সিলেটজুড়ে আশঙ্কাজনক হারে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলছে। চারদিনে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত নয় জন। গত ২৮ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত সড়কে প্রাণ হারানোর মধ্যে মা-ছেলে, স্বামী-স্ত্রী, শিক্ষার্থী ও শিশু, হাসপাতাল ফেরত নারীসহ কর্মক্ষম লোকজন রয়েছেন। এর মধ্যে গত সর্বশেষ সোমবার (২ জুলাই) সন্ধ্যায়  ট্রাক ও প্রাইভেটকার সংঘর্ষে প্রাণ হারান স্বামী-স্ত্রী।

দুর্ঘটনায় নিহত লোকজনের পরিবারে আয় উপার্জনের অভাবে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন। প্রাণহানির পাশাপাশি অনেকেই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারিয়ে সারাজীবন বয়ে বেড়াচ্ছেন দুর্ঘটনার ক্ষত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর অন্যতম কারণ চালকের দায়িত্ববোধের অভাব। এছাড়া সংযোগ সড়ক, রোড মার্কিং না থাকা, ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট ও সড়কে অটোরিকশার অবাধ চলাচল দুর্ঘটনা বৃদ্ধির পেছনে মূল কারণ।

এদিকে সংকীর্ণ রাস্তা, বেপরোয়া গতি আর চালকদের অসচেতনতার এমন দুর্ঘটনা হচ্ছে বলে মনে করছে সিলেট হাইওয়ে পুলিশ।

স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু :
সোমবার (২ জুলাই) সন্ধ্যায় সিলেট-ভোলাগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মহাসড়কে ওসমানী বিমানবন্দর সংলগ্ন ধোপাগুল এলাকায় ট্রাক ও প্রাইভেটকার সংঘর্ষে প্রাণ হারান স্বামী-স্ত্রী। নিহতরা হলেন- মৌলভীবাজার জেলার জুড়ি উপজেলার বড়ধামাই গ্রামের আবদুল মালেকের ছেলে আবদুস সবুর মিয়া (২৭) ও তার স্ত্রী রাহেনা আক্তার (২২)। দুর্ঘটনায় আরও দুইজন আহত হয়েছেন। তাদেরকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হতাহতদের সবাই প্রাইভেটকার যাত্রী ছিলেন।

শিশুসহ দুজন নিহত :
সোমবার (২ জুলাই) রাত আটটার দিকে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের রাস্তা ভুনবীর ইউনিয়নের পাত্রীকুল এলাকায় ভুনবীর-শমসেরগঞ্জ সড়কে পার হওয়ার সময় ট্রাকের চাপায় শিশুসহ দুজন নিহত হন। নিহত দুজন হলেন- ভুনবীর ইউনিয়নের আলী শারকুল গ্রামের দুদু মিয়ার মেয়ে মুন্নী (৭) ও তার খালা পেয়ারা বেগম (৪৫)। পেয়ারার বাড়ি একই ইউনিয়নের পাত্রীকুল গ্রামে।

মুন্নী তাঁর খালার বাড়ি থেকে খালার সঙ্গে নিজ বাড়িতে আসছিল। খালার বাড়ির পাশের রাস্তা পার হওয়ার সময় বালু বহনের কাজে ব্যবহৃত একটি খালি ট্রাক তাঁদের চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই পেয়ারা বেগম মারা যান। মুন্নীকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য  সিলেট পাঠানো হয়। তবে নিয়ে যাওয়ার পথে সেও মারা যায়।

দক্ষিণ সুরমায় নিহত এক :
সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে ১জন নিহত হন। সোমবার রাত ১১টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার সাতমাইল এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম গোলাপ মিয়া (৫৫)। তিনি  সিলেট নগরীর টুকেরবাজার নোয়াগাঁও এলাকার মৃত ওয়াদিদ আলীর ছেলে।

জানা যায়, গ্রিন লাইন সার্ভিসের একটি বাস সিলেট থেকে ঢাকা যাচ্ছিল। রাত সাড়ে ১১টার দিকে দক্ষিণ সুরমার সাতমাইল এলাকায় আসামাত্র সিলেটগামী অটোরিকশার সাথে মুখোমুখী সংঘর্ষ হয়। দুর্ঘটনায় অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং এর এক যাত্রী ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান।

মা-ছেলের মৃত্যু :
সিলেট-ভোলাগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সড়কে বেপরোয়া ট্রাকের ধাক্কায় অটোরিকশায় থাকা যাত্রী মা ও ছেলে নিহত হন। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও দুজন। রোববার (৩০ জুন) বিকেলে দিকে বঙ্গবন্ধু সড়কের খাগাইল এলাকার পেট্রোল পাম্পের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- নরসিংদী জেলা সদরের খামারগাও এলাকার দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী স্মৃতি আক্তার (২৫) ও শিশু সন্তান আব্দুল্লাহ (৭)। আহত হয়েছেন দেলোয়ার ও অটোরিকশাচালক গুরুতর আহত হয়েছেন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় স্মৃতি ও তার ছেলে ঘটনাস্থলে মারা গেছেন। তারা কোম্পানিগঞ্জের সাদা পাথর পর্যটন এলাকায় ঘুরতে গিয়েছিলেন।

চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরা হলো না রেখা বেগমের
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার পথে ট্রাক ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে রেখা বেগম (৪০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরও ৪ জন। নিহত রেখা বেগম সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ভাতগাঁও ইউনিয়নের জিগলী গ্রামের সুহেল মিয়ার স্ত্রী।

রোববার (৩০ জুন) বিকেল সাড়ে ৪টায় সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের কলকলিয়া ইউনিয়নের খালিশ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

সিএনজির ধাক্কায় কলেজছাত্র নিহত :
জেলার কানাইঘাটে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় শাহরিয়ার আহমদ স্বপ্ন (১৯) নামে এক কলেজছাত্র নিহত হন। শুক্রবার (২৮ জুন) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার সড়কের বাজার রামপুর যাত্রী ছাউনির সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত শাহরিয়ার আহমদ স্বপন (১৯) সিলেট মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের বিএ অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি জকিগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের ভরন গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে।

বৈরাগীবাজার নিউজ ডটকম।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.