বিয়ানীবাজার উপজেলার বৈরাগীবাজার থেকে খশির ত্রিমুখি পর্যন্ত যে সড়ক গেছে, সেটির দৈর্ঘ্য এক কিলোমিটারের কম। সড়কটির পিচ উঠে ইটের খোয়া বেরিয়ে যাওয়ায় গাড়ি চলে হেলেদুলে। শুষ্ক মৌসুমে রাস্তাটি থাকে ধুলায় ধূসর। বৃষ্টি মৌসুমে গর্তে জমে থাকে পানি।

এ রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীদের যেমন দুর্ভোগের শেষ নেই, তেমনি সড়কের দু’পাশের বাসিন্দারাও ধুলা-পানির যন্ত্রণায় হাঁপিয়ে উঠেছেন।

শুধু এ সড়কই নয়; বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রায় সব গ্রামীণ সড়কের এখন একই প্রতিচ্ছবি। পাকা রাস্তার বেশির ভাগের অবস্থা খারাপ। আর কাঁচা রাস্তা যাচ্ছেতাই। অনেক সড়কের বিটুমিন ও ইট উঠে কঙ্কালসার। রাস্তার রাস্তায় তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। কিছু কিছু সড়ক ভেঙেচুরে একাকার।

এমনকি গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ, আধুনিকায়ন ও মেরামতের দায়িত্ব পালন করে যে সংস্থা, সেই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নিয়ন্ত্রণাধীন মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের সংসদীয় কমিটির সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলাম নাহিদের বর্তমান বাড়ি নয়াগ্রাম এবং সাবেক বাড়ি কসবা গ্রামের সড়কও বিধ্বস্ত। গ্রামীণ সড়কের ‘মুমূর্ষু’ পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে রক্তক্ষরণ হলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা চুপচাপ।

জানা গেছে, বিয়ানীবাজার উপজেলায় এলজিইডির গ্রামীণ সড়ক রয়েছে  ৬২৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২১০ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে পাকা। এসব রাস্তার দেখভাল করে উপজেলা এলজিইডি। প্রতিবছরের মে মাসে প্রতিষ্ঠানটি সড়কের বাস্তব পরিস্থিতি সংগ্রহ করে তা মেরামতের জন্য জুন-জুলাইয়ে সরকারের কাছে অর্থ বরাদ্দের আবেদন করে। তবে নানা প্রকল্পের কাজ সম্পাদনে বছর জুড়েই সংশ্লিস্ট উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে গ্রামীণ রাস্তা সংস্কারের তালিকা পাঠানো হয়। প্রতি কিলোমিটার রাস্তা মেরামতের জন্য প্রয়োজন হয় ৫০ লাখ টাকা।

বিয়ানীবাজার এলজিইডি কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলায় বর্তমানে ১৬০ কিলোমিটার সংস্কার উপযোগী রাস্তা আছে। এরমধ্যে ৬০-৭০ কিলোমিটার রাস্তা জরুরী সংস্কারের প্রয়োজন। কিন্তু বছরের পর বছর থেকে বিয়ানীবাজারের গ্রামীণ রাস্তাগুলো সংস্কার হয়না। গত আট-নয় মাসের ব্যবধানে এসব সড়কের অবস্থা আরও বেহাল হয়েছে।

বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রকৌশলী দীপক চন্দ নাথ বলেন, বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু রাস্তা মেরামতের কাজ শীঘ্রই অনুমোদন পাবে। পর্যায়ক্রমে পাকা ও আধাপাকা সড়কগুলো সংস্কার করা হবে। তিনি আরো বলেন, সড়ক রক্ষণাবেক্ষণকে গুরুত্বের সঙ্গেই দেখা হচ্ছে। তাই চলতি অর্থবছরে যেসব সড়ক সংস্কার করা হবে তার একটি তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। এটি পেলে শুস্ক মৌসুমে সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু হবে। এলজিইডির আওতায় কোনো সড়কই ভাঙাচোরা থাকবে না।

সূত্র জানায়, করোনার সময় থেকে বরাদ্দ স্বল্পতায় অনেক রাস্তা সময়মতো মেরামত না করায় ভোগান্তি বেড়েছে বিয়ানীবাজারের মানুষের। অভিযোগ রয়েছে, মাঝেমধ্যে কিছু রাস্তার মেরামত হলেও নিম্নমানের কাজের কারণে স্বল্প সময়ের মধ্যেই রাস্তা আগের চেহারায় ফিরে আসে।

বৈরাগীবাজার থেকে কুড়ারবাজার হয়ে গোবিন্দশ্রী, মাথিউরা থেকে বহরগ্রাম হয়ে চন্দরপুর, বারইগ্রাম থেকে কালিবাড়ি বাজার হয়ে মুরাদগঞ্জ, শারোপার থেকে খাসাড়িপাড়া রাস্তাসহ উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রত্যেকটি রাস্তা ভেঙ্গে যেন কঙ্কাল বেরিয়ে গেছে। এসব রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় পিচ উঠে গেছে, উঠে গেছে ইটের খোয়া; এত বড় বড় গর্ত হয়েছে যে সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তাগুলোকে ডোবা মনে হয়। সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় উপজেলার ৪০ কিলোমিটার রাস্তার মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর এসব রাস্তার তালিকা পাঠানো হলেও এখনো পর্যন্ত বরাদ্দ আসেনি।

শুধু এসব সড়ক নয়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীন বিয়ানীবাজারের গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ সড়কই এরকম ভাঙাচোরা। এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এলজিইডির রাস্তাগুলোর ৭২ শতাংশের জরুরি সংস্কার প্রয়োজন। মন্তব্য করা হয়েছে, চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বরাদ্দের কারণেই গ্রামের রাস্তাঘাটের এমন যাচ্ছেতাই অবস্থা।

সংস্কার নয়, গুরুত্ব পায় নতুন সড়ক:

সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যমতে, সড়ক সংস্কার নয়, এলজিইডির লক্ষ্যই যেন বড় প্রকল্প নিয়ে নতুন সড়ক বানানো। তাই খুব কম অর্থই বরাদ্দ করা হয় সড়ক সংস্কার খাতে। এমনকি জনপ্রতিনিধি বা সংসদ সদস্যরাও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের জন্য তাদের বরাদ্দ দেওয়া অর্থ সচরাচর সড়ক সংস্কারে কাজে লাগান না। তাদেরও লক্ষ্য থাকে গ্রামের কাঁচা সড়ক পাকা করা। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যমতে, এমপিদের কাছে গ্রামের মানুষরা কাঁচা রাস্তা পাকা করার দাবি জানিয়ে থাকে। তাই সেদিকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়।

নিরাপদ সড়ক চাই বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখার সাবেক সহ-সভাপতি কাওছার আহমদ মনে করেন, জরুরিভিত্তিতে সংস্কার করা না গেলে গ্রামাঞ্চলের এসব সড়ক অচিরেই কাঁচা সড়কে পরিণত হবে। এর ফলে সরকারকে অর্থনৈতিকভাবে চড়া মাশুল দিতে হবে।

এলজিইডির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, জকিগঞ্জ-শেওলাসহ প্রায় একশটি সড়ক সংস্কার জরুরি। তবে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না পাওয়ায় রাস্তাগুলোর সংস্কার করা যাচ্ছে না।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.