কিংস্টনের স্যাবাইনা পার্কে তৃতীয় টেস্টে সোমবার ২০৪ রানের সহজ লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২৭ রানে গুটিয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মিচেল স্টার্ক ও স্কট বোল্যান্ডের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ধসে পড়ল ক্যারিবীয় ব্যাটিং লাইনআপ।

‎স্টার্কের টেস্ট ক্যারিয়ারের শততম ম্যাচ যেন ভাগ্য নিজেই সাজিয়ে রেখেছিল গোলাপি বলের জন্য। কিন্তু কেউই কল্পনা করেনি যে, কিংস্টনের তৃতীয় দিনে এমন ধ্বংসযজ্ঞ হবে। নিজের প্রথম ওভারেই তিনি ৩টি উইকেট তুলে নেন এবং মাত্র ১৫ বলে টেস্ট ইতিহাসের দ্রুততম পাঁচ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়েন—যার মধ্যে ছিল তাঁর ৪০০তম উইকেটও।

‎তবে নাটকীয়তা এখানেই শেষ হয়নি। স্কট বোল্যান্ড হ্যাটট্রিক করে সাজঘরে পাঠান জাস্টিন গ্রেভস, শামার জোসেফ ও জোমেল ওয়ারিকানকে। তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর ছিল ২৬/৯—একদম কাছাকাছি ১৯৫৫ সালে নিউজিল্যান্ডের করা টেস্ট ইতিহাসের সর্বনিম্ন ২৬ রানের রেকর্ডের।

‎সাম কনস্টাসের গালিতে একটি সহজ মিসফিল্ডের কারণে রেকর্ডটা একরকম রক্ষা পায়, তবে পরের বলেই স্টার্ক নিজের ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে ইনিংসের ইতি টানেন—৬ উইকেট ৯ রানে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলআউট হয় মাত্র ১৪.৩ ওভারে।

‎২৭ রান: টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ইনিংস।

‎১৪.৩ ওভারেই অলআউট।

‎৭ জন ব্যাটার ডাক মেরে ফিরেছেন—টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবার।

‎শীর্ষ ছয় ব্যাটারের সম্মিলিত রান মাত্র ৬—এটিও রেকর্ড।

‎ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইতিহাসে আগের সর্বনিম্ন ছিল ৪৭ রান, এবার সেটিও ছাড়িয়ে গেল।

ক্রিকেটের রাজকীয় সংস্করণে সবচেয়ে কম রানে গুটিয়ে যাওয়ার বাজে রেকর্ডটি এখনো নিউজিল্যান্ডের। ১৯৫৫ সালে কিউইরা ২৬ রানে অলআউট হয়েছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ৭০ বছর আগের সেই ম্যাচটি হয়েছিল অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক রোস্টন চেজ ঘটনাকে হৃদয়বিদারক ও লজ্জার বলেছেন, ‘এটা সত্যিই হৃদয় বিদারক। আমরা ম্যাচ জেতার জায়গায় যাচ্ছি, কিন্তু শেষ ইনিংসে কোনো লড়াই না করেই হেরে যাচ্ছি। এমনটা তিনটি টেস্টেই হয়েছে। এটা খুবই লজ্জার।’

এই সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসগুলো ছিল: ১৯০, ১৪১, ২৫৩, ১৪৩, ১৪৩ এবং ২৭। শুধুমাত্র ব্র্যান্ডন কিং একটি ফিফটি করেন (৭৫ রান, গ্রেনাডায়)। তার গড় ছিল ২১.৫০, বাকি সবাই ব্যর্থ। বিপরীতে অস্ট্রেলিয়ার ট্র্যাভিস হেড, ক্যামেরন গ্রিন, খাজারা গড় ৩০ ছাড়িয়ে গেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট ক্রিকেটের এই দুর্দশা নিয়ে নতুন করে ভাবনার সময় এসেছে। চেজের ভাষায়, ‘আমরা শিক্ষা নিচ্ছি না, আর এটা মেনে নেয়া সত্যিই কঠিন।’

অস্ট্রেলিয়া ২২৫ (স্মিথ ৪৮, গ্রিন ৪৬, শামার ৪/৩৩, গ্রেভস ৩/৫৬) ও ১২১ (গ্রিন ৪২, আলজারি ৫/২৭, শামার ৪/৩৪) হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৪৩ (ক্যাম্পবেল ৩৬, বোল্যান্ড ৩/৩৪) ও ২৭ (স্টার্ক ৬/৯, বোল্যান্ড ৩/২)—১৭৬ রানে জয়।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.