আফগান রূপকথার গল্পে যুক্ত হলো নতুন অধ্যায়। বড় টুর্নামেন্টে আইসিসির ইভেন্টে একের পর এক বড় শিকার ধরছে আফগানরা। এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ রানের ঐতিহাসিক এক জয় তুলে নিলো আফগানিস্তান। দুরন্ত ক্রিকেট খেলে ইংল্যান্ডকে বাড়ির পথ দেখিয়েছে আফগানরা।

দারুণ মহাকাব্যিক এক জয় আফগানদের। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় আফগানিস্তান। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৭ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে আফগানরা। দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগেই বিদায় নিয়েছেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ, সেদিকউল্লাহ আতাল এবং রহমত শাহ। তবে এক প্রান্ত ধরে টিকে ছিলেন ইবরাহিম জাদরান।

রহমতের বিদায়ের পর ইবরাহিমের সাথে যোগ দিয়েছেন অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদি। এক প্রান্ত ধরে এগোতে থাকেন ইবরাহিম। শহীদিও ক্রিজে জমে যান। ফিফটি ছুঁয়ে ছুটতে থাকেন ইবরাহিম। শহীদিও ফিফটির পথেই ছিলেন।
 
ফিফটির পথে থাকলেও ফিফটি ছোঁয়া হয়নি আফগান অধিনায়কের। ৬৭ বলে ৪০ রান করে আউট হয়েছেন শহীদি। ৪র্থ উইকেটে ইবরাহিম এবং শহীদি মিলে যোগ করেছেন ১০৩ রান। এরপর ইবরাহিমের সাথে যোগ দেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে রান তুলেছেন ওমরজাই। ইবরাহিমও বাড়িয়েছেন রানের গতি।

 
তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার ছুঁয়ে ফেলেন ইবরাহিম। দারুণ এক সেঞ্চুরিতে দলের ইনিংসকে টানতে থাকেন আফগান ওপেনার। সেঞ্চুরি ছুঁয়েই অবশ্য থামেননি তিনি। চালিয়ে গেছেন নিজের ইনিংস।

আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ৩১ বলে ৪১ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলে বিদায় নিয়েছেন ওমরজাই। ইবরাহিমের উইলো ছুটছিল। মোহাম্মদ নবী ক্রিজে এসে শুরু করেন ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং। ইবরাহিম ছুঁয়ে ফেলেন দেড়শ। সম্ভাবনা ছিল ২০০ করারও। তবে শেষের ওভারে আউট হয়েছেন আফগান ওপেনার। সাজঘরে ফেরার আগে ১৪৬ বলে ১৭৭ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলেছেন ইবরাহিম জাদরান।

 
নির্ধারিত ৫০ ওভারের খেলা শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩২৫ রানের পুঁজি দাঁড় করায় আফগানিস্তান।

 
ইংল্যান্ডের হয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন জফরা আর্চার। ২ উইকেট নিয়েছেন লিয়াম লিভিংস্টোন। ১টি করে উইকেট নেন আদিল রশিদ এবং জেমি ওভারটন।

জবাব দিতে নেমে শুরুতে হোঁচট খেয়েছে ইংল্যান্ডও। ১২ বলে ১৩ রান করে দলের ১৯ রানের মাথায় আউট হন ওপেনার ফিল সল্ট। তিনে নেমে সুবিধা করতে পারেননি জেমি স্মিথও। দলের ৩০ রানের মাথায় আউট হন স্মিথ, করেছেন ১৩ বলে ৯ রান।

 
এরপর টিকে থাকা ওপেনার বেন ডাকেটের সাথে জুটি বাঁধেন জো রুট। ভালো শুরু পাওয়া ডাকেট ফিফটির পথে ছিলেন। রুটও এগিয়েছেন সাবলীল ব্যাটিংয়ে। দুজনের জুটি থেকে আসে ৬৮ রান। ডাকেট বিদায় নেন ফিফটি ছোঁয়ার আগেই। ৪৫ বলে ৩৮ রান করে বিদায় নিয়েছেন ইংলিশ ওপেনার।

 
সেঞ্চুরি হাঁকিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি রুট। রুটের সাথে যোগ দেন হ্যারি ব্রুক। শুরুটা ভালো হলেও ইনিংস লম্বা হয়নি ব্রুকের। ২১ বলে ২৫ রান করে বিদায় নেন ব্রুক। এরপর অধিনায়ক জস বাটলারের সাথে ভালো একটি জুটি হয় রুটের। কার্যকরী ব্যাটিংয়ে ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন রুট।

 
বাটলারও ছন্দে ছিলেন। উইকেটের চার দিকে দারুণ সব শটে রান তুলেছেন রুট-বাটলার। রুট এগিয়েছেন সেঞ্চুরির দিকে। ফিফটির পথে ছিলেন বাটলার। তবে দলের ২১৬ রানের মাথাতে ৪২ বলে ৩৮ রান করে বিদায় নেন বাটলার। রুট-বাটলারের জুটিটা ভাঙেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। জমে যেতে থাকে ম্যাচ।

ধীরে ধীরে ম্যাচ থেকে ইংল্যান্ডকে ছিটকে দিতে থাকে আফগানিস্তান। একের পর এক উইকেট হারিয়েছে ইংল্যান্ড। তবুও চলেছে লড়াই। রুট ছুঁয়েছেন সেঞ্চুরি। ১১১ বলে ১২০ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলে দলের ২৮৭ রানের মাথাতে আউট হন রুট। সেখানেই যেন ম্যাচটা প্রায় জিতে যায় আফগানিস্তান। 

রুটের বিদায়ের পরেও চলেছে লড়াই। একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন জেমি ওভারটন। তবে ২৮ বলে ৩২ রান করে দলের ৩০৯ রানের মাথায় বিদায় নেন ওভারটনও। শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৩ রান, হাতে ১ উইকেট। আদিল রশিদ এবং মার্ক উড মিলে ৪ বলে নেন ৪ রান। শেষের আগের বলে আউট হন রশিদ। ৮ রানে ম্যাচটা জিতে নেয় আফগানিস্তান।

আফগানদের হয়ে ৫ উইকেট নিয়েছেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। ২ উইকেট নেন মোহাম্মদ নবী। ১টি করে উইকেট শিকার করেছেন ফজলহক ফারুকী, গুলবাদিন নাইব এবং রশিদ খান।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.