সিলেটে সম্প্রতি একের পর এক নিখোঁজ হচ্ছে স্কুল ও মাদরাসার কিশোর ছাত্ররা। গত দুই সপ্তাহে ৫ জন কিশোর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে তিন জনকে পাওয়া গেলেও এখনো নিখোঁজ রয়েছে ২ জন। সন্ধান না পাওয়া কিশোরদের পরিবারের লোকজন দিশেহারা। পাশাপাশি সিলেটে প্রায় সকল অভিভাবকই দিন কাটাচ্ছেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়।


জানা যায়, গত দুই সপ্তাহে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিশ্বনাথের ৫ জন কিশোর চাত্র নিখোঁজ হয়। এর মধ্যে একজনকে একদিন পর ও দুইজনকে নিখোঁজের দিনই পাওয়া গেছে। দুজন এখনো নিখোঁজ। তাদের পারিবারিক সূত্র বলছে- কেউ কেউ পড়ালেখার ভয়ে স্বেচ্ছায় পালিয়েছে। তবে কারো নিখোঁজ হওয়ার রহস্যজট এখনো খুলেনি।


গোলাপগঞ্জ থেকে নিজস্ব সংবাদাতা জানান, এ উপজেলায় দুজন ছাত্র নিখোঁজ রয়েছে। একজন মাদরাসার, অপরজন স্কুলের। থানায় পৃথক দুটি জিডি করেছে তাদের পরিবার। বর্তমানে দিশেহারা তাদের বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যরা। 


জানা যায়, গোলাপগঞ্জে গত ৬ দিন ধরে ইয়াছিন আরাফাত তুহিন (১৬) নামে এক স্কুলছাত্র নিখোঁজ রয়েছে। সে উপজেলার পশ্চিম আমুড়া ইউনিয়নের আমুড়া বাঙালীগুল গ্রামের কাওছার আহমদের ছেলে। তার পরিবার গোলাপগঞ্জ পৌরএলাকার রণকেলী উত্তরগ্রামে বাসায় ভাড়া থাকে। সে গোলাপগঞ্জ জামেয়া ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র। ২২ জুন বিকেলে তুহিন বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরেনি। সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজ করেও এখন পর্যন্ত তাকে পাওয়া যায়নি। ২৭ জুন এ বিষয়ে থানায় জিডি করা হয়। 


তুহিনের মা স্বপ্ন বেগম বলেন, পরিবারের কারো সাথে তার কোনো সমস্যা হয়নি। এমনিতেই ওই দিন বিকেলবেলা সে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি।


অপরদিকে, গোলাপগঞ্জে ২ দিন ধরে মো.আবু বক্কর সিদ্দিক (১৯) নামে এক কুরআনে হাফেজ নিখোঁজ রয়েছেন। উপজেলার পশ্চিম আমুড়া ইউনিয়নের শিলঘাট গ্রামের ফখরুল ইসলামের ছেলে। তিনি জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর মাদরাসার কিতাব বিভাগের ছাত্র। 


জিডি সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ জুন বিকেল ৩টার দিকে আবু বক্কর সিদ্দিক মাদরাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। পরবর্তীতে তার পরিবার মাদরাসায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারে- সে মাদ্রাসায় যায়নি। এরপর সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজ করে এখন পর্যন্ত তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে ১ জুন থানায় ডায়েরি করা হয়েছে।


এদিকে, বুধবার (৩ জুলাই) ঢাকার একটি মাদরাসা থেকে হারিয়ে যায় সিলেটের বালাগঞ্জের কায়েস্তঘাট গ্রামের আব্দুল মালিকের ছেলে। তার নাম মারজান আহমদ (১৩)। সে ঢাকার দোহার এলাকার দারুল উলুম মাদরাসার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। তবে বুধবার বিকালেই তাকে স্বজনরা খুঁজে বের করেন।


সন্ধান পাওয়ার বিষয়টি সিলেটভিউ-কে নিশ্চিত করেছেন আব্দুল মালিক। ছেলে মারজান দূরের মাদরাসায় পড়বে না বলে পালিয়েছিলো বলে জানান তিনি।


অপরদিকে, সিলেটের দক্ষিণ সুমার লালাবাজার এলাকা থেকে বুধবার সকালে হারিয়ে যায় মাদরসাছাত্র সাইফ আহমদ (১৫)। সে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের সাইফ আহমদ ছয়ফুল ইসলামের ছেলে। তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে লালাবাজার এলাকার খাজাকালু গ্রামের মাঝবাড়িতে থাকে। সে স্থানীয় একটি মাদরাসায় হিফজ বিভাগে পড়ে। বুধবার সকালে মাদরাসায় যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়, কিন্তু সে মাদরাসায় যায়নি- বিকালে বাড়িও ফিরেনি। পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজি করে সুনামগঞ্জ থেকে তাকে উদ্ধার করেন। তবে সে কী জন্য বা কীভাবে নিখোঁজ হয়েছিলো এ ব্যাপারে মুখ খুলছে না। 


খুঁজে পাওয়ার বিষয়টি সাইফের বাবা সিলেটভিউ-কে নিশ্চিত করেছেন। 


এছাড়া গত ৩০ জুন সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চি ইউনিয়নের তেলিকোনা গ্রামের মখলিস হোসেনের ছেলে ফারহান আহমদ (১৩) নিখোঁজ হয়। পরদিন তাকে দক্ষিণ সুরমার তেলিবাজার এলাকায় সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের পাশ থেকে উদ্ধার করেন স্বজনরা। তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। সে একদিন কোথায় ছিলো বা কারা নিয়ে গিয়েছিলো এসব বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারছে না।


আমিনুল ইসলাম নামে দক্ষিণ সুরমার এক ব্যক্তি সিলেটভিউ-কে বলেন- এ খবরগুলো আমরা অভিভাবকদের উদ্বীগ্ন করছে। আমারও ছেলে ক্লাস সেভেনে পড়ছে। এখন তাকে আমি নিজে বাইকে করে স্কুলে পৌঁছে দেই এবং ছুটির সময় নিজে গিয়ে নিয়ে আসি।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.