এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগে হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ নার্স, দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল, কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতাসহ আটজনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সিলেটের সিনিয়র স্পেশাল জজ ও মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী এ নির্দেশন দেন বলে জানিয়েছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী কানন আলম।

গত ১৭ এপ্রিল এ আদালতে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও দণ্ডবিধি আইনে এ মামলা দায়ের করেন হাসপাতালটির সাবেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী মো. ইসলাম উদ্দিন।

ইসলাম উদ্দিন ২০১৭ সালের নভেম্বর মাস থেকে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সানমুন ক্লিনিং এন্ড সিকিউরিটি সার্ভিস এন্ড আউটসোর্সিং কোম্পানীর মাধ্যমে আউটসোর্সিং ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন।

আদেশে বিচারক জবানবন্দি, নালিশী দরখাস্ত এবং দাখিলকৃত কাগজপত্র পর্যালোচনা করে তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালকদের নির্দেশ দেন।

এ মামলার আসামিরা হলেন হাসপাতালের নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স ইসরাইল আলী সাদেক, জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স আমিনুল ইসলাম ও সুমন চন্দ্র দেব, হাসপাতাল ফাঁড়িতে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল জনী চৌধুরী, কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নাজমুল হাসান, হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার রওশন হাবিব, সিকিউরিটি গার্ড মো. আবদুল জব্বার ও সরদার মো. আবদুল হাকিম সুমন। এ ছাড়াও মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৫ থেকে ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আসামিদের মধ্যে ইসরাইল আলী সাদেক ও আমিনুল ইসলাম গত ৯ জানুয়ারি নিয়োগ দুর্নীতির প্রেক্ষিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন।

মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয় যে আসামিরা একটা সংঘবদ্ধ দুর্নীতি চক্রের সক্রিয় সদস্য এবং তাঁরা দুর্নীতি করে অবৈধভাবে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

ইসরাইল আলী, রওশন হাবিব ও আবদুল জব্বারের কাছে হাসপাতালের শত শত কর্মচারী জিম্মি। আসামিরা শত শত কর্মচারীকে জিম্মি ও প্রতারণা করে ঘুষবাণিজ্যের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করেন।

অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয় যে চাকরি হারানো ও বদলির ভয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ মুখ খোলেন না। আসামিরা সরকারি ওষুধ চুরি ও দালাল সিন্ডিকেট গড়ে তোলে অনিয়ম-দুর্নীতি করছেন।

এছাড়াও হাসপাতালের বিভিন্ন শ্রেণির কর্মচারীদের কাছ থেকে দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক তিন হাজার টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা অভিযুক্তরা বখরা আদায় করেন বলে আরজিতে উল্লেখ করা হয়।

এতে আরও বলা হয়, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের ওয়ার্ড, কেবিন বেড, বারান্দা বেড ও উন্নত চিকিৎসা করিয়ে দেবেন বলে রোগী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন অভিযুক্তরা।

তারা রোগীদের অস্ত্রোপচারের সিরিয়াল পাইয়ে দেওয়া ও দ্রুত অস্ত্রোপচার করিয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রোগীর স্বজনদরে কাছ থেকে টাকা নেন বলেও উল্লেখ অভিযোগে।

মামলার আবেদনে আরো বলা হয়েছে যে এ দুর্নীতিবাজ চক্রের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে শুরু করে হাসপাতালের অজ্ঞাতনামা আসামিরাও জড়িত আছেন।

আরজিতে আরও বলা হয়, ইসরাইল আলী হাসপাতালের অঘোষিত মালিক ও নিজেকে ‘মুকুটহীন সম্রাট’ মনে করেন। নিয়োগবাণিজ্য, নারী নার্সদের কর্মস্থলে ও কর্মস্থলের বাইরে যৌন হয়রানি, ভুয়া বিল প্রস্তুত করে উপপরিচালকের নামে টাকা আত্মসাৎ, করোনার সময়ে বিভিন্ন সামগ্রী কেনার নামে টাকা আত্মসাৎসহ নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

সিলেট শহরে জ্যেষ্ঠ নার্স ইসরাইল আলীর নামে ও দখলে ৬ থেকে ৭টি বহুতল ভবন, স্ত্রী-সন্তানদের নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ আছে বলেও আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

রোগী পরিবহন ও মাদক-আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসার জন্য ইসরাইল আলীর নামে-বেনামে ৩৫ থেকে ৪০টি নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স আছে এবং এসব অ্যাম্বুলেন্সের বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ছাড়া পুলিশ কনস্টেবল জনী চৌধুরী দীর্ঘ ১০ বছর ধরে হাসপাতালে কর্মরত থেকে হাসপাতালের ভেতরে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন বলেও উল্লেখ রয়েছে।

কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নাজমুল হাসানকে সংঘবদ্ধ দুর্নীতিবাজদের চক্রের একজন সদস্য হিসেবে উল্লেখ করে আরজিতে বলা হয়, নাজমুল টেন্ডারবাণিজ্য, অনিয়ম, মাদক ব্যবসা, আবাসিক হলে রেখে ভারতীয় শাড়ির ব্যবসার পাশাপাশি আবাসিক হলে, কলেজে ও হাসপাতালের ভেতরে-বাইরে মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবসা করে আসছেন।

এছাড়া অভিযুক্ত অন্যরাও একই চক্রের সদস্য হিসেবে হাসপাতালের ভেতরে সব ধরনের অপরাধে জড়িত থেকে অবৈধভাবে প্রচুর টাকার মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *