গত ২২ জুন গভীর রাতে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার গরেরগাঁও এলাকায় ছুরিকাঘাতে খুন হন ঈদুল হাসান আরমান (২৫) নামে এক যুবক। তার পরিবার ও স্বজনদের জানিয়েছেন তাকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। আলোচিত এই ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
নিহত আরমান উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের গরেরগাঁও গ্রামের প্রবাসী সুমন আহমেদের ছেলে।
তবে বিনয়ী ও ভদ্র এবং স্বজ্জন আরমানের নৃশংস হত্যাকান্ডের কারণ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে রহস্য। হত্যার নেপথ্য কারণ কী? এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালচনা।
স্থানীয় পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার রাতে আরমান তার নিজ ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। এসময় আরমানের খালু সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক রফিক মিয়ার (৪৮) সাথে (বর্তমানে চিকিৎসাধীন) জুয়া খেলার টাকা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিবেশী তানভীর আহমদের (২২) ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে তানভীর রফিক মিয়াকে ছুরিকাঘাত করে। তাদের (রফিক-তানভীর) ঝগড়া ও চিৎকার শুনে ঘুম থেকে উঠে তার খালু রফিক মিয়াকে বাঁচাতে বাইরে এলে ঈদুল হাসান আরমানকে ছুরিকাঘাত করে তানভীর। গুরুতর আহত অবস্থায় আরমানকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। পরে ছুরিকাহত রফিক মিয়াকে সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে আটক করে পুলিশ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক গণ্যমান্য ব্যক্তি জানান, আমরা বিস্মিত হয়েছি এই ঘটনার পরপরই একটি প্রভাবশালী মহল নিরপরাধ আরমান হত্যাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে শুরু করে। পাশাপাশি হত্যার নেপথ্য কাহিনী যে জুয়া সংক্রান্ত বিষয়ে এই ঘটনাটি যাতে সামনে না আসে তা নিয়ে দৌড়ঝাপ শুরু করে।
এলাকার লোকজন জানান, এই এলাকায় প্রতিরাতে জুয়ার আসর বসে। এটা সবাই জানে। প্রশাসনও জানে। তবে রহস্যজনক কারণে পুলিশ প্রশাসন জুয়ার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কোনো সময়। যদি তারা জুয়ার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতো, তাহলে আরমানের মতো নিরপরাধ একটা ছেলেকে প্রাণ দিতে হতো না।
জুড়ী থানার ওসি এস এম মাইন উদ্দিন জানান, এঘটনায় পুলিশ চারজনকে আটক করে। পূর্ব শত্রুতার জেরে আরমানকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে।
এদিকে আলোচিত এই ঘটনার ৯দিন পর নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে এবং খুনিদের ফাঁসির দাবিতে পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।
রোববার (৩০ জুন) সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিহত আরমানের মা রহিমা আক্তার।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘‘গত শনিবার (২২ জুন) গভীর রাতে উপজেলার গরেরগাঁও গ্রামের মৃত চাঁন মিয়ার ছেলে ইয়াজ মিয়া ও তার ছেলে তানভীর এবং তুহিন, মৃত চেরাগ মিয়ার ছেলে তাজ মিয়াসহ একদল সন্ত্রাসিচক্র আমার ছেলে আরমানকে রাতের আধারে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এসময় আমার ভগ্নিপতি রফিক মিয়াকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরি মেরে গুরুতর আহত করে। বর্তমানে তিনি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।’’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘হত্যাকান্ডের পর থেকে কতিপয় সাংবাদিক খুনিদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা খেয়ে তাদের বাঁচাতে হত্যার ঘটনাটি ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সাংবাদিক নামদারি এক ব্যক্তি তার নাম পরিচয় না দিয়ে মুঠোফোনে (নম্বর ০১৭১৫-৬৬৫৩৭৬) কল দিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এমনকি সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি তার নম্বর থেকে প্রবাসে অবস্থানরত আমার স্বামীকেও হুমকি দিচ্ছে।
‘‘খুনিদের আত্মীয় স্বজনরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে। বিষয়টি আমরা জুড়ী থানাকে অবহিত করেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে চার আসামিকে গ্রেপ্তার করায় জুড়ী থানার ওসি সাহেবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সাংবাদিক ভাইয়েরা আপনারা সত্য ঘটনা পত্রিকায় তুলে ধরায় আপনাদের প্রতি আমি ও আমার পরিবার কৃতজ্ঞ। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আপনার সহযোগিতা কামনা করছি।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.