রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির নিষিদ্ধ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে আজ বুধবার (২৮ আগস্ট) প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

এর আগে, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করা হয় গত ১ আগস্ট। চারদিনের ব্যবধানে ৫ আগস্ট আন্দোলনের মুখে পতন ঘটে তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের।

ক্ষমতার পালাবদলে জামায়াত-শিবিরের নিষিদ্ধের আদেশ আজ প্রত্যাহার হলো।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যেহেতু, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কয়েকটি মামলার রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (পূর্বনাম জামায়াত-ই-ইসলামী/জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ) এবং উহার অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে (পূর্বনাম ইসলামী ছাত্রসংঘ) ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ী হিসেবে গণ্য করা হইয়াছে।

আরও বলা হয়, যেহেতু বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে রাজনৈতিক দল হিসাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন বাতিল করিয়া দিয়াছে এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগের উক্ত রায়কে বহাল রাখিয়াছে। যেহেতু, সরকারের নিকট যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ রহিয়াছে যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং উহার অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সাম্প্রতিককালে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সরাসরি এবং উসকানির মাধ্যমে জড়িত ছিল; এবং যেহেতু, সরকার বিশ্বাস করে যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সহিত জড়িত রহিয়াছে। সেহেতু, সরকার, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা ১৮(১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করিল। উক্ত আইনের তফসিল-২ এ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্ত্বা হিসাবে তালিকাভুক্ত করিল।

জামায়াতে ইসলামীর নিষিদ্ধ পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলে একাধিকবার ঘটেছে। স্বাধীন বাংলাদেশে একাত্তরের স্বাধীনতার বিরোধিতা করা জামায়াতকে ১৯৭২ সালে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহারের’ কারণে। পরে জিয়াউর রহমানের আমলে তারা রাজনীতি করার অধিকার ফিরে পায়।

জিয়াউর রহমানের আমলে রাজনীতি করার অধিকার ফিরে পাওয়া জামায়াতকে নিষিদ্ধের দাবি সেই নব্বইয়ের দশকেই সামনে এসেছিল শহিদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলন থেকে। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের সময় তা আরও জোরালো হয়। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর তখনকার আমির গোলাম আযমকে ২০১৩ সালে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে জামায়াতে ইসলামীকে ‘ক্রিমিনাল দল’ আখ্যায়িত করেছিল আদালত।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.