বিয়ানীবাজারে একই গ্রামের বান্ধবীর বাড়িতে যাওয়ার পর হাবিবা জান্নাত তামান্না (২২) নামের এক তরুণী নিখোঁজের প্রায় সাড়ে তিন মাসেও কোনো হদিস মেলেনি। রহস্যজনক এই নিখোঁজের ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কুড়ারবাজার ইউনিয়নের উত্তর আকাখাজানা গ্রামে।
এ ঘটনায় গত ২৬ জুন তাছলিমা জান্নাত নামের এক প্রতিবেশি তরুণীসহ চারজনের নামোল্লেখ করে বিয়ানীবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন নিখোঁজ হাবিবা জান্নাত তামান্নার বড়বোন রাহেলা আক্তার। তবে এ ঘটনায় পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
নিখোঁজ হাবিবা জান্নাত তামান্না উপজেলার কুড়ারবাজার ইউনিয়নের উত্তর আকাখাজানা গ্রামের হতদরিদ্র দিনমজুর মৃত নিজাম উদ্দিনের মেয়ে।
নিখোঁজ তরুণীর স্বজনরা জানান, একই মাদ্রাসায় দাখিল পড়াকালীন হাবিবা জান্নাত তামান্নার সঙ্গে উত্তর আকাখাজানা গ্রামের কুয়েত প্রবাসী আব্দুল বাছিতের মেয়ে তাছলিমা জান্নাতের সঙ্গে গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠে। দুই বান্ধবীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় প্রায়শই দুজনেরই উভয় বাড়িতে যাওয়া-আসা, এমনকি একে অন্যের বাড়িতে রাত্রীযাপনও ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। গত ২২ জানুয়ারি সকালে অন্যান্য দিনের মতোই তাছলিমা জান্নাতের বাড়িতে যায় হাবিবা জান্নাত তামান্না। এরপর তাছলিমার মা হাবিবার ভাই হায়াত আহমদকে মুঠোফোনে হাবিবাকে তাদের বাড়িতে কিছুদিন রাখতে চাওয়ার অনুরোধ করলে তিনি আর মানা করতে পারেননি। পরে ১৪ মার্চ রাত পর্যন্ত হাবিবার সাথে তার ভাই-বোনের মুঠোফোনে যোগাযোগ থাকলেও পরদিন ১৫ মার্চ থেকে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ২/১ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও যখন হাবিবা পরিবারের সাথে যোগাযোগ না করায় স্বজনদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ে। তারা ছুটে যান তাছলিমাদের বাড়িতে। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, কাউকে কোন কিছু না জানিয়ে তাছলিমা ও তার মা, ভাই-বোন অন্য কোথাও চলে গেছেন। কিন্তু কোথায় গেছেন, কেউই জানে না। পরবর্তীতে গ্রাম্য সালিশের দ্বারস্থ্য হন হাবিবা জান্নাত তামান্নার পরিবার। কিন্তু সালিশে সময়ক্ষেপণ হলেও হদিস মিলেনি হাবিবা জান্নাত তামান্না এবং তাছলিমা জান্নাত ও তার মা-ভাই-বোনের।
নিখোঁজ তরুণীর বড়বোন রাহেলা আক্তারের দাবি, গত ২২ জানুয়ারি সকালে তাছলিমার ফোন পেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে হাবিবা আর ফেরেনি। তিনি বলেন, ‘কোন উপায় না পেয়ে বোনের খোঁজ পেতে বিয়ানীবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি। আমার বোনকে তাছলিমা ও তার মা-ভাই মিলে লুকিয়ে রেখেছে। তাছলিমাদের অবস্থান জানতে পারলেই আমার বোনের সন্ধান পাওয়া যাবে।’
নিখোঁজের প্রায় সাড়ে ৩ মাস অতিবাহিত হলেও কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেননি- এমন প্রশ্নের জবাবে হাবিবার বোন রাহেলা আক্তার জানান, ‘মা-বাবা নেই, আমরা এতিম। তার উপর আমার ভাই-বোনেরা সবাই সমাজের অন্য মানুষদের চেয়ে একটু আলাদা, সহজ-সরল প্রকৃতির। তাছাড়া আমরা বোন তার বান্ধবী তাছলিমার বাড়িতে বসবাস করছে- বিষয়টা আমাদের কাছে স্বাভাবিক মনে হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও যখন বোনের সন্ধান পেলাম, তখন বাধ্য হয়েই পুলিশের কাছে গিয়েছিলাম।
স্থানীয় বাসিন্দা সমছ উদ্দিন, আজাদ উদ্দিন ও খলিলুর রহমান জানান, ‘হাবিবার পরিবারের লোকজন আমাদের ঘটনাটি জানালে আমরা স্থানীয় কয়েকজন মিলে তাছলিমার চাচা জুনেল আহমদকে অবগত করি। তিনি কয়েকদিনের সময় নিয়ে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও এর সমাধান দিতে পারেননি। একপর্যায়ে তাছলিমার বাবা কুয়েত প্রবাসী আব্দুল বাছিতের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের খোঁজ জানেন না বলে জানান। পরবর্তীতে আমরা ভুক্তভোগী পরিবারকে আইনী সহায়তা নেয়ার পরামর্শ দিই।’
তাছলিমার চাচা ব্যবসায়ী জুনেল আহমদ জানান, ‘স্থানীয়রা তার কাছে বিচারপ্রার্থী হওয়ায় তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা করেও তারা ভাইয়ের স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন। তাছাড়া পারিবারিক বিরোধের কারণে আব্দুল বাছিত কিংবা তার পরিবারের সাথে তাদের কোন যোগাযোগ নেই।’ তিনি জানান, ‘আমার ভাইয়ের স্ত্রী ও সন্তানরা বর্তমানে বাড়িতে নেই। কোথাও আছে সেই খবরটিও আমরা কেউই জানি না।’
কুড়ারবাজার ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য দেলোয়ার হোসেন জানান, ‘নানাভাবে চেষ্টা করেও যখন আমরা হাবিবার সন্ধান পেতে ব্যর্থ হই, তখন ভুক্তভোগী পরিবারকে আইনী সহায়তা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছি।’ একই এলাকার মানুষ হয়েও হাবিবার সাথে সাথে তাছলিমার পরিবারের লোকজনের সন্ধান পাওয়া সম্ভব হয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রবাসী আব্দুল বাছিতের পরিবারের সাথে কারো খুব একটা যোগাযোগ নেই। তারা হুট করে কোথায় চলে গিয়েছে কেউই জানে না। আব্দুল বাছিতের আপন ভাই যেখানে জানে না বলেছে, সেখানে আমরা তো পাড়া-প্রতিবেশী।’
অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আল আমিন জানান, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে আমরা ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলেছি এবং অভিযুক্তদের মুঠোফোন নম্বরগুলো সংগ্রহ করেছি। অভিযুক্তদের অবস্থান শনাক্ত করতে আমরা তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নিচ্ছি। কারণ, তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে পারলেই মূল রহস্য উন্মোচিত হবে।’
এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আশরাফ উজ্জামান জানান, ‘আমরা নিখোঁজ হাবিবা জান্নাত তামান্নার পরিবারের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি বর্তমানে তদন্তনাধীন আছে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.