সিলেটে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত নভেম্বরজুড়ে তান্ডব চালিয়েছে রোগটি। পুরো বছরের মধ্যে শুধু নভেম্বরেই  সিলেট বিভাগে ১৩৪ আক্রান্ত হয়েছেন। চলতি ডিসেম্বরেও ডেঙ্গু আক্রান্তের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। মহামারির আগে এডিস মশার বিস্তার ঠেকাতে না পারলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ারও আশঙ্কা রয়েছে।


এদিকে সিলেটে গত বছর (২০২৩) ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হাজার পেরোলেও এবছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমেছে। তবে চলতি বছরের নভেম্বর মাসে সিলেট বিভাগে ১৩৪ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এতে নতুন করে শুরু হয়েছে উৎকণ্ঠা।


স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, সিলেট বিভাগে গত বছর ১ হাজার ৪৩৫ জন। চলতি বছর (২ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ২৯৯ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। তবে এ বছর সিলেটে ডেঙ্গুতে কোন মৃত্যু হয়নি।  বর্তমানে সোমবার (২ ডিসেম্বর) পর্যন্ত সিলেট বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২০ জন। তবে এটা ডেঙ্গু রোগীর আসল চিত্র নয়। কারণ অনেকে অসুস্থ হওয়ার পর চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেকে  বেসরকারিভাবে ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্য পেয়ে বাসাবাড়িতে চিকিৎসা নিয়েও ভালো হয়ে যাচ্ছেন।


স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে সিলেট বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৩০৮ জন। এরমধ্যে সিলেটে ৭৩ জন, সুনামগঞ্জে ৩৫ জন, মৌলভীবাজারে ২৪ জন এবং হবিগঞ্জে ১৬৭ জন। এছাড়াও নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নরসিংদী ও ঢাকার আরও ৯জন সিলেটে আক্রান্ত হয়েছেন।


চলতি বছরে সিলেট মহানগরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২৭ জন আর নভেম্বর মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৬ জন। এব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন,  সিলেটে ডেঙ্গু আক্রান্ত চিকিৎসাধীন রোগীদের শারীরিক অবস্থা ভালো রয়েছে। আক্রান্তদের বেশীরভাগের ট্রাভেল হিস্ট্রি রয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থেকে বাহকের শরীরে করে এই ভাইরাস সিলেটে এসে ছড়িয়েছে।
 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলেটে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ জনসচেতনতার অভাব। সাম্প্রতিক সময়ে যখন ঢাকায় ভয়াবহ তখনও সিলেট ছিল নিরাপদ। কিন্তু কিছু দিন থেকে ঢাকা থেকে বাহকের শরীরে করে এই ভাইরাস সিলেটে এসে ছড়িয়েছে। এছাড়াও আক্রান্ত হওয়ার পর যথাসময়ে চিকিৎসার আওতায় আসতে না পারার কারণে ডেঙ্গু রোগীকে বিপজ্জনক অবস্থার মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে।


স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকে। কারণ এ সময়টিতে এডিস মশার বিস্তার ঘটে। ডেঙ্গুর বিস্তার ঠেকাতে প্রতিরোধ ছাড়া কোনো উপায় নেই। যেখানে পানি জমে, সেখানে মশার আবাসস্থল হয়ে ওঠে। মশার বিস্তার যেন না ঘটে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। ঘুমানোর আগে অবশ্যই মশারি টানাতে হবে।


এদিকে সিলেট মহানগরীতে মশার উপদ্রব বেড়েছে। মশার উৎপাতে দিনের বেলাও মশারি টানিয়ে, কয়েল জ্বালিয়ে বা অ্যারোসল স্প্রে করেও মশা থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। তবে মশক নিধনে নজর নেই সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক)। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মশা নিধনের প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুদ নেই তাদের কাছে।


সিলেট সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, প্রায় এক বছর থেকে নানা সঙ্কটের কারণে মশকনিধন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই সিসিকের পরিষদে আলোচনা হয়েছে। তবে কিছু কিছু স্থানে মশকনিধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.