‘শাহবাজপুর-থানাবাজার সড়কের অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে আমাদের প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। সবচেয়ে কষ্ট হয় রোগীদের নিয়ে যাতায়াতের সময়। কয়েক দিন আগে এক সন্তানসম্ভবা নারীকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে গাড়ি গর্তে পড়ে এমন ঝাঁকুনি খায় যে, তাঁর গর্ভেই সন্তান নষ্ট হয়ে যায়।’

এভাবেই মৌলভাবাজারের বড়লেখা উপজেলার শাহবাজপুর-দৌলতপুর-থানাবাজার সড়কে যানবাহন চালানোর ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা দিচ্ছিলেন কার চালক কবির আহমদ। শুধু কবিরই নন, প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে চালক ও যাত্রীরা এরকমন নানা ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছেন। 

স্থানীয় বাসিন্দা ও যানবাহন চালকদের অভিযোগ, এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ চলাচল করেন। তবে সড়কটির করুণ অবস্থার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে তাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে কোনো লাভ হচ্ছে না। স্থানীয়রা দ্রুত সড়কটি মেরামতের দাবি জানিয়েছেন। 

সরেজমিন দেখা গেছে, শাহবাজপুর থেকে থানাবাজার পর্যন্ত প্রায় পুরো সড়কজুড়েই ছোট-বড় গর্ত। ভারী যানবাহনের চাপে সড়কের অনেক অংশ দেবে গেছে। আবার কোথাও পিচ উঠে গেছে। সড়কের বিভিন্ন গর্তের বৃষ্টির পানি জমে গর্তগুলো আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।

অটোরিকশা চালক আবু সাঈদ ও আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এই সড়ক দিয়ে তারা  গাড়ি চালাতে গিয়ে নানা তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছেন। যেখানে আগে সড়ক পার হতে বিশ মিনিট সময় লাগত, এখন প্রায় ঘন্টাখানেক সময় লাগছে।  প্রায় দুর্ঘটনা ঘটছে। আমাদের বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে।

শিক্ষার্থী ছাইদুল ইসলাম বলেন, এই সড়কটি শুধু একটি যোগাযোগের পথ নয়, এটি এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা, শিক্ষা, ব্যবসা ও জরুরি সেবার স্বাভাবিক প্রবাহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় এটি জনদুর্ভোগের প্রতীক হয়ে উঠেছে। এতদিন অপেক্ষার পর আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে পড়েছে। আমি সংশ্লিষ্টদের দ্রুত সড়কটি সংস্কারের দাবি জানাই।

উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক কাওছার হামিদ ছুন্নাহ বলেন, সড়কের বেহাল দশায় মানুষ অতিষ্ঠ। শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী, যানচালক, ব্যবসায়ী-সবাই আজ ঐক্যবদ্ধ। আর কোনো অজুহাত আমরা মানব না। অবিলম্বে সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু করতে হবে। তা না হলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব।

মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির নেতা মুজিব রাজা চৌধুরী, সড়কটি সংস্কারের জন্য আমরা বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিয়েছি। আমাদের কেউ বলেছেন, টেন্ডার হয়েছে। কেউ বলেছেন, প্রক্রিয়াধীন। গত কয়েকদিন আগে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে বলেছিলাম, তিনি বলেছেন টেন্ডার হয়ে গেছে। তিনি প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, টেন্ডার হয়ে গেলে কাজ কোথায়। তিনি বলেন, আমরা টেন্ডার প্রক্রিয়া এসব বুঝি না। আমরা চাই দৃশ্যমান কাজ। আমরা ইতিমধ্যে মানববন্ধন করেছি। সড়কের কাজ দ্রুত না হলে আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শাহবাজপুর-দৌলতপুর-থানাবাজার সড়কটি বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের শাহবাজপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বর থেকে শুরু হয়ে দৌলতপুর বাজার হয়ে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার থানাবাজারে গিয়ে বিয়ানীবাজার-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এক সময় শাহবাজপুর থেকে দৌলতপুর পর্যন্ত সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় ছিল। বর্তমানে এটি মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অধীনে রয়েছে। দৌলতপুর ব্রিজের কানলী এলাকা থেকে  থানাবাজার পর্যন্ত সড়ক সিলেট সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অধীনে রয়েছে। তবে গত কয়েক বছরে শাহবাজপুর-দৌলতপুর-থানাবাজার সড়কে কোনো ধরনের সংস্কার কাজ হয়নি।  এতে সড়কের বিভিন্নস্থানে অসংখ্য গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। এতে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। স্থানীয়রা বিভিন্ন সময় সড়কটি সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসলেও কোনো লাভ হয়নি। এই অবস্থায় সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবিতে গত বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনসাধারণ ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদ মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেন এবং তারা সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান।

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়সার হামিদ বলেন, সড়কটি সংস্কারের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এখন অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। অনুমোদন পেলেই এক থেকে দুই মাসের মধ্যে সংস্কার কাজ শুরু হবে।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.