সিলেটের পাথরকোয়ারি খুলে দেওয়াসহ পাঁচ দফা দাবিতে মঙ্গলবার থেকে আহত পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাখান করেছেন সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি লোকমান আহমদ। ধর্মঘট প্র্রত্যাখান করে বাস চলবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
রবিবার (৬ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টায় দক্ষিণ সুরমা বাস টার্মিনালে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির জরুরী সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান লোকমান আহমদ।
এরআগে রোববার দিনে প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে মঙ্গলবার থেকে সব ধরণের পরিবহন ধর্মঘট আহ্বানের কথা জানায় ‘সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন বাস-মিনিবাস, কোচ-মাইক্রেবাস, ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ডভ্যান, সিএনজি, ইমা-লেগুনা ও পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ’।
স্মারকরিপিতে ৫ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- সড়ক পরিবহণ আইন ২০১৮ এর ৩৬ ধারা প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার বাস-মিনিবাসের ক্ষেত্রে ২০ বছর এবং ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান ২৫ বছর, সিএনজি ও ইমা লেগুনা এর ক্ষেত্রে ১৫ বছর ইকোনোমিক লাইফ নির্ধারণ করার প্রজ্ঞপন বাতিল করতে হবে। সিলেটের সকল পাথর কোয়ারীর ইজারা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার ও সনাতন পদ্ধতিতে বালু মহাল এবং পাথর কোয়ারী খুলে দিতে হবে। বিআরটিএ কর্তৃক সকল গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদানে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র বাতিল ও গণ পরিবহন ও পণ্য পরিবহনের উপর আরোপিত বার্ধিত টেক্স প্রত্যাহার করতে হবে। সিলেটের সকল ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করন বন্ধ, বিদ্যুৎ মিটার ফেরত ও ভাংচুরকৃত মিলের ক্ষতি পূরণ এবং গাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া পাথর ও বালুর ক্ষতি পূরণ দিতে হবে। সড়কে বালু ও পাথরবাহী গাড়িসহ সকল ধরনের পণ্যবাহী গাড়ির চালকদের হয়রানী বন্ধ করতে হবে।
সম্প্রতি এই পাঁদ দফা দাবির সাথে একমত পোষণ করে তাদের আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী।
অপরদিকে, ধর্মঘট প্রত্যাখানের ঘোষণা দেওয়া জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি লোকমান আহমদ দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা।
ফলে, এই ধর্মঘট ঘোষণা ও প্র্রত্যাখানকে বিএনপি জামায়াত নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ বলেও দেখছেন অনেকে।
রোববার রাতে জামায়াত নেতা মাওলানা লোকমান আহমদ জানান, আগামী মঙ্গলবার থেকে শুরু হতে যাওয়া শ্রমিক কর্মবিরতি ও ধর্মঘটে তারা অংশ নেবেন না। বরং তাদের মালিকানাধীন যানবাহন সড়কে চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
লোকমান আহমদ দাবি করেন, চলমান কর্মবিরতি ও ধর্মঘট প্রকৃতপক্ষে মালিক ও শ্রমিকদের কল্যাণের উদ্দেশ্যে আহ্বান করা হয়নি। বরং এটিকে ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, যারা শ্রমিকদের ব্যবহার করে পাথর কোয়ারির আন্দোলন করছেন, তারা পরিকল্পিতভাবে শ্রমিকদের প্রশাসনের মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছেন। এটি সুস্পষ্টভাবে একটি দুরভিসন্ধিমূলক অপচেষ্টা।
এ সময় তিনি সাবেক সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আপনি পরিবহন সেক্টরে এসে বিভ্রান্তিমূলক সিদ্ধান্ত দিয়ে যেন অস্থিরতা সৃষ্টি না করেন। যদি আপনার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কোনো বিরোধ থাকে, তা হলে বিএনপি-জামায়াতসহ রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে বসে সমাধানে আসুন।”
মাওলানা লোকমান আরও অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দুদু এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ২৭ জুন রাত ১২টা থেকে ৩টা ১০ মিনিট পর্যন্ত সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বাসায় গোপন বৈঠক করেছেন। তিনি বলেন, এই গোপন বৈঠকে অংশ নিয়েছে ফ্যাসিস্টের দোসররা। তারা সকলে মিলে জুলাই আন্দোলনের চেতনা নস্যাৎ করতে চাইছে।”
তিনি কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “শাহজাহান খানের চেয়ারে বসে দুদু যদি সিলেটে এসে গোপন বৈঠক করে জুলাই চেতনা নস্যাৎ করার চেষ্টা করেন, তাহলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
সিলেট টুডে
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.