। তাছাড়া এসব দেশে বাসা ভাড়া পাওয়ার জন্য রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়।

এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যে থাকা ফাহিম আহমদ নামের দক্ষিণ সুরমার এক তরুণ এ প্রতিবেদককে বলেন- বিয়ে, ভিসা প্রসেসিং সবমিলিয়ে ২৯ লাখ টাকা খরচ করে কেয়ার ভিসাতে লন্ডনে এসেছি। এখানে এসে প্রথম ১৫ দিন চাচার বাসায় ছিলাম। একটা ছোট গেস্ট রুমে আরেকজনের সঙ্গে শেয়ার করে থাকছি। শেয়ারিংয়ে একটা বাসা খুঁজে পেলেও কোনো কাজ পাচ্ছি না। ফলে দেশ থেকে আরও টাকা আনতে হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার বাসিন্দা মিজানুর রহমান হিরু। তিনি সেখানকার বড় ব্যবসায়ী, রাজনীতিবীদ ও কমিউনিটি নেতা। দীর্ঘদিন ধরে দেশটিতে বসবাস করায় দেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমানো তরুণ-তরুণীদের নিয়ে তার মতামত জানতে চায় একটি সংবাদমাধ্যম।

তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে এখন সিলেট থেকে বেশিরভাগ আসছেন সদ্য বিবাহিত আইইএলটিসে সম্পন্নকারী স্বামী-স্ত্রী।  তাদের দুই ভাগে ভাগ করতে হবে। একপক্ষ এখানে এসে কাজ পেয়ে যায়, এদের হয়তো-বা সচেতন আত্মীয়স্বজন সেখানে থাকে। পাশাপাশি নিজেরা খুব চালাক হয়। আবার কেউ কেউ দেশটিতে গিয়ে অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করে। দেশটিতে গিয়ে এরা প্রথম যে সমস্যায় পড়ে তা হচ্ছে- ইংরেজি না জানা।

দ্বিতীয় যে সমস্যা মোকাবিলা করে তা হলো- বাসা ভাড়া না পাওয়া। বাসা না পেলে কেউ কাজ পাবেন না কিংবা দেশটিতে বসবাসও করতে পারবেন না। বর্তমানে লন্ডনে কাজের খুব সংকট রয়েছে। এই কাজ করে সেখানকার টিউশন ফি মেটানো নিজেদের খরচ চালানোর পাশাপাশি দেশে টাকা পাঠানো খুব কঠিন।

উদাহরণ দিতে গিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, আমি যে বাসাটি ভাড়া দিয়ে ৬ মাস আগে ১৭০০ পাউন্ড পেতাম এখন সেই বাসার ভাড়া গত সপ্তাহে একজন অফার করেছে ২৫০০ পাউন্ড। সিলেটসহ বিভিন্ন স্থান থেকে যে পরিমাণ মানুষ যুক্তরাজ্যে যাচ্ছে- তাদের তুলনায় সেখানে বাসা খুব কম।

তিনি আরও বলেন- আবার যারা কেয়ার ভিসায় যায় তারা কিন্ত যে কাজ করে তা মূলত বাংলাদেশের আয়ার কাজ। অর্থাৎ ন্যাপকিন বদলানো থেকে শুরু করে এমন সব কাজ- যা তাদের নিজেদের জন্য বিব্রতকর। এসব ভিসায় এসে অন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ না পেয়ে বেকায়দায় আছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার লন্ডন থেকে পালিয়ে ইউরোপের অন্য দেশগুলোতে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন। দেশে থাকতে এই তরুণরা যেভাবে চিন্তা করেন- প্রবাস জীবন তার চেয়ে অনেক কঠিন।

তবে আছে ইতিবাচক দিকও। অনেকেই বলছেন- যারা উন্নত জীবনের আশায় লন্ডন বা ইউরোপে পাড়ি জমায় তারা কিন্তু বেশ সফল। কেউ ২০-২৫ লাখ টাকা খরচ করে লন্ডন গেলেও সেখানে কোনোমতে থিতু হয়ে গেলে তার ও তার পরিবারের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। আবার বিয়েতে অহেতুক খরচ না করে কেউ যদি দেশের বাইরে যেতে এই টাকা খরচ করে তাহলে তা তাদের ক্যারিয়ার এবং পরিবারের জন্য ইতিবাচক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *