ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সরকারের পতনের পর অজানা পরিস্থিতিতে পড়েছে বিয়ানীবাজার আওয়ামী লীগ। দেড়যুগ পর অপ্রত্যাশিত এই ভূতুড়ে পরিবেশ কল্পনাই করতে পারেনি দলীয় নেতাকর্মীরা। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর থেকে বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশের কারণে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা তেমন বাইরে বের হননি।

গত ২০ আগস্টের পর থেকে সব হিসাব পাল্টাতে শুরু করে তাদের। এদিন প্রথম হত্যা মামলা দায়েরের পর থেকে আত্মগোপনে চলে যান দলটির নেতাকর্মীরা।

এরপর সরকার পতনের দিন ৫ আগস্টের ঘটনার জের ধরে একে-একে চারটি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় ধারাবাহিকভাবে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের আসামি করা হলে এক অনিশ্চিত দিন গুনতে শুরু করেন তারা। তবে আত্মগোপনে থাকলেও পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা কম থাকায় কিছুটা নির্ভার ছিলেন সদ্য ক্ষমতা হারানো দলটির সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী। চারটি মামলায়ই আসামি হয়েছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক তাহমিদ। তিনি চিনি ছিনতাই ঘটনায় পৃথক আরেকটি মামলাসহ মোট ৬টি মামলার আসামি।

এরপরই আছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব। তিনিও বিয়ানীবাজার থানার ৩টি, গোলাপগঞ্জ থানার ২টি এবং সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকায় দায়ের হওয়া আরও ২টি মামলার আসামি। বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ বিয়ানীবাজার থানায় ২টি, গোলাপগঞ্জ থানায় দায়ের হওয়া আরও ৫টিসহ মোট ৭ মামলার আসামি।

সম্প্রতি বিয়ানীবাজার থানায় নতুন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এনামুল হক চৌধুরী যোগদানের পর ফের দুঃশ্চিন্তায় পড়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। ৫ আগস্টের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় নতুন গতি পায়। শুক্রবার বিকেল থেকে পরিস্থিতি আরেও অবনতি হতে থাকে। হঠাৎ করে ধরপাকড় শুরু করে থানা পুলিশ। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম রোকন (৩৭) ও ছাত্রলীগ নেতা কলিম উদ্দিনকে (৩৪) গ্রেপ্তার করার খবর ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন নেতাকর্মীরা। গ্রেপ্তারকৃত দু’জনই হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামি।

পুলিশি অভিযানের পর বাসা-বাড়িতে থাকা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা নিরাপদ অবস্থানে চলে যেতে থাকেন। অনেকেই ফোন বন্ধ করে পৃথক স্থানে আত্মগোপনে চলে যান। সন্ধ্যার পর থেকে পৌরশহরের কোথাও আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক কাউকে দেখা যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আওয়ামী লীগ নেতা জানান, রাজনীতির এমন পরিস্থিতিতে হতাশায় আচ্ছন্ন কর্মী-সমর্থক ও অনুসারীরা। নিরাপত্তাহীনতাও প্রবলভাবে জেঁকে বসেছে আমাদের ভেতরে। শুনেছি আরেও মামলা দায়ের করা হবে। আসলে আমাদের রাজনৈতিক এতিম বলে মনে হচ্ছে।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উপজেলা পর্যায়ের অনেক নেতাই মোবাইল নাম্বার বন্ধ রেখেছেন, পরিবর্তন করে নতুন নাম্বার নিয়েছেন। নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিয়ে বসে আছেন।

অবশ্য বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গত ১৬টি বছর পথে-ঘাটে, জঙ্গলে কাটিয়েছে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ অল্পদিনেই হাঁপিয়ে ওঠলো।

বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এনামুল হক চৌধুরী বলেন, কোন বিশেষ ধরপাকড় নয়, নিয়মিত মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। পুলিশের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.